শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
সুস্বাস্থ্য

শোল্ডারে ব্যথা হলে কী করবেন?

শোল্ডারে ব্যথা হলে কী করবেন?

ছবি : ইন্টারনেট

হাকিম সাহেব বাসে অফিসে যাচ্ছেন কিন্তু সিট পাননি দাঁড়িয়ে আছেন। ড্রাইভার হঠাৎ ব্রেক কষলেন, তখনই শোল্ডার জয়েন্টে আঘাত পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন ব্যথাটা হয়তো এমনিতেই চলে যাবে। কিন্তু দিন দিন ব্যথাটা বেড়েই যাচ্ছিল। অতঃপর ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়া শুরু করলেন এবং ব্যথার কারণে হাত নাড়ানো বন্ধ রাখলেন। ৩ সপ্তাহ পর যখন তিনি হাত নাড়ানোর চেষ্টা করলেন, দেখলেন বাম হাত নাড়ানোর ক্ষমতা ডান হাতের তুলনায় অনেক কমে গেছে।

উল্লিখিত ঘটনার সারমর্ম হলো হাকিম সাহেব ফ্রোজেন শোল্ডার নামক সমস্যায় ভুগছেন। আসুন, তাহলে এবার জেনে নিই ফ্রোজেন শোল্ডার কি এবং এই রোগে কি ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন।

ফ্রোজেন সোল্ডারকে বাংলায় বলতে পারি, হাতের সঙ্গে কাঁধের জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া। এটি কাঁধের জয়েন্টের প্রদাহজনিত রোগ। এক্ষেত্রে জয়েন্টের মধ্যকার সাইনোভিয়াল ফ্লুইড নামক এক ধরনের তরল পদার্থ কমে যায়। যার ফলে শোল্ডার জয়েন্ট ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে যেতে থাকে। ফ্রোজেন সোল্ডারকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় অ্যাডহেসিভ ক্যাপসুলাইটিস বলা হয়। এই সমস্যা ৪০-৬০ বছর বয়সের মানুষের বেশি হয়, তবে পুরুষের তুলনায় মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে।

লক্ষণসমূহ

শোল্ডার জয়েন্টে ব্যথা, জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া, জয়েন্টের নাড়ানোর ক্ষমতা কমে যাওয়া, আক্রান্ত পাশে ঘুমোতে না পারা, হাতে দুর্বলতা চলে আসা ইত্যাদি।

এই রোগের প্রধান কারণ এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন- ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী, কাঁধের জয়েন্টে আঘাত পেলে, কোনো কারণে জয়েন্ট দীর্ঘদিন নাড়ানো না হলে, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ডের বা হাতের অপারেশন পরবর্তীতে, থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে।

চিকিৎসা পদ্ধতি

ব্যথা ফ্রোজেন শোল্ডার রোগীর প্রধান সমস্যা মনে হলেও, তার মূল সমস্যা হলো জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া। রোগী যত ব্যথার ভয়ে হাত নাড়ানো বন্ধ রাখবে, তার জয়েন্ট তত বেশি শক্ত হয়ে যাবে। তাই রোগীকে বুঝাতে হবে, ব্যথার ওষুধের চেয়ে হাত নাড়ানোর চিকিৎসা করা বেশি জরুরি। এক্ষেত্রে রোগীর ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রেখে হাত নাড়ানোর ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি হলো সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। কিছু কিছু ড্রাগস বা ওষুধ রোগীর জয়েন্টের সমস্যা দূর করে হাত নাড়ানোর ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর রোগের বর্ণনা, ফিজিক্যাল টেস্ট, থেরাপিউটিক স্পেশাল টেস্ট এবং রেডিওলজিক্যাল টেস্টের মাধ্যমে রোগীর জয়েন্টের সমস্যা নির্ণয় করে চিকিৎসা প্রদান করেন।

♦  ম্যানুপুলেশন থেরাপি

♦  মোবিলাইজেশন থেরাপি

♦  মুভমেন্ট উইথ মোবিলাইজেশন

♦  থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ

♦  ইনফিলট্রেশন বা ইন্ট্রা-আরটিকুলার ইনজেকশন

♦  লেজার থেরাপি

♦  ইলেকট্রোথেরাপি বা অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে চিকিৎসা ইত্যাদি।

লেখক :

ডা. এম ইয়াছিন আলি

চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট

ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল।

সর্বশেষ খবর