শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
সুস্বাস্থ্য

মুখ গহ্বরের ক্যান্সার আমাদের করণীয়

মুখ গহ্বরের ক্যান্সার আমাদের করণীয়

প্রতি বছর দুই লাখ নতুন ক্যান্সারের রোগী শনাক্ত হয় যার মধ্যে বিশ থেকে ত্রিশ ভাগই ঘাড় ও মাথার ক্যান্সার এবং এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে মুখের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার।

 

বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি হলেও এখনো একটি দুরারোগ্য ব্যাধির নাম হচ্ছে ক্যান্সার যা এখনো অনেক মানুষের প্রাণ অকালে ঝরে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ। বাংলাদেশে প্রতি বছর দুই লাখ নতুন ক্যান্সারের রোগী শনাক্ত হয় যার মধ্যে বিশ থেকে ত্রিশ ভাগই ঘাড় ও মাথার ক্যান্সার এবং এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে মুখের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার। আশঙ্কাজনক হলেও সত্যি যে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের মুখের ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে পান, সুপারি, বিভিন্ন তামাক মিশ্রিত জর্দা, খৈনি ও বিভিন্ন রকমের পান মসলা জাতীয় খাবার। আমাদের দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী বিশেষ করে বাংলাদেশর মহিলাদের একটি অংশ পান, সুপারি ও জর্দাতে আসক্ত আর তাই আমাদের দেশের মহিলাদের মুখের ক্যান্সারের প্রবণতাও বেশি। তাই বিভিন্ন তামাক জাতীয় পণ্য যেমন বিড়ি বা সিগারেট বর্জনের পাশাপাশি আমাদের এসব পান-সুপারি-জর্দার মতো খাবার বর্জন করতে হবে। মুখের ক্যান্সারের বেশ কিছু পূর্ব লক্ষণের মধ্যে হচ্ছে মুখের ভিতরের চারপাশে কোনো স্থানে সাদা হয়ে সামান্য ক্ষত তৈরি হওয়া যা মেডিকেলের ভাষাতে লিউকপ্লাকিয়া বলে। এ ধরনের সাদা ভাব মুখের ভিতরে, জিহ্বার উপরে ও নিচে যে কোনো স্থানে হতে পারে। এ ছাড়া মুখের ভিতরে কোনো ক্ষত যদি চিকিৎসাতে ভালো না হয় তাহলে অতিসত্বর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এ ধরনের ক্ষত থেকে অবিলম্বে টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে এর মধ্যে ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ আছে কিনা যা আমরা টিস্যু বাইওপসি বলে থাকি। মনে রাখতে হবে মুখের ভিতরের ক্যান্সার খুব তাড়াতাড়ি শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে তাই রোগ নির্ণয়ের সঙ্গে সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব নাক, কান, গলা ও হেড-নেক সার্জারি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে মুখের ভিতরের ক্যান্সারের থেকে পুরোপুরি আরোগ্য লাভ সম্ভব। মুখের ক্যান্সারের প্রথম এবং প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে সার্জারি এবং ক্যান্সারের বিভিন্ন স্টেজের ওপর বিবেচনা করে পরবর্তীতে রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। এ ধরনের সার্জারি বেশ জটিল ও সময় সাপেক্ষ এবং এই সার্জারির একটি প্রধান অংশ হলো reconstruction বা টিউমার টিস্যু ফেলে দেওয়ার পরে শরীরের অন্য অংশ থেকে টিস্যু এনে প্রতিস্থাপন করা। যদিও জনসংখ্যার তুলনায় বাংলাদেশে হেড-নেক সার্জনের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল তারপরও এ ধরনের জটিল অপারেশন কয়েকটি হাসপাতালে নিয়মিত হচ্ছে। এসব রোগের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নেওয়া উত্তম। অন্যথায় একটা পর্যায়ে জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই প্রতিকার নয়, প্রতিরোধই সর্বদাই উত্তম। আর সচেতনতাই হতে পারে প্রাথমিক প্রতিরোধ।

 

লেখক—

ডা. সৈয়দ ফারহান আলী রাজীব

সহযোগী অধ্যাপক, নাক-কান-গলা বিভাগ,

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর