শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ডায়েট চার্ট ওজন কমানোর পদ্ধতি

ডায়েট চার্ট  ওজন কমানোর পদ্ধতি

অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ যদিও দৈহিক ওজন বৃদ্ধির কারণ। তবে স্বল্পসংখ্যক মানুষের ক্ষেত্রে জেনেটিক প্রভাব আছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রেও ওই মানুষটি জেনেটিক প্রভাবে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করে থাকে।

 

দেহের ওজন বাড়ে কেন?

দৈহিক ওজন বৃদ্ধির মূল কারণ শক্তি ও তার ব্যবহারের মধ্যে অসঙ্গতি। আমাদের গৃহীত প্রায় প্রতিটি খাবারেই শক্তি ক্যালোরি হিসেবে রয়েছে। পছন্দ, সামর্থ্য ও অভ্যাস অনুযায়ীই আমরা সেই খাবার গ্রহণ করি। আবার বয়স, লিঙ্গ, ওজন ও দৈনন্দিন কাজের ওপর শরীরের ক্যালোরির চাহিদা নির্ভর করে। প্রকৃতপক্ষে কেউ যদি তার প্রাত্যহিক চাহিদার চেয়ে বেশি ক্যালোরি প্রতিদিন বা প্রায়শই খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করে, তবে তার বাড়তি অংশ শরীরে মেদ হিসেবে জমতে থাকবে অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার খেলে শক্তি গ্রহণের তুলনায় যদি ক্যালোরি খরচ কম হয় তাহলে দেহের ওজন বাড়তে থাকবে।  আমাদের দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করার জন্য প্রতি মিনিটে নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালোরি ব্যবহার করে। আর আমরা আমাদের গৃহস্থালি কাজকর্ম থেকে শুরু করে রাস্তায় হাঁটাচলা, খেলাধুলা, ছোটাছুটি, কর্মক্ষেত্রের কাজকর্ম এবং কথা বলতেও ক্যালোরি ব্যবহার করে থাকি। এ ক্যালোরি গ্রহণ ও ক্যালোরি ব্যবহারের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে। প্রতিটি মানুষেরই তার সারা দিনের ক্যালোরি চাহিদার কাছাকাছি পরিমাণ ক্যালোরি খাদ্য ও পানীয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে। বাড়ন্ত ছেলেমেয়ে ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া সবার চাহিদা হিসেবে খাদ্য গ্রহণের অভ্যাসও জরুরি। কারও কারও আবার খাদ্য উপাদান পরিবর্তনের বিশেষ দরকার হয়। বেশি পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ যদিও দৈহিক ওজন বৃদ্ধির প্রধান কারণ। তবে খুব সামান্য সংখ্যক মানুষের ক্ষেত্রে জেনেটিক প্রভাব আছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রেও ওই মানুষটি জেনেটিক প্রভাবে বেশি খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। অতএব এরা শতভাগ অতিরিক্ত দৈহিক ওজনধারী বেশি করে খাদ্য গ্রহণে অবদান রেখেছে।

 

ওজনাধিক্য নিরূপণের মাপকাঠি

দৈহিক স্থূলতা নিরূপণের জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এর মধ্যে বিএমআই সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত হয়। ইদানীং কোমর নিতম্বের (Waist-Ratio) ওজনের অনুপাতও ক্রমশ অপ্রিয় হয়ে উঠছে।

 

বিএমআই বা বডি মাপ ইনডেক্স

এটি ওজনাধিক্য বা স্থূলতা পরিমাপের সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত পদ্ধতি। এর কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির কিলোগ্রামে ওজন নিয়ে শরীরের উচ্চতার (মিটারে) বর্গ দিয়ে ভাগ করতে হবে। বয়স ও একই লিঙ্গের ভিত্তিতে বিএমআই এর মানের তারতম্য ঘটে না। বিএমআই শরীরের ওজন উচ্চতা ও স্বাস্থ্যের মধ্যবর্তী সম্পর্ককে বোঝায়। কিছু শিশু, গর্ভবতী বয়স্ক ব্যক্তি ও অত্যধিক পেশিবহুল মানুষ যেমন খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়, কারও শরীরের ওজন ঠিক কতটা হওয়া উচিত তা জানতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

ওজন কমাবেন কীভাবে?

♦ ওজন কমাতে কখনই খুব বেশি তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। প্রতিদিন বা সপ্তাহে অন্তত একটি পরিবর্তন আনুন। যেমন- আপনার ফল খাওয়ার অভ্যাস নেই। প্রতিদিন এক টুকরা করে ফল খেতে শুরু করুন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণে খাবার চেষ্টা করুন।

♦ যথাসম্ভব বর্জন করুন— ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, ভাজা খাবার, তৈলাক্ত খাবার নির্ধারিত খাবারের মাঝে মাঝে এট সেটা খাবার।

♦ নিয়মিত খাদ্য তালিকায় কম ক্যালোরির খাদ্য রাখুন। যেমন-শাকসবজি, কাঁচা টক ফল ইত্যাদি। যারা ইতিমধ্যে স্থূলকায় হয়ে গেছেন তাদের বেলায় ভাত, রুটি, মাছ, মাংস ইত্যাদি শাকসবজি দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। আগে সারা দিনে যে পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করতেন, এখনো সে পরিমাণেই করতে পারবেন যদি খাদ্য তালিকায় কম ক্যালোরির খাবার রাখেন। যেমন- আপনি দুপুরে মোট ৮০০ গ্রাম খাদ্য গ্রহণ করেন। এখন এর ৫০০ গ্রাম শাকসবজি রাখুন। আর ৩০০ গ্রাম ভাত/রুটি, মাছ/মাংস রাখুন। সকালে ডিম খাওয়া ত্যাগ করুন শুকনো রুটি ও সবজি খাবেন। রাতে ভাত/রুটি কম খাবেন।

♦ একটি স্মার্ট ডায়েট চার্ট তৈরি করে নিতে পারেন। সকালে- পানি, ডিমের সাদার অমলেট, সবজি, ১-২টা টোস্ট বা সবজি। দুপুরে- সালাদ, সবজি, ডাল, রুটি বা ভাত। বিকালে- ঝাল মুড়ি মাঝারি বাটি এবং রাতে সালাদ, স্যুপ, সবজি, মাছের কারি, ভাত বা রুটি। সারা দিনে অবশ্যই একটি ফল খাবেন।

 

♦ মিষ্টি জাতীয় খাদ্য যতটা সম্ভব কম খাবেন।

♦ তাজা ফল খাবেন কার্স্টড বা জুস নয়।

♦ প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করার চেষ্টা করুন। একটানা ৩০ মিনিট সম্ভব না হলে ২ বা ৩ বারে তা করুন। বিকল্প হিসেবে ২০-৩০ মিনিট সুইমিং, সাইক্লিং, ব্যাডমিন্টন বা টেনিস খেলার কথা চিন্তা করতে পারেন।

♦ অফিসে যাওয়ার সময় লিফট ব্যবহার না করে হেঁটে ওঠার অভ্যাস করুন।

লেখক—

ডা. শাহজাদা সেলিম

এন্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগ,

বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর