শিরোনাম
শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রচ্ছদ

চাদরে উষ্ণতার আদর

ফেরদৌস আরা

চাদরে উষ্ণতার আদর

♦ মডেল : বৃষ্টি ও শাম্মী ♦ ছবি : মুন্তাকিম ♦ পোশাক : রঙ বাংলাদেশ

হাড় হিম করা শীত পড়েছে। অথচ সন্ধ্যার আড্ডায় শাল-চাদর মুড়িয়ে ফ্যাশনেবল হয়ে উঠছে তরুণ-তরুণীরা। নতুন বছরের ফ্যাশনে রং-বাহারি শাল-চাদরে মজেছে গোটা ফ্যাশন দুনিয়া। তাই তো শাল বা চাদর যাই হোক শীতে উষ্ণতার আদর হিসেবে তো বটেই, ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবেও সবার পছন্দের।

 

নতুন বছরের শুরু। ক্যালেন্ডার বলছে এখন শীতকাল। আর হাড় হিম করা শীতও এখন জেঁকে বসেছে গ্রাম-শহরে পথঘাটে। আর ফ্যাশন বা শীত নিবারণ যাই হোক, শীত নিয়ে কিন্তু সব বয়সীর রয়েছে আলাদা আগ্রহ। মেয়েদের শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ, পঞ্চ বা ফোরকাস্ট ওয়স্টার্নি ট্রেন্ড আর ছেলেদের পাতলা সোয়েটার বা পাঞ্জাবি যাই হোক শীতের ট্রেন্ডে ট্রেন্ডি হয়ে উঠতে বেছে নিতে পারেন শাল বা চাদর। শীতে ওয়েস্ট কোট-ব্লেজার, জ্যাকেট, হুডি আরও নানান কিছু থাকলেও শীত নিবারণে চাদরে উষ্ণতার আরাম সব বয়সীদের পছন্দ।

আগের দিনের দাদা-দাদিরা শীতের উষ্ণতা হিসেবে প্রথমেই বেছে নিতেন শাল-চাদর। মা-খালারা শাড়ির আঁচলের সঙ্গে জুড়ে নিতেন শাল বা চাদরের আঁচল। আরেকটু আগে তাকালেই মিলবে সাম্রাজ্যে রাজ করা রাজা-মহারাজারা আভিজাত্যের উপঢৌকন হিসেবে কাঁধে ঝুলিয়ে নিতেন বাহারি কারুকাজ করা শাল। সেকেলে বণিকরা এমনকি গ্রামের মাতবররা কাঁধে শাল বা চাদর ঝুলিয়ে নিতেন পারিবারিক ঐতিহ্য বা আভিজাত্য হিসেবেই। হালকা বুননের পশমি শাল বা চাদরে সহজেই কাবু করা যেতে পারে শীতকে। শুধু শীতের পোশাক হিসেবেই নয়, ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবেও তরুণ প্রজন্মের কাছে শাল-চাদরের রয়েছে আলাদা কদর।

এই সময়ে যারা শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ পরতে পছন্দ করেন, তারা শীত পোশাক হিসেবে অবশ্যই শাল বা চাদর রাখেন। কারণ এই অনুষঙ্গ প্রথমত শীতের হাত থেকে রক্ষা করে, দ্বিতীয়ত এসব পোশাকের সঙ্গে তা মানানসই হয়। অবশ্য মেয়েরা শাড়ি বা কামিজের সঙ্গে শীতের পোশাক হিসেবে শাল বা চাদরকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এর সর্বজনীনতা অগ্রাহ্য করার কোনো উপায় নেই। শাড়ি যেমন এই উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ঢঙে, নানা কায়দায় পরা হয়। একইভাবে শাল-চাদরও সবখানেই পোশাক-উপযোগী করে নানা স্টাইল হিসেবে পরা যায়।

উত্তর ভারতীয় অঞ্চলের শাল পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত। আবার কাশ্মীরি শালের সুখ্যাতি উপমহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহু আগেই চলে গেছে ইউরোপের মাটিতে। একরঙা, হালকা কারুকাজের কিংবা পুরো জমিনে অনবদ্য সূচিকর্ম করা শাল বেছে নিতে পারেন পছন্দ ও উপলক্ষ অনুযায়ী। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, জিন্স, ফতুয়া, স্কার্ট সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে যায় হাল ফ্যাশনের এসব শাল ও চাদর। বিভিন্ন রং, নকশা, কাটিং, ডিজাইন সব বয়সী নারীকে আকৃষ্ট করে। শীতে শাল গায়ে জড়িয়ে চলাফেরা করায় যে আরাম তা আর অন্য শীত পোশাকে নেই বললেই চলে। তাই শীতে তরুণ-তরুণীদের কাছে শাল-চাদরের গুরুত্বই আলাদা। সেকাল থেকে একাল, শীত ফ্যাশনে এতটুকু কমেনি এসব অনুষঙ্গের কদর। বরং শীতের ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে শাল-চাদরে এসেছে রং ও নকশার অসংখ্য বৈচিত্র্য।

বর্তমান সময়ে ছেলেমেয়ে উভয়ই এখন শীতের ফ্যাশন হিসেবে শাল-চাদর ব্যবহার করেন। হিমেল হাওয়ায় ঘুরতে বের হন, কাছাকাছি কোথাও ঘুরে বেড়ানোর জন্য শালটা জড়িয়ে নিলেন তাও আবার পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে ব্যস, ফ্যাশন স্টেটমেন্টটাই বদলে যাবে। দেখতে আকর্ষণীয় তো লাগবেই ফ্যাশনেও আসবে নতুনত্ব। ফ্যাশনের ভিন্ন লুক চাইলে বেছে নিতে পারেন রঙিন একটি চাদর। বন্ধুদের আড্ডায় মেতে উঠতে শীত ফ্যাশনের শালও হয়ে উঠতে পারে ফ্যাশনেবল আইকন।

 

এখনকার শীত উৎসবে শালের রং আর ডিজাইনে আনা হয়েছে নানারকম পরিবর্তন। হালকা শীতে পাতলা একটা শাল কিংবা চাদর ছেলে-মেয়ে উভয়ই ব্যবহার করতে পারেন। চাদরের ডিজাইনও এমনভাবে করা হয়েছে চাইলে এটাকে মাফলার হিসেবেও চালিয়ে নিতে পারবেন।

শীতে ছেলেদের ফ্যাশনে চাদর যেমন ব্যতিক্রমী লুক আনে তেমনি মেয়েদের ফ্যাশনেও আনে নতুনত্ব। এমনিতেই বাঙালি নারীকে শাড়িতেই বেশি মানায়। এর সঙ্গে শীত পোশাকের সামঞ্জস্য থাকলে নারীকে আরও নান্দনিক দেখায়। বাঙালি মেয়েদের প্রথম পছন্দ শাড়ি। পার্টি বা গেট টুগেদারে শাড়ির উপরে একটা শাল বা চাদর জড়িয়ে নিলেই ফ্যাশনও হবে সঙ্গে শীত নিবারণও হবে পুরোপুরি। হালকা বা হাড় হিম করা শীত যাই হোক শাল-চাদরগুলো যেমন আরাম দেয়, তেমনি বহন করতেও সুবিধা। অনেকে তো ওড়নার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছেন এসব।

রং বাহারি ও ফ্যাশনেবল শাল-চাদর। তবে ছেলেদের ফ্যাশনে চাই ভিন্ন মাত্রা। তাই শার্ট, টি-শার্ট এবং পাঞ্জাবি যাই হোক না কেন, একটা বাহারি শাল-চাদর পরতে পারেন।

এ বছর শাল-চাদরের রঙের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহূত হয়েছে নীল, খয়েরি, কফি, ম্যাজেন্টা, বাদামি, অফ হোয়াইট ইত্যাদি। বাজার ঘুরে শালের খবর নিয়ে দেখা গেছে, রুচিশীলতার তাগিদে বৈচিত্র্য এসেছে শীতের চমৎকার ডিজাইন প্যাটার্নের ডাবল কিংবা সিঙ্গেল শালে। চমৎকার বুনন আর ডিজাইনে তৈরি করা হচ্ছে নজরকাড়া সব চাদর বা শাল। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য তৈরি এসব শাল-চাদর। নারীদের তুলনায় পুরুষদের শাল-চাদর একটু বড় হয়ে থাকে। ছেলেদের শালগুলো কিছুটা সাদামাটা। তবে সবচেয়ে বেশি নান্দনিক সৌন্দর্য মেয়েদের শালে। এ বছর খাদি, উল, কটন কাপড়ের শাল দেখা যাচ্ছে।

প্রয়োজনের তাগিদে শুরু হলেও এখন শাল-চাদরের পালে লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। শীত বশ করতে খদ্দর বা উলের মোটা চাদর বেছে নিতে পারেন। সিল্ক, খাদি, পশমি সুতা, মোটা সুতি ইত্যাদি কাপড়ের ওপর কাজ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসগুলোর শীতের শাল। এসবের বাইরেও বিদেশি শাল লুধিয়ানা, জয়পুরি, চায়নিজ, বার্মিজ ও ইরানি শালও হতে পারে আপনার শীতের পরশ। কাশ্মীরি শালের মধ্যে পশমিনা শাল জনপ্রিয়তার শীর্ষে। নেপাল থেকেও পশমিনা সংগ্রহ করেন কেউ কেউ। এখন দেশেও তৈরি করা হচ্ছে পশমিনা শাল। এবারের শীতে শাল-চাদরে পাতলা কাপড়ের প্রাধান্য বেশি। হাড় হিম করা শীতের জন্য থাকছে উলন কাপড়ের শাল। সুতা, চুমকি, পুঁতি, অ্যামব্রয়ডারি, ব্লক প্রিন্ট, টাইডাই, স্ক্রিনপ্রিন্ট, স্কেচ এবং জরির কাজ করা শাল তো থাকছেই! করা হয়েছে নান্দনিক নকশার কারুকাজ।

দেশি ফ্যাশন হাউস রং বাংলাদেশ, দেশাল, নিত্য উপহার, আড়ং, দেশি দশ, বাংলার মেলাসহ অন্যসব হাউসে মিলবে বাহারি শাল। কাপড় আর ডিজাইনের ভিন্নতায় শালের দামও ভিন্ন ভিন্ন।  পছন্দসই শাল পেয়ে যাবেন ৫০০ টাকা থেকে ৮০০০ টাকার মধ্যে। তাছাড়া ঢাকা ও জেলা শহরগুলোর বিভিন্ন শপিংয়ে সাশ্রয়ী দামে পেয়ে যাবেন পছন্দসই নানা ডিজাইনের বাহারি পাতলা চাদর কিংবা শাল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর