শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রচ্ছদ

পোশাকে বিজয়

পোশাকে বিজয়

♦ মডেল : শাকিল রাজা ও মিমি আজমিন ♦ পোশাক : রঙ বাংলাদেশ ♦ ছবি : নেওয়াজ রাহুল ♦ সাজ : বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ

বাঙালির লাল-সবুজের সঙ্গে সখ্য রক্তে মিশে আছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আর চেতনাকে বুকে ধারণ করে তাই তো বিজয় উৎসবকে রাঙিয়ে তুলতে চায় ভিন্ন আমেজে। জাতীয় এ উৎসবকে ঘিরে ফ্যাশনসচেতন তরুণ-তরুণীদের ট্রেন্ড ফ্যাশনেও আনে নানা পরিবর্তন। জাতীয় পতাকার প্রিয় লাল-সবুজ রঙের আদলে তৈরি পোশাকাদিতে সেজে ওঠে দিনটি। আর তাই তো ট্রাডিশনাল পোশাকেই সাজানো হয়েছে বিজয় দিবসের সংগ্রহ। জানাচ্ছেন— ফেরদৌস আরা

 

লাল-সবুজের মাস এই ডিসেম্বর। সবুজের মধ্যে লাল, এ যেন বিজয়ের প্রতীক। অন্য আর এগারোটা মাসের চেয়ে এই মাসটা একটু বেশিই রঙিন। কেননা এই মাসেই বাঙালির প্রাণের বিজয় উদ্ভাসিত হয়েছিল পৃথিবীর বুকে। পতাকার লাল-সবুজে পরিচিতি পেয়েছিল বিশ্বদরবারে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শুধু মনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে বাঙালি তরুণ-তরুণীরা সেজে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। আর সেই বিজয়ের চেতনা এখন শুধু প্রয়োজনীয় পোশাক-পরিচ্ছদ কেনাকাটার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ফ্যাশনসচেতন হিসেবে নিজেদের মূল্যবোধকে শাণিয়ে তুলেছে বহুগুণে। উৎসব-পার্বণ ছাড়াও বিজয় দিবসে ফ্যাশনগুলো আকর্ষণ করে সব বয়সী ক্রেতাকে। নারী-পুরুষ ছাড়া শিশু-কিশোরও মেতে থাকে বিজয়ের আনন্দে। দিবসটিকে উদযাপন করতে গিয়ে চারদিকে কেবল লাল-সবুজের অপূর্ব সমন্বয়, যা বরাবরের মতই চোখে পড়ার মতো।

 

আসলে বিজয় দিবসের রং বলতে লাল-সবুজকেই বোঝায়। পোশাক অন্য রঙের হলেও লাল-সবুজের ছোঁয়া তাতে থাকতেই হবে। পোশাকে না হোক, ওড়না, ব্যান্ড, ব্যাগ অথবা অলঙ্কারে থাকা চাই লাল-সবুজের ছোঁয়া। আর এই বিজয় উৎসব বর্তমানে জীবনধারার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। জাতীয় এ উৎসবকে ঘিরে ফ্যাশনসচেতন তরুণ-তরুণীদের ট্রেন্ড ফ্যাশনেও আসে পরিবর্তন। জাতীয় পতাকার প্রিয় লাল-সবুজ রঙের আদলে তৈরি পোশাকাদিতে সেজে ওঠে দিনটি।

 

বিজয়ের দিনটিতে বাঙালির চলনে বলনে, পোশাক-আশাকে দেশপ্রেমের প্রকাশ চোখে পড়ার মতো। ভাষা আন্দোলনের সময় পোশাক যেন হয়ে ওঠে ভাষা শহীদদের প্রতি নীরব সম্মান জানানোর মাধ্যম। আগুনঝরা মার্চে লাল-সবুজ-হলুদ, বৈশাখে সাদা-লাল আবার ডিসেম্বরে লাল-সবুজ যেন এরই ধারাবাহিকতা চলে আসে। ফাল্গুনে বাসন্তী-লাল তো বসন্তের প্রকৃতিরই রূপ। এ রকম ঐতিহ্য আর ইতিহাসের কথা মনে রেখে পোশাক পরেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার শুধু পোশাক কিংবা রূপসজ্জায় নয়, অন্য অনেক ক্ষেত্রেই রয়েছেন আরেকটু এগিয়ে।

 

বিজয়ের মাসে পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোয় থাকে বিশেষ আয়োজন। যদিও শীত বলে ডিজাইনারদের নজর থাকে গরম কাপড়ের ওপর। কিন্তু তাই বলে তো বিজয় বাদ দিয়ে নয়। এ বছরেও সেটার ব্যতিক্রম হয়নি। এমনটাই দেখা মিলছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস আর শপিংমলগুলোয়। লাল-সবুজের আঁচড়ে সাজানো পোশাকগুলো যেন এক-একটি বিজয়োৎসবের পতাকা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পোশাকে তুলে ধরার নানা আয়োজন করেছে দেশি ফ্যাশন হাউসগুলো।

 

বিজয় দিবসের আয়োজন উপলক্ষে রঙ বাংলাদেশ-এর ফ্যাশন ডিজাইনার ও কর্ণধার সৌমিক দাশ জানান, ‘ট্রাডিশনাল পোশাকেই সাজানো হয়েছে বিজয় দিবসের সংগ্রহ। বিশেষত স্ক্রিনপ্রিন্ট করা শাড়ি আর পাঞ্জাবি এ কালেকশনের মূল আকর্ষণ। সুতি ও হাফসিল্ক শাড়িতে ১৯৭১ সালের বিজয়ের ছবি দিয়ে স্ক্রিনপ্রিন্ট করা হয়েছে এবং আঁচলে মূল ছবিটাকে ফ্রেমে বেঁধে তুলে ধরা হয়েছে।’

 

একই থিম ব্যবহার করে ফ্যাশন হাউসগুলো সাজিয়েছে বিজয়োৎসবের পসরা। যমুনা ফিউচার পার্ক ও বসুন্ধরা সিটির বিভিন্ন শো-রুম ঘুরে দেখা গেল বিজয়ের আনন্দের রঙে সাজানো সিঙ্গেল কামিজ। সিঙ্গেল কামিজে সবুজের সেড এবং লাল দিয়ে কাজ করা হয়েছে। প্যাটার্নে ভিন্ন কাটিং ব্যবহার করা হয়েছে। থ্রি-পিসে লাল ওড়নাকে পতাকার আদলে তৈরি করা হয়েছে। ড্রেস এবং পায়জামায় সবুজের সেডে কাজ করা হয়েছে। চিরায়িত শাড়ির ফ্যাশনেও লেগেছে বিজয়ের হাওয়া। তাই দিনটিতে নারীরা লাল সবুজ শাড়ি পরে থাকেন ফুলস্লিভ বা হাফস্লিভ ব্লাউজ। যেহেতু শীত, তাই একরঙা শাড়ির সঙ্গে অনেকেই বেছে নেন লাল-সবুজ একটি শাল। তবে লাল-সবুজ শাড়ি পরতে না চাইলেও একরঙা শাড়ির সঙ্গে লাল-সবুজের সংমিশ্রণে ব্লাউজ পরুন।

 

এবারের বিজয় উৎসবে প্রিন্টেড ডিজাইনের চাহিদাই বেশি। বিজয়ের লাল রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পরে নেওয়া যায় ফ্লাওয়ার প্রিন্টেড লং কামিজ বা ফতুয়া। সঙ্গে গাঢ় সবুজ রঙের লেগিন্স বা চোষ সালোয়ার, আর শীতের রঙিন চাদর। আর শাড়ি করা হয়েছে ট্রাডিশনাল আদলে। উৎসবের আমেজে পূর্ণতা দিতে লাল-সবুজ পোশাকের পাশাপাশি কাচের চুড়ি কিংবা বড় লাল টিপ পরতে পারেন। আর শাড়ি পরতে নারাজ রমণীরা স্বচ্ছন্দে বেছে নিতে পারেন লম্বা কুর্তা। এক্ষেত্রেও উঁচু গলা ও লম্বা হাতা মানানসই হবে। লাল-সবুজের বাইরে যেতে চাইলে রাখুন ওড়না, স্কার্ফ, শাল।

 

ছেলেদের বিজয়ের ফ্যাশনে প্রতি বছরই থাকে বৈচিত্র্য। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। টি-শার্ট কিংবা ফতুয়ার ফ্যাশন সেকেলে হলেও ডিজাইন ও প্যাটার্নে থাকছে নতুনত্ব। যারা পাঞ্জাবি পছন্দ করেন তারা খাদি কাপড়ের পাঞ্জাবি বেছে নিতে পারেন। খাদির বাইরেও সিল্কের পাঞ্জাবিও এবারের ফ্যাশনে এনেছে আধুনিকতা। শীত মৌসুম বলে পাঞ্জাবির ফেব্রিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বেশি। নতুন ধারার ফ্যাশনে মুজিব কোটও সবার পছন্দের। বিজয়ের ফ্যাশনে বেছে নিতে পারেন লাল-সবুজের ফ্লোরাল ডিজাইনের কটি। আর যারা লাল-সবুজের বাইরে নিজেকে সাজাতে চান তারা সাধারণ রঙের পোশাকে ব্যবহার করুন লাল-সবুজ শাল। পায়জামা কিংবা প্যান্টের সঙ্গে মানিয়ে যাবে সহজেই। পায়ে পরে নিন চটি কিংবা লোফার।

 

বিজয় দিবসের আয়োজন শুধু বড়দের জন্যই নয়, ছোটদের জন্য ফ্যাশন হাউসগুলো তৈরি করেছে বিজয়োৎসবের পোশাক। লাল, সবুজ আর টিয়া রঙে তৈরি করা হয়েছে ছোট মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, টপস ও ফতুয়া। আর ছোট ছেলেদের পাঞ্জাবি আর টি-শার্টও সাজানো হয়েছে বিজয়ের রঙে। তবে বাচ্চাদের পাঞ্জাবির কাটিংয়ে আনা হয়েছে নানা পরিবর্তন। আজ থেকে কিছু বছর আগে (এক দশক) তাকালেও দেখবেন বিজয় দিবস নিয়ে এত আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। এখন মানুষ শৌখিন। তাই তো পছন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্যাশন হাউসগুলোও রুচিশীল ও উৎসবনির্ভর পোশাক তৈরি করেছে। ভিন্ন ফ্যাশনে মজতে অনেকেই নিজের সৃজনশীলতায় রাঙিয়ে তৈরি করে নিচ্ছেন একদম আলাদা একটি বিজয় দিবস স্টাইল।

 

মূলত সাদা, লাল ও সবুজে ফুটেছে বিজয়ের নকশা। সবুজ আর লালের নানা শেডও এক্ষেত্রে পরিপূরক হয়েছে। তাই তো শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি কিংবা উপহার সামগ্রীগুলো মুক্তিযুদ্ধ ছাপিয়ে তৈরি করা হয়েছে। অনেকে আবার লাল-সবুজের পাশাপাশি সাদা, কালো, হলুদ, নীল, কমলা ইত্যাদি রঙের সংমিশ্রণেও পোশাকে নিয়ে আসছেন বিজয় উৎসবের আমেজ।

 

মোটিফের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে প্রাচুর্য। বিজয়ের পোশাকে উঠে আসছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, কবিতা, স্লোগান, মিছিল, স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি, গৌরবোজ্জ্বল বিভিন্ন মুহূর্ত, দেশাত্মবোধক গানের লাইন ও বর্ণমালা। এ ছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, ইতিহাস পর্যালোচনা, জাতীয় বীরদের পরিচয়সংবলিত পোশাক বা শিল্পীর নকশা করা শাড়ি বিজয় দিবসের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য তুলে ধরে। বেছে নিতে পারেন এগুলোও।

 

শুধুই কি পোশাক! তা তো নয়, এর বাইরেও অনেক কিছুই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বহন করে। এমন সব শো-পিস উপহার দিতে পারেন আপনার প্রিয়জনকে। যেগুলো তৈরি করা হয়েছে দেশাত্মবোধক গানের লাইন বা বর্ণমালা দিয়ে। মগ, লাল-সবুজ চাবির রিং, রিস্টব্যান্ড, এমনকি মুক্তিযুদ্ধের নানা পেইন্টিং আর প্রতিচ্ছবি হতে পারে এবারের বিজয় দিবসে প্রিয়জনের উপহার।

 

বিজয় দিবসের এসব পোশাক আর উপহার দামেও খুব বেশি নয়। পেয়ে যাবেন যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটিসহ বিভিন্ন শোরুম- রঙ বাংলাদেশ, বিশ্বরঙ, আড়ং, অঞ্জন’স, গ্রামীণ ইউনিক্লো, ক্যাটস আই, জেন্টল পার্ক ওমেন্স, ইনফিনিটি, মুস্তফা মার্ট, স্মার্টটেক্স, আর্টিস্টিতে। এর বাইরেও পাবেন উত্তরা, বনানী, গুলশান, মিরপুরসহ এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেটের বিভিন্ন বিপণিবিতানে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর