শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রচ্ছদ

বছরজুড়ে সুতি শাড়ি

বছরজুড়ে সুতি শাড়ি

♦ মডেল : আজমেরি হক বাঁধন ♦ পোশাক : রঙ বাংলাদেশ ♦ ছবি : নেওয়াজ রাহুল

শাড়িতে সুন্দর বাঙালি নারী। বিশ্বের অনেক দেশে এ পোশাক অদ্ভুতুড়ে ঠেকলেও উপমহাদেশে এর জনপ্রিয়তা এখনো অনন্য। আর বাঙালি নারীর কাছে সুতি শাড়ির কদর বছরজুড়েই। জর্জেট আর বিদেশি নানা কাপড়ের ভিড়ে দেশীয় সুতি শাড়ি সবসময়ই আলাদা আকর্ষণের কারণ। এমনকি দেশীয় সুতি শাড়ি আপনার সাজেও এনে দিতে পারে নতুনত্ব। যারা শাড়ি পরতে ভীষণ পছন্দ করেন তারা ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে বারো মাসই বেছে নিতে পারেন সুতি শাড়ি। আরও জানাচ্ছেন— নূরজাহান জেবিন

 

শাড়িতে সুন্দর বাঙালি নারী। বিশ্বের অনেক দেশে এই পোশাক অদ্ভুতুড়ে ঠেকলেও এই উপমহাদেশে এর জনপ্রিয়তা এখনো অনন্য। আর বাঙালি নারীর কাছে সুতি শাড়ির কদর বছরজুড়েই। জর্জেট আর বিদেশি নানা কাপড়ের ভিড়ে দেশি সুতি শাড়ি সব সময়ই আলাদা আকর্ষণের কারণ। এমনকি দেশি সুতি শাড়ি আপনার সাজেও এনে দিতে পারে নতুনত্ব। যারা শাড়ি পরতে খুব বেশি পছন্দ করেন তারা ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে বারো মাসই বেছে নিতে পারেন সুতি শাড়ি।

 

সময় যাপনের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন পাল্টে যাচ্ছে মানুষের পোশাক আর পছন্দের ব্যাকরণ। এরপরও এমন অনেক কিছুই আছে যা মানুষের চিরকালীন পছন্দের বিষয় হয়ে রয়ে গেছে। আমাদের বাংলাদেশিদের শাড়ির অবস্থান এমনই।

বাঙালি নারীর সাজের পূর্ণতা শাড়িতে হলেও ব্যস্ততা ও কাজের কারণে অনেকেই শাড়ি এড়িয়ে চলেন। এরপরও তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সী নারীই নিজেকে বৈচিত্র্যময় শাড়িতে রাঙাতে পছন্দ করেন। এমন অনেক নারীই আছেন যারা কর্মস্থলে শাড়ি পরতে পছন্দ করেন। আর সামাজিক অনুষ্ঠান কিংবা অন্য যে কোনো ধরনের গেট টুগেদারেও তাদের প্রথম পছন্দ শাড়ি।

 

শাড়ির বৈচিত্র্যের কথা এলেই চলে আসে সুতি শাড়ির প্রসঙ্গ। বাংলাদেশিদের অধিকাংশই সুতি শাড়ি পরতে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এরপরও অনেকেই সুতি শাড়ি পরা ও রং বাছাইয়ে দ্বিধায় ভোগেন। এক্ষেত্রে সবার আগে জানতে হবে, সুতি শাড়ি নানা রকমের হয়। যেমন- তাঁত, কোটা, চেক এবং জামদানি। এর বাইরে শাড়ির আঁচল এবং পাড়ের ধরনেও ভিন্নতা থাকে। আবার সুতি শাড়িতে ব্লকপ্রিন্ট, বাটিক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, ভেজিটেবল ডাই, এম্ব্রয়ডারি করে আনা হয় রকমফের বৈচিত্র্য। তাই শাড়ি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সবার আগে নিজের পছন্দ আর স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে।

 

যুগ যুগ ধরে বাঙালির উৎসব থেকে শুরু করে নিত্যদিনের ব্যবহারে সুতির শাড়ি ব্যবহূত হয়ে আসছে। অনেকের ধারণা সুতি শাড়ি বুঝি সাবেকি ঘরানার। সুতি শাড়ি ঐতিহ্যবাহী কিংবা সাবেকি ঘরানার ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে এ শাড়ি দারুণ স্টাইলিশও বটে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুতি শাড়ির আঁচল এবং পাড়ে নানা বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে। এসব ক্ষেত্রে দেশি ফ্যাশন হাউসগুলো অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। কেবল পাড় কিংবা আঁচলই নয়, কুঁচিতেও থাকছে আলাদা ডিজাইন। শাড়ির নকশা ও রঙেও রয়েছে ভিন্নতার ছোঁয়া। দেশি সুতি শাড়িতে এনেছেন কাঁথা স্টিচ, ফুলেল প্রিন্ট, জামদানি প্রিন্ট, কুঁচি প্রিন্ট, অ্যাপ্লিক, গুজরাটি কাজ, জ্যামিতিক নকশাসহ নানারকম ডিজাইন। শুধু তাই নয়, মোটা সুতি কাপড়ের পুরনো ট্রেন্ড ভেঙে কাপড়েও এনেছেন পরিবর্তন। এখন কোটা, নেট সুতি ও ফাইন সুতির অনেকরকম শাড়ি পাওয়া যায়। কিছু শাড়ি। এসব শাড়ি দেখতে অবিকল সুতির মতো। এগুলো দারুণ আরামদায়কও বটে। এ ধরনের শাড়ির মধ্যে কিছু কিছু হাফ সিল্কের শাড়িরও দেখা মেলে।

 

পোশাক হিসেবে শাড়িকে এত বৈচিত্র্যপূর্ণ মনে করার অন্যতম কারণ হচ্ছে এটি এমন একটি পোশাক যেটি অনেক কায়দায় অনেক ঢঙে পরা যায়। পরার স্টাইলের ভিন্নতা গোটা সাজেই পরিবর্তন এনে দিতে পারে। অন্যান্য গর্জিয়াস শাড়ি সামলানো এবং নকশা কিংবা ওজনের কারণে সবরকমভাবে পরা যায় না। এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে সুতির শাড়ি। সাদামাটা আটপৌরে কিংবা জমকালো দুই ধরনের লুকেই অনন্য সুতির শাড়ি। আর শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজের ভিন্ন ভিন্ন কাটও পাল্টে দিতে পারে আপনার আউটলুক। শাড়ির রঙ, পরার ধরন ও অন্যান্য বিষয় মাথায় রেখে থ্রি কোয়ার্টার হাতা, স্লিভলেস কিংবা ভিন্ন কোনো নকশার ব্লাউজ বেছে নিতে পারেন।

 

বাজার ঘুরে দেখা গেছে মসলিন, জামদানি ও হাফ সিল্কের শাড়ি নিয়ে দারুণ দারুণ কাজ হচ্ছে। অবশ্যই এগুলোতে থাকছে সুতির মিশ্রণ। অনেক ক্ষেত্রে জমিন সিল্কের হলে আঁচল তৈরে হয়েছে সুতিতে। মূলত মোটিফে ভিন্নতা আনার জন্যই এমনটা করা হয়েছে। লোকজ মোটিফ আর রঙের বৈচিত্র্য এই দুয়ের সমন্বয় সবচেয়ে বেশি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সুতি শাড়িতেই। এর বাইরে ব্লকপ্রিন্ট, বাটিক, হাতের কাজ তো রয়েছেই। কোনো কোনো সুতির শাড়ির বুননেই থাকছে পাড়। আবার আলাদা কাপড়ে নকশা করে পাড় বানিয়ে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে পুরো শাড়িতে। এমন পরিবর্তন আর বৈচিত্র্যে যুগ যুগ ধরে সুতি শাড়ি তার রং-রূপ পাল্টালেও এর আবেদন কমেনি এতটুকুও।

 

 

গয়নায় বৈচিত্র্য

শুধু গয়নার ব্যবহারের কারণেই আটপৌরে শাড়ি পরেও আপনি হয়ে উঠতে পারেন অনন্য। সুতি শাড়ির সঙ্গে ধাতব, মাটি, কাঠ, পুঁতি, কাপড় কিংবা অপ্রচলিত যে কোনো ধরনের গয়নাই মানিয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে শাড়ির রঙ, ধরন আর পরার ধরনটা মাথায় রাখতে হবে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শাড়ির রঙেরও পছন্দ পাল্টায়। যদিও এখন অনেকেই রঙের পার্থক্য করতে নারাজ। সে কারণেই সম্ভবত কালারফুল বর্ণিল সব ডিজাইনের শাড়ি এখন সব বয়সীর পছন্দের শীর্ষে। একই শাড়ির সঙ্গে শুধু গয়না পরিবর্তন করলেই সাজে অনেকটা পার্থক্য চলে আসে। এভাবে একই শাড়ি বেশ কয়েকবার পরেও নতুন লুক আনা যায়।

 

কোথায় পাবেন

বাজারে বিভিন্ন দামের ও মানের সুতি শাড়ি রয়েছে। দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে রঙ বাংলাদেশ বিবিয়ানা, সাদা-কালো, দেশাল, দেশী দশ, কে-ক্রাফট, অঞ্জনস, নগরদোলা, যাত্রা, অরণ্য, বাংলার মেলা ইত্যাদিতে বিভিন্ন ধরনের সুতি শাড়ি পাওয়া যাবে। আজিজ সুপার মার্কেটের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে পাওয়া যাবে সুতি শাড়ির সম্ভার। দামের ক্ষেত্রেও সুতি শাড়ি গ্রাহকদের হাতের নাগালে। ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় পেয়ে যাবেন বিভিন্ন মানের সুতি শাড়ি। তাঁতের ডিজাইনের শাড়িগুলোর দাম পড়বে সাড়ে ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। ব্লক করা শাড়ি ও অ্যাপ্লিক, এম্ব্রয়ডারি করা শাড়ির দাম পড়বে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর