শিরোনাম
শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রচ্ছদ

ভালোবাসার এই সময়

তানিয়া তুষ্টি

ভালোবাসার এই সময়

♦ মডেল : কাজী নওশাবা ও অমিত সিন্হা ♦ পোশাক : প্রেম’স কালেকশন ♦ অলঙ্কার : পৃ ♦ মেকওভার : জুলিয়া আজাদ (আকাঙ্ক্ষা’স গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড) ♦ ছবি : নেওয়াজ রাহুল

সম্পর্কের সাতকাহন

১৪ ফেব্রুয়ারি মনেই অন্যরকম ভালো লাগার দিন, প্রিয় দিন ভাবাবেগেরও। বিশ্ব ভালোবাসার এই দিনটি এলে উৎসব জ্বরে ভোগে গোটা দুনিয়া। তাৎপর্যময় এই দিনের ইতিহাস সাক্ষী দেয় প্রেমিক-প্রেমিকার অনন্ত ভালোবাসাকে। আর তাই তো যে প্রেমিকযুগলের জন্য দিনটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তাদেরও সবাই আরেকবার স্মরণ করে প্রেমময় অনুভবে।

ভালোবাসার বন্ধনটি জোড় বাঁধে আবেগধর্মী শর্তে। এ শর্তের গভীরতাও যেন অতলস্পর্শী। হাজারো মানুষের ভিড়ে বিশেষ একজনের সঙ্গেই ভাগ করে নিতে হবে সব আবেগ, অনুভূতি আর দুঃখ-কষ্ট। প্রেমের মিলনাত্মক পরিণতিতে তখন শরীরের ব্যাপারটি বিচ্ছিন্ন করার সাধ্য কার। কিছুকাল আগেও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজলভ্য ছিল না। চিঠি, চিরকুটে যোগাযোগ আর কালেভদ্রে দুয়েকবার দেখা হওয়া ছিল প্রেমিকযুগলের পরম আরাধ্য। প্রেমপাগল যুগল ভবিষ্যৎ ভাবনা না ভেবেই ঘটিয়েছে অনেক ঘটনা। আজ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় বদলেছে ভালোবাসার ধরন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাছে আসার গল্পকে করছে আরও সংজ্ঞায়িত। প্রিয় মানুষকে আপন করে নিতে এখনো চলছে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ। তাদের এই প্রচেষ্টায় হয়তো বাঁচিয়ে রেখেছে ভালোবাসার বিমূর্ত প্রতীককে। যুগে যুগে ভালোবাসা দিবস সবার মননে হয়েছে অক্ষয়। বছর ঘুরে একবার আসা বিশেষ এই দিনে সবাই তাদের কাছের মানুষটিকেই আপন অনুভূতিতে আগলে রাখতে চায়। তাকে খুশি করার জন্য থাকে নানা ধরনের পরিকল্পনা ও আয়োজন। আপনিও নিশ্চয়ই এর ব্যতিক্রম নন। এরই মধ্যে পরিকল্পনা নিয়েছেন ভালোবাসা দিবসে পছন্দের মানুষটির জন্য আপনি কি করবেন। কারও কাছে এসব আয়োজন কিছুটা বাড়াবাড়ি। অথচ বিশেষ দিনে বিশেষ মানুষটির জন্য কিছু করার আবেদন বিফলে যায় না। একটু হলেও দোলায়িত করে হৃদয়ের কোনায় জমে থাকা ভালোবাসাকে। বছরজুড়ে থাকে নানা কাজের চাপ। বিশেষ এই দিনে ব্যস্ততা থেকে ছুটি নিয়ে প্রিয়জনকে সময় দিতে পারেন আপনিও। সাধ্যের মধ্যে রাখতে পারেন পরিপূর্ণ একটি আয়োজন। কারণ নিজের অবহেলায় পরিকল্পনা থেকে কিছু বাদ গেলে পুরো ব্যাপারটি খাপছাড়া লাগবে। কীভাবে উপস্থিত হবেন, দিনের বিশিষ্টতায় কী রঙের পোশাক মানানসই— এসব নিয়ে হয়তো ভেবেছেন কিংবা কিছুই ভাবেননি। প্রেমে আস্থা থাকায় ভাবছেন তার সামনে আলাদা করে উপস্থিত হওয়ার কী আছে? কিন্তু এই বিশেষ দিনে বিশেষভাবে তৈরি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকেই যায়। অনেক যুগল তো একই রঙের পোশাক কিনে নেন আগেভাগেই, যা আলাদা ভাবার্থ সৃষ্টি করে। ভালোবাসার সঙ্গে গোলাপি আর লাল রঙের জোর সম্পর্ক থাকায় পোশাকটি বেছে নিতে পারেন এই রঙে। প্রিয় মানুষটির পছন্দের কোনো রং থাকলে সেটিকেও প্রাধান্য দিতে পারেন। এইদিনে মেয়েরা পরতে পারেন শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ অথবা ট্রেন্ডি কোনো পোশাক। ছেলেদের জন্য শার্ট, পাঞ্জাবি বেশ মানানসই। তবে সবটাই বেছে নিতে হবে নিজের গড়ন ও অভ্যাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। বিশেষ এইদিনে সুন্দর সাজে উপস্থিত হয়ে চমকে দিন প্রিয় মানুষটিকে। দেখবেন এতে আপনারও ভালো লাগবে।

 

কাছে আসার গল্প

পছন্দের মানুষটি নিয়ে ঘুরতে যেতে পারেন যে কোনো দিন। কিন্তু বিশেষ দিনে ঘোরাঘুরি দেয় বিশেষ ভালো লাগা। তাই তো শত ব্যস্ততার ভিড়ে কষ্ট করে হলেও সময় বের করা। কিন্তু এত কষ্টও সামান্য ভুলে সবকিছু গড়বড় করে দিতে পারে। তাই কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। যতক্ষণ আপনি তার সামনে থাকছেন মনোযোগটি থাকুক তার প্রতিই। একজনের সঙ্গে অপরের আত্মিক টান সৃষ্টির মোক্ষম সুযোগ হতে পারে এটি। এদিনে দুজনে মিলে শপথ নিতে পারেন নতুন করে পথ চলার। এতে আগামী দিনগুলো হবে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ।

অনেক কথা মুখে বলা হয়ে ওঠে না। আজকের এই বিশেষ দিনে মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখে ফেলুন চিঠি। সেকেলে রীতিতে ভালোবাসার এই প্রকাশ কিছুটা হাসির খোরাকও জোগাতে পারে দুজনের। কিন্তু এটাই হতে পারে প্রিয় মানুষটির জন্য চমক। অল্প কথায় সাজিয়ে-গুছিয়ে লেখা চিঠিটি দিতে পারেন সুন্দর একটি খামে। নিজ হাতে তৈরি করলে তার গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে যাবে। প্রেমিকযুগল বা নবদম্পতিদের জন্যও ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের উপযোগিতা কিন্তু কম নয়। তবে একেবারেই যদি এত আনুষ্ঠানিকতা না করতে চান মনোরম পরিবেশ বেষ্টিত কোনো রেস্টুরেন্টে বসতে পারেন। ভালোবাসা দিবসের এই আনন্দকে বহাল রাখতে মাঝে মাঝেই হতে পারে এমন কিছু সারপ্রাইজ ট্যুর। এভাবেই রচিত হবে কাছে আসার গল্প।

 

 

নারী ও প্রেম

নারী জননী। নারী দেবী, মহাশক্তির আধার। নারী আসে মাতৃত্বের স্নেহ নিয়ে, প্রেয়সীর প্রেম নিয়ে। বিখ্যাত দার্শনিক ক্যাম্পবেল বলেছিলেন, ‘নারী হেসে উঠার আগ পর্যন্ত পৃথিবী ছিল বিষণ্ন, বাগান ছিল জঙ্গল আর পুরুষ ছিল সন্ন্যাসী।’ সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টি নারী। যেখানে পুরুষের পূর্ণতা পায়। নতুন জীবন গড়তে তারা একে অন্যের পরিপূরক। আর তা শুরুই হয় প্রেম নিয়ে। চলে লুকোচুরি, অভিসার যাত্রা। সমাজের বাঁকা চোখ উপেক্ষা করে নীরবে, নির্জনে মিলিত হওয়া। মনের গহিনে স্বপ্নের জাল বোনা।

 

এই পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম চিরন্তন, সব প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে। তবুও এসব বাধা উপেক্ষা করে মনে বাসা বাঁধে প্রেম। বহু শক্তিশালী মহাবীরও প্রেমের চরণে পড়েছেন। হার মেনেছেন প্রেমের কাছে, ভালোবাসার কাছে। ভালোবাসাকে জয় করতে লুটোপুটি খেয়েছেন পৃথিবীর বিখ্যাত অনেকেই।

 

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের জীবনেও এসেছিল নারীপ্রেম। তার সাহিত্যে ছিল নারীপ্রেমের গল্পকথা। ১৯৩৭ সালের ১ আগস্ট কবি তার প্রথম স্ত্রী নার্গিসকে চিঠিতে লিখেছেন, ‘আমার অন্তর্যামী জানেন, তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কি গভীর ক্ষত; কি অসীম বেদনা। তুমি এই আগুনের পরশ মানিক না দিলে আমি অগ্নিবীণা বাজাতে পারতাম না, আমি ধূমকেতুর বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না।’

এই লেখা থেকেই বোঝা যায় নারীপ্রেম কত বেদনাময় ও প্রত্যাশার জাল বুনে দেয়। নারীর প্রেম, বিরহ যে বিশেষ উপাদান হিসেবে কাজ করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

 

অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের নারী ধারণা রোমান্টিকতায় আবৃত। তার সাহিত্যে বাস্তব নারীর চেয়ে কল্পনার নারীই ছিল বেশি প্রেমপিয়াসী। রবীন্দ্রনাথের চোখে নারী মাত্রই তরুণী, রূপসী, মানস সুন্দরী, দেবী।

 

ফুল যেমন পৃথিবীতে সবার প্রিয় তেমনি কোনো সৌন্দর্য দর্শনে মানুষের হৃদয়পটে যে আকর্ষণ সৃষ্টি হয়, তাকেই ভালোবাসা বলে। ফুল দর্শনে মানব মনে যে ভালোবাসার সঞ্চার হয়, তার পূর্ণতা ঘটে নারীর প্রেমে। স্থান-কাল-পাত্রভেদে প্রেমের মূল্যায়ন করতে পারলেই জীবন হয়ে উঠবে সহজ ও সুন্দর। পবিত্র প্রেম সর্বদা পরিশ্রুত উপায়ে মানবপ্রেম বরং স্রষ্টার প্রেমের দিকে নিয়ে যাবে।

 

যত্নে থাক ভালোবাসা

সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরি করে ভালোবাসা নামক অদৃশ্য রশি। তাই তো ভালোবাসাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে তার যত্নের প্রয়োজন। ভালোবাসা একমুখী নয়। সে আপনাকে ভালোবেসে সব দায়িত্ব পালন করে যাবে আর আপনি তা উপভোগ করবেন এটা ঠিক নয়। আপনিও কিছু দায়িত্ব নিন। কাছের মানুষটির প্রয়োজন বুঝে কাজ করাটাও আপনার দায়িত্ব। ভুল হলে বুঝিয়ে বলুন। সমঝোতা না করে নিজের মনে রাগ পুষে রাখা একদম ঠিক হবে না। আপনার কোনো ত্রুটি সে ধরিয়ে দিলে আপনাকেও শুধরে নিতে হবে। ঘুম থেকে উঠে অথবা ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিংবা কাজের সময় অন্য সাধারণ কথার মাঝে একবার ছোট্ট করে বলুন ভালোবাসি। হঠাৎ এমন কথা চমত্কৃত হওয়া ছাড়া উপায় কি বলুন? এমন সময় প্রিয় মানুষটির হাস্যোজ্জ্বল মুখটি আপনাকেও খুশি করবে নিশ্চিত।

ছোটখাটো যে কোনো সফলতায় আপনার সঙ্গীকে স্বীকৃতি দিন। আপনার সামাজিক, পারিবারিক অবস্থান থেকে যে কাজটি করছেন তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য সঙ্গীকে ভালো করে বুঝিয়ে দিন। এতে উভয়ের প্রতি ধারণা স্বচ্ছ হবে। অ্যানিভার্সারি, জন্মদিন বা বিশেষ কোনো দিবসে কাছের মানুষকে উইস করা একদমই ভোলা নয়। সে আপনার হয়ে গেছে ভেবে উইস করা থেকে বিরত থাকা বোকামি। কারণ ছোট ছোট এসব খুশি সম্পর্ককে ভালো রাখতে যথেষ্ট। আর এড়িয়ে যাওয়াটা এক সময় ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।

 

মাঝে মাঝে ছোট উপহার দিন পছন্দের মানুষটিকে। হোক সে খুব স্বল্প মূল্যের। তবু উপহার তো উপহারই। যে কোনো বয়সেই উপহার মানুষকে আন্দোলিত করে। এ ছাড়াও তার কাজের সময় সাহায্য করাটা আপনার প্রতি আস্থা তৈরি করবে। ভালো লাগাকে প্রাধান্য দিলেও কাজ করবে শ্রদ্ধা আর বিনয়। তাই ভালোবেসে ভালোবাসার যত্ন নিতে হবে, জয় করতে হবে হৃদয়।

 

ভালো লাগা কি ভালোবাসা?

ইদানীং ভালোবাসার নামে চলে অনেক নির্যাতন। ইট-পাথরের শহরে এমন ঘটনা কম দেখা গেলেও গ্রামাঞ্চলে এর প্রভাবটা একটু বেশি। তোমার জন্য মরতে পারি বলার পর ভালোবাসাকে তাকেই আবার নির্দ্বিধায় মেরে ফেলছে। এই কি ভালোবাসা? আবার ভালোবাসায় প্রত্যাখ্যাত হয়ে অ্যাসিড ছুড়ে দিতেও ভ্রুক্ষেপ করেন না অনেকেই।

 

মূলত ভালোবাসা বোঝার আগে বুঝতে হবে ভালোবাসা ও ভালো লাগা এক নয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কবিতায় বলেছেন, ‘হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ/আমি কি এ হাতে কোনো পাপ করতে পারি?’ ভালোবাসা তো এমনই হয়। যা সব পাপ-পঙ্কিলতাকে দূর করার ক্ষমতা রাখে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘বর্তমানে বেশির ভাগ প্রেমিক-প্রেমিকাই বাস করছে সেই বোকার স্বর্গে। তারা শারীরিক সৌন্দর্যকেই ভালোবাসার ভিত্তি বলে মনে করছে। সাময়িক ভালো লাগাকেই অমূল্য ভালোবাসা বলে ভুল করছে।’

 

ভালোবাসা ও ভালো লাগা নিয়ে প্রচলিত একটি উদাহরণ রয়েছে। কারও যদি গোলাপ ভালো লাগে, সে তা তুলে নেয়। কিন্তু গোলাপটিকে ভালোবাসলে গোলাপ গাছটির যত্ন নেয়, সার দেয়, পানি দেয়। তুলে নিলে গোলাপটি শুকিয়ে যায়, সুবাস হারায়। আর যত্ন নিলে সতেজ থাকে, সুবাস ছড়ায়! তেমনি ভালোবাসাকে যত্ন করতে পারলে ভালোবাসাও জীবনকে করে সুন্দর।

 

ভালোবাসা স্বর্গীয়, সে সহজে ধরা দেয় না। অনেক ধৈর্য, ত্যাগ ও সাধনার বিনিময়ে মেলে ভালোবাসা। ক্ষণিকের ভালো লাগার সঙ্গে একে মিলিয়ে ফেললে তা হবে জীবনের চরম বোকামি। মনে রাখবেন, পৃথিবী টিকে আছে ভালোবাসার জন্যই। ভালোবাসা হতে হবে নির্মল, প্রকৃত এবং নিঃস্বার্থ। এমন ভালোবাসা সর্বদাই অকৃত্রিম ও চিরন্তন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর