শুক্রবার, ২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রচ্ছদ

নারী কর্মে চাঞ্চল্যে

 নারী কর্মে চাঞ্চল্যে

♦ মডেল : নাজনীন হাসান ও ফারহানা এ্যানি ♦ পোশাক : রঙ বাংলাদেশ ♦ ছবি : জয় কে রয়চৌধুরী ♦ মেকওভার : হক

ঘরে বাইরে সবখানেই বেড়েছে নারীর ব্যস্ততা। পিছিয়ে নেই উল্লেখযোগ্য অর্জনে। সফলতার শিখরে পদচিহ্ন রাখা পুরুষ সঙ্গীর অনুপ্রেরণার জায়গাও এই নারী। আজ তাকে ব্যাখ্যা করতে যোগ হয়েছে কর্মস্পৃহা, উদ্যোগ, উৎসাহ আর দক্ষতার মতো সংজ্ঞা। বাদ পড়েছে পিছিয়ে থাকা আর আড়ষ্টতা নামক কিছু বৈশিষ্ট্য। নারী নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে যেমন দক্ষ হয়েছে কাজে, তেমনি উপযোগী পরিবেশে নিজের সাজগোজেও রেখে চলেছে সচেতনতার স্বাক্ষর। বিস্তারিত লিখেছেন— তানিয়া তুষ্টি

 

নারীরা আজ অনেক এগিয়ে। শুধু ঘরকন্না করে দিন পারের হিসাব থেকে বেরিয়েছে অনেক আগেই। করপোরেট লাইফ স্টাইলেও নিজেকে সেট করে নিয়েছে বেশ। নারীর হাতে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সাফল্য আজ নিত্যদিনের খবর। এই কর্মজীবী নারীকেই সামলাতে হয় ঘর, অফিস, আত্মীয়তা ও সামাজিকতা। কর্ম চাঞ্চল্যে থাকা আমাদের এই নারীর যেন বিশ্রামের ফুরসত নেই এতটুকু। তবে ব্যস্ততা যতই থাকুক প্রতিদিন কিছুটা সময় বের করে নিজের যত্ন নিতেই হয়। নইলে অসুস্থ হয়ে পড়তে হবে নিজেকেই। তখন ঘর, অফিস সবখানেই বাধবে গড়বড়।

 

কর্মজীবী নারীদের প্রথমেই যত্ন নিতে হবে নিজের শরীরের প্রতি। পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ কর্মস্পৃহা বাড়াতে এগুলোই প্রাইম ফুয়েল হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের অভ্যাস করা জরুরি।

এক্ষেত্রে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে সকালে উঠুন। খেয়াল রাখুন প্রতিদিন অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুম যেন হয়। অফিসে বসে দিনের পর দিন একটানা কাজের ফলে অনেক নারীর ওজন বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে অন্তত আধাঘণ্টা হাঁটুন। টুকটাক জিম করার অভ্যাসও কিন্তু খারাপ না। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে আপনি সুস্থ থাকবেন। অফিসে বসে ১ ঘণ্টা পর পর ‘ওয়াটার ব্রেক’ নিন। অফিসে থাকাকালীন প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস করে পানি পান করুন।

ঘুম পেলে বা কাজ করতে ইচ্ছা না করলে চা বা কফি পান করে আড়ষ্ঠতা কাটাতে পারেন। প্রতিদিন ব্রেন এক্সারসাইজ করুন। চিকিৎসকরা কর্মরত নারীদের প্রতিদিন অবশ্যই ব্রেন এক্সারসাইজ করার পরামর্শ দেন।

 

সার্থক নারী মানেই সার্থক পুরুষের উপযুক্ত সহযোগী। সার্থক আজকের পৃথিবী। কিছুদিন আগেও এর গুরুত্ব অনেকেই বুঝতো না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবাই তা অনুধাবন করতে শিখেছে। যারা বিষয়টি দ্রুত অনুধাবন করতে পারছেন তারাই এগিয়ে। আর এসব নারীকে হতে হচ্ছে সবদিক থেকেই এক্সপার্ট। প্রথমদিকে কর্মজীবী নারীরা ভাবতেন অফিসে সাজপোশাকের দিকে নজর না দিয়ে কাজকে প্রাধান্য দিলেই চলবে।

কিন্তু সেই ধারণা এখন পাল্টে গেছে। অফিসে কাজের দক্ষতার সঙ্গে সাজগোজ আর পোশাকের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। চাকরির প্রথম দিন কী ধরনের পোশাক পরবেন এ নিয়ে অনেকেই চিন্তা করেন। এক্ষেত্রে অফিসের ধরন দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

 

 

মেয়েদের ফ্যাশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো পোশাক। আর সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাল্টে যায় পোশাকের ফ্যাশন ও স্টাইল। তবে কর্মজীবী নারীদের যেহেতু সময়ের অভাব, তাই তাদের পোশাক এমন হওয়া উচিত যা আরামদায়ক, কাজের পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

শুধু পোশাকের ম্যাটেরিয়ালের ক্ষেত্রে নয়, সম্পূর্ণ পোশাকটাই এমন হওয়া উচিত যা সহজে সামলানো যায়। এ কারণেই কর্মজীবী নারীরা আজকাল শাড়ির চেয়ে সালোয়ার-কামিজ ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যদিও বাঙালি নারীর চিরন্তন সৌন্দর্য শাড়ির মতো অন্য কোনো পোশাকে ফুটে ওঠে না। হালকা রঙের সুতি, তাঁত বা কোটার শাড়ি কিংবা পাতলা কাজের সিল্ক বা জর্জেট শাড়িও কর্মক্ষেত্রে মানানসই। কর্মজীবী মেয়েরা যে পোশাকই পরুন না কেন পোশাক নির্বাচনের সময় মাথায় রাখবেন আপনার পোশাকটি যেন মার্জিত রুচির হয়। পোশাক থেকে সাজগোজে কখনই যেন উগ্রতা প্রকাশ না পায়।

 

কর্মে ব্যস্ত থাকা নারীদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সফলতা আনয়নে রুচিশীল ব্যক্তিত্ব ধরে রাখা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দিনের বেশিরভাগ সময়ই তাদের থাকতে হয় অফিসে। এ সময় সহকর্মীদের সঙ্গে আচরণ হতে হবে যুক্তিযুক্ত। বোঝার চেষ্টা করুন সহকর্মী লোক হিসবে কেমন, কাজে কতটা দক্ষ এবং কতটা সাহায্যকারী। দুষ্টু লোকের মতিগতিও আপনাকে বুঝে নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে। কাজ করার স্বার্থে অনেক পুরুষের সঙ্গে আপনার সখ্য গড়ে উঠবে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এটি যেন এমন কোনো বাড়াবাড়ি পর্যায়ে না যায়। কারণ এসব বিষয় আপনার ইমেজকে নিচে নামিয়ে দেবে।

 

অফিসে একজন ভালো বস বা স্টাফ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে কে না চায়? নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে চলে যান সেই ছোট্ট বেলাটির স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মানসিকতায়। আপনার উদ্দেশ্যই হবে ভালো কাজ দিয়ে অন্যদের মাঝে নিজেকে অন্যতম করে তোলা।

 

অফিসের সহকর্মীর সঙ্গে অবশ্যই অর্থনৈতিক কোনো না কোনো লেনদেনের সম্পর্ক হয়ে যায়। এর থেকে শুরু হয় খারাপ সম্পর্কের। অনেকের ভালো সম্পর্কের সূত্রটাও এখান থেকেই হয়। তবে সবচেয়ে ভালো এই সম্পর্কে না জড়ানো। ক্ষতি নেই যদি আপনি সহনশীল হয়ে থাকেন। ধার দেওয়ার জন্য মানসিকতা তৈরি করুন এমনভাবে, যেন তিনি সেই টাকা ফেরত না দিলেও আপনার কোনো ক্ষতি না হয়।

 

পারিবারিক বিষয়ে অফিস কলিগদের সঙ্গে আলাপ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। মজা করার অনেক কিছুই আছে। নিজের পরিবারের বিষয় এড়িয়ে অন্যকিছু নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। মজা করার ছলে পারিবারিক বিষয়ে আলাপ করলে একদিন আপনিই আলোচনার বিষয়ে পরিণত হবেন। তাই বিরত থাকুন। ব্যক্তিগত কোনো কথা কখনো কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। নিজের পরিবারের নেতিবাচক কথা কারো সঙ্গে আলাপ করতে গেলে আপনাকে অবশ্যই ছোট হতে হবে কোনো না কোনো সময়।

 

অফিসে কেউ কারও সম্পর্কে সমালোচনা করছে আপনারই সামনে। নিজেকে সেই আলোচনা থেকে বিরত রাখার মতো বুদ্ধিমানের কাজ আর কিছুই হতে পারে না। এতে করে সমালোচনাকারীদেরও আপনার সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা তৈরি হয়ে যাবে।

যদিও ভুল করা মানুষের অভ্যাস। কারও ভুল ধরা পড়লে অন্য কারও কাছে নিজের সহকর্মীকে হেয় প্রতিপন্ন করবেন না। এক্ষেত্রে আপনি বিশ্বস্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। এটাকে কাজে লাগান। কিন্তু ক্ষতি করতে গিয়ে সবার চোখে খারাপ হয়ে যাবেন না।

 

একজন ব্যক্তিত্ববান নারী কখনো অযথা বিতর্কে জড়াতে পারে না। তাই বিতর্কের বিষয় ঘটলে এড়িয়ে যাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। যিনি হজম করতে পারেন না তাকে পাশ কাটিয়ে যান। তাছাড়া বিতর্ক না করে বুদ্ধি দিয়ে সমাধান করাই ভালো।

 

এ ছাড়াও রাজনীতি বা ধর্ম নিয়ে ব্যক্তিগত মতামত জাহির করাও বোকামি। বাড়াবাড়ি করা তো আরও বোকামি। তাই বদঅভ্যাসগুলো থাকলে আজই বিদায় দিন। এতে আপনি হবেন ব্যক্তিত্ববানদের একজন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর