শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রচ্ছদ

শীতের মোহনীয়তা

তানিয়া তুষ্টি

শীতের মোহনীয়তা

♦ মডেল : চিত্রনায়িকা পপি ♦ ছবি : নেওয়াজ রাহুল ♦ পোশাক : ইউডু ডিজাইন সোর্স

আবহাওয়ায় চলছে শীত ঋতু। বাতাসে আর্দ্রতা কমছে, বেড়েছে রুক্ষতা। এ সময় ছোট-বড় সবাই চায় ত্বকের বাড়তি যত্ন। তা না হলে এক দিনের অবহেলায় নিজেকে আর চেনার উপায় থাকে না। নিজের আয়নাও যেন প্রতারণা করে চেহারা দেখানোর বেলায়। কিন্তু ত্বকের লাবণ্যতা ধরে রাখা সম্ভব এই সময়েও। সে জন্য প্রধান তিনটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন- ত্বকচর্চা, খাদ্যাভ্যাস ও মেকআপ।

 

ত্বকচর্চায় শীতের মোহনীয়তা

শীতে ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে চর্চার বিকল্প নেই। এজন্য প্রথমই সাবানের পরিবর্তে কম ক্ষারযুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহারের অভ্যাস করুন। তবে পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ সাবানে তেমন সমস্যা হয় না। রাতে ঘুমানোর আগে ও মুখ ধোয়ার পর নিয়মিত ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বকের খসখসে ভাব দূর হবে। ফলে চুলকানিও হবে না এবং ত্বকও ফাটবে না। ত্বকের আর্দ্রতা ও ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে রোজ গোসলের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে অলিভ অয়েল অথবা লিকুইড প্যারাফিন ব্যবহার করা যেতে পারে। শীতের এই সময় দরকার ত্বকে ময়েশ্চারাইজ করা। এক টুকরো পাউরুটি দুধে ভিজিয়ে নরম করে এর সঙ্গে পাকা কলা চটকে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। এরপর চন্দনগুঁড়া মিশিয়ে মিশ্রণটি ১৫ মিনিট মুখে রেখে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এ ছাড়া পাকা কলা, পাকা পেঁপে ও ময়দার পেস্টও ত্বকের জন্য উপকারী। পেস্টটি ১০-১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও মসৃণ। শীতে ত্বকে জমে ব্ল্যাক হেডস ও হোয়াইট হেডস। এসব থেকে রক্ষা পেতে স্ক্রাবিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তাহে ২-৩ দিন স্ক্রাবিং করে উপকার পাওয়া সম্ভব। ২ চা চামচ চালের গুঁড়ার সঙ্গে ২ চা-চামচ টকদই ও মধু মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে নিন। টোনিংয়ের জন্য বেছে নিন অ্যালকোহল ফ্রি টোনার। টোনার ত্বকের ব্যালান্স ঠিক রাখে ও ময়েশ্চারাইজার বা ফাউন্ডেশনকে লোমকূপের মুখ খোলা রাখে। মাইল্ড ও কম ক্ষারযুক্ত ফেসওয়াশ ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক করবে না ও আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। পুরো শরীর পরিষ্কার করতেও সাবানের বদলে শাওয়ার জেল বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

 

খাদ্যাভ্যাসে সুন্দর ত্বক

মোহনীয় ত্বকের জন্য বেশি জরুরি হলো ভিতর থেকে পুষ্টির জোগান। ত্বক যদি পর্যাপ্ত পুষ্টি না পায় তাহলে যতই সাজগোজ থাকুক নির্জীব দেখাবে। তা ছাড়া এই মৌসুমে বাজারে হরেক রকম পুষ্টিকর সবজি ও ফলমূল পাওয়া যায়। যেগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলে আপনার ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান নিশ্চিত হবে। নিয়মিত ভিটামিন সি-যুক্ত ফল-ফলারি ত্বকের সজীবতার জন্য জরুরি। পেয়ারা, আনারস, পেঁপে, লেবু, আপেল, আঙ্গুরসহ নানা রকম বেরি জাতীয় ফল ত্বক ভালো রাখে। সহজে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। ব্রোকলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ই এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। ভিটামিন সি ও ই ত্বকে গভীর থেকে পুষ্টি জোগায়। ভিটামিন ই সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে ত্বককে কিছুটা হলেও রক্ষা করে। বাদাম ভিটামিন ই এর একটি অন্যতম উত্স। সালাদে, রান্নায় অথবা স্নাক্স হিসেবে বাদাম খেতে পারেন প্রতিদিন। নিয়মিত খাবারের তালিকায় বাদাম রাখলে ত্বককে আরও সজীব ও মোহনীয় করে তুলবে। সারা বছরই গাজর পাওয়া যায়। প্রতিদিন একটি করে গাজর খেলে আপনার ত্বক থাকবে সজীব ও উজ্জ্বল। গাজরে থাকা প্রচুর পরিমাণের বিটা ক্যারোটিন শরীরে গিয়ে ভিটামিন এ তে পরিণত হয়। এটি ত্বকের টিস্যুগুলোকে মেরামত করে এবং ক্ষতিকর সূর্যরশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সহায়তা করে। কাঁচা অথবা রান্না করে গাজর খেতে পারেন প্রতিদিন। প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে দুই লিটার পানি বা পানিযুক্ত খাদ্য খাওয়া উচিত। পানি শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান ঘামের মাধ্যমে বের করে দেয়। পর্যাপ্ত পানি পেলে ত্বকের কোষে পানি পৌঁছয় এবং ত্বক সজীব হয়ে ওঠে। পর্যাপ্ত পানি পান ব্রণের উপদ্রবও কমায়। ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড (ওমেগা ৩, ৬) সমৃদ্ধ মাছ ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এই মাছ ত্বকের কোষ সজীব রাখে এবং ত্বককে ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করে। তবে অতিরিক্ত তেল দিয়ে ভাজা মাছ না খেয়ে সামুদ্রিক মাছ গ্রিল করা অথবা সেঁকা তেলে ভেজে খাওয়ার চেষ্টা করুন।

 

মেকআপে আকর্ষণীয়

ত্বকের বাহ্যিক সৌন্দর্য নির্ভর করে মেকআপের ওপর। শীতকাল সাজসজ্জার জন্য আরামদায়ক ঋতু হলেও রোদ ত্বককে পুড়িয়ে কালো করে দেয় খুব তাড়াতাড়ি। তাই শীতের মেকআপের ব্যাপারে প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা। সাজগোজের বেলায় প্রথমেই আসে ফাউন্ডেশনের ব্যবহার। স্কিন টোনের সঙ্গে মিলিয়ে ফাউন্ডেশন বেছে নেওয়া উচিত। ইনোসেন্ট লুকের জন্য হালকা ফাউন্ডেশনই উত্তম। স্কিন টোন অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল করতে ব্যবহার করা যেতে পারে হাইলাইটিং ক্রিম। তবে ত্বকের নরম ভাব বজায় রাখার জন্য সেটা খুব ভালো করে ব্লেন্ড করা প্রয়োজন। মেকআপে বাড়তি আকর্ষণ যোগ করতে মনের মতো করে চোখ এঁকে নিন। কেউ কেউ আলগা পাপড়ি লাগিয়ে নেন। তারপর পছন্দের আইশ্যাডো দিয়ে চোখের গর্জিয়াস লুক দিতে পারেন। কারও যদি লিক্যুইড আইলাইনারে সমস্যা হয় তবে প্রথমে পেনসিল দিয়ে টেনে তারপর লিক্যুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। রাতের পার্টিতে সাধারণত কুল-লুক মেকআপ ভালো লাগবে না। হাইলাইট ক্রিমের বদলে পিংক ব্লাশ অন লাগিয়ে নিলে খুব গ্ল্যামারাস লাগবে। ফ্রস্টি মেকআপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো চোখের মেকআপ। ল্যাশলাইনের ওপরের অংশে পার্লি হোয়াইট আইশ্যাডো লাগাতে হবে। এর সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে ব্লু শিমারি শ্যাডো এবং বাইরের দিকের অংশের জন্য পার্লি ব্ল্যাক। এ ছাড়া আইশ্যাডোর কালার হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে অন্য কোনো কুল শেড। যেমন সাদা, রুপালি, আইস ব্লু, লাইল্যাক বা পিংকের মতো রং। পেনসিল লাইনার দিয়ে আইল্যাশের ঠিক ওপরে রেখা টানলে চোখ আরও উজ্জ্বল দেখাবে। এরপর দিতে হবে মাশকারা। মেকআপ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইলে চিকবোনে ক্রিমের জায়গায় আইশ্যাডো দিয়েও হাইলাইট করা যেতে পারে। সাধারণত এই মেকআপের সাথে পিংক বেশি মানায়। শীতের সাজে ঠোঁট রাঙানো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সময় ঠোঁটে দেওয়া যেতে পারে সিলভার গ্লস। এ ধরনের মেকআপের সঙ্গে গাঢ় রঙের ড্রেসআপ বেশি মানানসই। তবে হালের ট্রেন্ড অনুযায়ী পার্টি মানেই ফ্লোরটাচ গাউন। তরুণীদেরও পছন্দের শীর্ষে রয়েছে এ ধরনের পোশাক। তাই তো ফ্যাশন হাউসগুলো তাদের বিশ্লেষণধর্মী এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে যাচ্ছে বিশেষ এই পোশাকের ওপর। ডিজাইন, কাপড়ের ব্যবহার, রং সব ক্ষেত্রেই আকর্ষণীয় ও নতুনত্ব নিয়ে শোরুমগুলোতে হাজির নজরকাড়া সব পার্টি ড্রেস আর গাউন। তাই শীতের মোহনীয় সাজের সঙ্গে পছন্দের একটি পোশাক বেছে নেয়ার সুযোগ থাকছে সহজেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর