শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

শীতে ঠোঁট থাকুক আহ্লাদে

রচি জামান

শীতে ঠোঁট থাকুক আহ্লাদে

♦ মডেল: প্রিয়তা, ♦ ছবি: ফারহান আহমেদ

অসহ্য গরমে অপেক্ষা বাড়ে হিম শীতের। যন্ত্রণাদায়ক গরমকে পাশ কাটিয়ে এক সময় শীত এসে ধরাও দেয়। কিন্তু শুষ্ক এ আবহাওয়ায় ঠোঁট নিয়ে পড়তে হয় বিপাকে। হঠাৎ হাসতে গিয়ে চিড় পড়ে ঠোঁটের কোণে। তখনই উহ্ করে ওঠেন মনের অজান্তে। কিন্তু এমন অবস্থা কারও কাছে মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। চাইলে এমন অবস্থা থেকে যে কেউ নিজের ঠোঁট জোড়াকে রাখতে পারেন আদরে-আহ্লাদে। 

এসময় বেশি কষ্টের ব্যাপার হলো রুক্ষতা আর শুষ্কতা। যার প্রভাব প্রথমেই এসে পড়ে আপনার ঠোঁটের ওপর। মাঝে মাঝে তো শরীরে শীতের অনুভূতি আসার আগেই শুষ্ক ঠোঁট জানান দেয় শীত এসে গেছে। শীতের হালকা আমেজ এলেই শুরু হয় টানটান ভাব। ঠিকমতো যত্ন না

নিলে ঠোঁট ফেটে যাওয়া ও চামড়া ওঠার মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। কারও কারও ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়ে আসে। আর এই পরিস্থিতি শীতের ভালো লাগার অনুভূতিকে পুরোটাই ধূলিসাৎ করে দিতে পারে। কিন্তু আধুনিক এই যুগে শীতের মোলায়েম আমেজ উপভোগ করতে ছোট এই প্রতিবন্ধকতাকে আপনিইবা কেন প্রশ্রয় দেবেন? তাই শীতের আগমনী বার্তা যখন এসেই গেছে তাই যত্ন নিতে হবে এখন থেকেই।

শীতে কমবেশি সবারই ঠোঁট ফেটে যেতে পারে। সঙ্গে ঠোঁট কালো হওয়া এবং প্রাণহীন ভাব থাকতে পারে। শীতে ঠোঁটের যত্ন নিয়ে ওমেন্স ওয়ার্ল্ডের পরিচালক ও বিউটি এক্সপার্ট ফারনাজ আলম বলেন, ‘শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ঠোঁটের। ঠোঁট দীর্ঘ সময় শুষ্ক থাকলে অনেকেই বারবার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজান। এ কারণেও ঠোঁট নাজুক হয়ে যায় বেশি।’

ঠোঁটের এই নাজুক অবস্থার জন্য শীতের সময়টায় অনেকের চেহারা মলিন লাগে। অনেকে বুঝতেই পারেন না কীভাবে যত্ন বজায় রাখবেন। আবার কেউ কেউ সময়ের অভাবে ঠোঁটের প্রয়োজনীয় যত্ন নেন না। আর তখনই ঠোঁটের চামড়া উঠতে থাকে। অনেকেই আবার শীতের দিনেও মাত্রাতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করে ঠোঁট কালচে বানিয়ে ফেলেন, যা একেবারেই অনুচিত। এ প্রসঙ্গে ফারনাজ আলমের পরামর্শ, ‘শীতে যাদের ঠোঁট ফাটে তারা নিয়মিত লিপবাম ব্যবহার করুন। এছাড়া ঘরোয়া উপয়ে ঠোঁট ময়েশ্চার করতে নারিকেল তেলও ব্যবহার করতে পারেন। এর বাইরেও সপ্তাহে অন্তত দুদিন ঠোঁটে মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন, সঙ্গে ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত খাবারও খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে।’

ঠোঁটের উপযুক্ত যত্ন বজায় রাখতে ঘরোয়া কিছু কার্যকর পদক্ষেপই যথেষ্ট। তাই দেরি না করে এখন থেকেই শুরু করতে পারেন আপনার যত্নআত্তি। যেমন

— ঠোঁটের ফাটল সারিয়ে তুলতে এবং নমনীয়তা ধরে রাখতে কমলার রস খুব উপকারী। হাতে মাত্র দশ মিনিট সময় থাকলে ঠোঁটে কমলার রস মেখে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

— ঠোঁটের যত্নে গোলাপের পাপড়ির সঙ্গে দুধের সর মিশিয়ে ঠোঁটে মাখাতে পারেন। ঠোঁটে দাগ থাকলে তা তো কমবেই, ঠোঁট নরমও থাকবে। — ঠোঁট নরম রাখতে কোকো বাটারযুক্ত লিপবাম ব্যবহার খুবই উপকারে আসবে। মনে রাখতে হবে ত্বকের মতো ঠোঁটের সৌন্দর্য রক্ষায় নিয়মিত চর্চা দরকার হয়।

— প্রতিদিন যদি ক্লিনজিং মিল্ক দিয়ে ঠোঁট পরিষ্কার করা যায় তবে সহজেই মরা চামড়া দূর করা সম্ভব হবে। মাঝে মধ্যে ব্রাশ দিয়ে ঠোঁট হালকা ব্রাশও করে নিতে পারেন। এতে মরা কোষ ঝরে যাবে।

— সুন্দর গোলাপি একজোড়া ঠোঁট কার না পছন্দ। এই শীতে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি আপনার ঠোঁটের সেই সৌন্দর্য কেড়ে নিতে পারে। এই অবস্থায় ঠোঁট জোড়াকে রক্ষা করতে রোদে বের হওয়ার আগে লিপবাম বা নারিকেল তেল লাগিয়ে এর ওপর লিপস্টিক লাগিয়ে নিন। দেখবেন ঠোঁটের পোড়াভাব দূর হয়ে যাবে।

— আদুরে ঠোঁটকে আহ্লাদে রাখতে আরও উপায় অবলম্বন করতে পারেন। রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই ক্রিম বা ভেজা তুলার সাহায্যে লিপস্টিক তুলে ভ্যাসলিন লাগিয়ে নিন।

— মনে রাখা জরুরি, বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানোর অভ্যাস খুবই খারাপ। এই অভ্যাস ঠোঁটে ফাটল ধরতে সাহায্য করে। তাই অভ্যাসটি থাকলেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ অভ্যাস ছাড়তে হবে।

— ঠোঁটে শুধু বাহ্যিক যত্নআত্তি যথেষ্ট নয়। খাবার-দাবারের প্রভাবেও আপনার ঠোঁটের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব। সে জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার খেতে হবে। আমলা, বরই, লেবু ইত্যাদি টক জাতীয় ফল খেতে পারেন নিয়মিত।

— ভিটামিন ‘সি’-এর অভাবে ঠোঁটের কোণা ফেটে যায়। এ জন্য ভিটামিন ‘সি’যুক্ত খাবারের পাশাপাশি মাঝে মধ্যে ট্যাবলেটও খেতে পারেন।

— খুব প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

— ঠোঁটের শুষ্কতা কমাতে সব সময় সঙ্গে  ভ্যাসলিন বা চ্যাপস্টিক রাখতে পারেন। প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ার অভ্যাসও আপনাকে রক্ষা করবে।

— যাদের ঠোঁট অতিরিক্ত শুষ্ক তারা প্রতিদিন মধু, গোলাপজল ও কমলালেবুর রস মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে এলে ধুয়ে ফেলুন।

এভাবে যত্ন অব্যাহত থাকলে আপনার ঠোঁট জোড়ার আহ্লাদের কমতি পড়বে না মোটেও।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর