শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফ্রুট ম্যাজিক!

ফ্রুট ম্যাজিক!

♦ মডেল : পিউলি ♦ মেকওভার : পারসোনা ♦ পোশাক : জেন্টল পার্ক ♦ ছবি : মঞ্জুরুল আলম

আগেরকার দিনে রানী-রাজকন্যাদের নিয়মিত রূপচর্চার সামগ্রী ছিল দুধ, কাঁচা হলুদ, গোলাপজল আর মধু। সঙ্গে যোগ হতো নানা রকমের মৌসুমি ফল। এসবের গুণে ত্বক ও চুল হয়ে উঠত সুন্দর।  মোদ্দাকথা, প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চায় ফলের বিকল্প নেই। ঘরে বসে নিজে তৈরি করে নিতে পারেন বিউটি ট্রিটমেন্ট। জানাচ্ছেন— ফেরদৌস আরা

 

প্যাচপ্যাচে গরম বা রুক্ষ শীত, ত্বকের যত্ন চাই সবসময়ই। রূপ বোদ্ধাদের মতে, ত্বক সুন্দর ও সতেজ রাখতে সপ্তাহে তো বটেই, রোজকার রুটিনে অল্প কিছু সময় হলেও বের করে রাখা উচিত। এক্ষেত্রে বারোমাসি ফলের পাশাপাশি মৌসুমি ফলের ওপরও জোর দিয়েছেন সবাই। আর এই রূপ এক্সপেরিমেন্ট সম্ভব ঘরে বসেই। এসব ফলমূল ত্বকের নমনীয়তা বজায় রাখার পাশাপাশি ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে।

অফিস, মিটিং, বাড়িতে সাংসারিক হাজারো চাপ; সব মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা। দৈনন্দিন জীবনে স্ট্রেস, ক্লান্তি যার সরাসরি প্রভাব পড়ে ত্বক ও চুলে। ফলত ডার্ক সার্কেল, এজিং, ডার্ক ফেস, ব্ল্যাক হেডস, খুশকি, চুল পড়া আরও কত সমস্যা! এর থেকে মুক্তি পেতে দশ থেকে আশি সবারই চাই সঠিক ট্রিটমেন্ট।

 

সুন্দরীদের প্রিয় বিউটি জোন পারসোনার পরিচালক ও বিউটি এক্সপার্ট কানিজ আলমাস খান বলেন, ‘রূপচর্চায় মৌসুমি ফল বেশ উপকারী। ফল খাওয়া এবং রূপচর্চায় ব্যবহার, দুটোই একসঙ্গে করা বেশ ভালো।’ 

 

আজকাল বাড়িতে আপেল, কমলা, আঙ্গুর, পেঁপে, কলার মতো বারোমাসি ফল সবাই রাখেন। মৌসুম এলে আম, লিচু, তরমুজ, বাঙ্গি, লিচুতে সয়লাব থাকে ঘর। সেখান থেকেই টুকিটাকি জিনিস দিয়ে মেইনটেন করা সম্ভব নিজের বিউটি রেজিম। আর তা থেকেই অনায়াসে পেয়ে যেতে পারেন মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্যার সমাধান। তবে হ্যাঁ, প্রত্যেকের সমস্যা আলাদা এবং সমস্যার জন্য চাই আলাদা আলাদা সমাধান। তাই ত্বক এবং চুলের সমস্যা বুঝে রইল বিস্তারিত সমাধান।

 

শুষ্ক ত্বকের জন্য কলা বেশ উপকারী। ত্বককে শুধু ময়েশ্চারাইজই করে না হাইড্রেটও করে। একটি পাকা কলা চটকে ২ টেবিল চামচ মধু, ২ টেবিল চামচ গ্লিসারিন, একটা ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে ফেস মাস্ক তৈরি করে মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের মরা কোষ, ধুলোময়লা দূর করতে সাহায্য করে কলার মাস্ক। আর হ্যাঁ, মুখ ধোওয়ার পর অবশ্যই শুকনো তোয়ালে দিয়ে মুছে নিয়ে ক্রিম লাগিয়ে নিন। এতে ত্বক একেবারে মসৃণ হয়ে উঠবে। শুধু তাই নয়, হাঁটু, কনুই বা ত্বকের যে কোনো কালো দাগছোপ দূর করতে পাকা কলা অনেক কার্যকরী।

 

আপেল শুধু খাওয়ার জন্যই নয়, রূপচর্চাতেও আপেলের ভূমিকা কম নয়। আপেলের অ্যান্টিএজিং প্রপার্টি ত্বকের বলিরেখা দূর করে আপনাকে রাখবে সতেজ। এক-দুই টুকরো আপেল বাটা নাও। এতে ১ টেবিল চামচ গরম দুধ, ১টি ডিমের কুসুম, ১ টেবিল চামচ ওটমিল, ১ চা-চামচ মধু, ১ চা-চামচ লেবুর রস এবং সামান্য ময়দা মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্ক ত্বককে আগের চেয়ে উজ্জ্বল করবে। এতে থাকা ভিটামিন সি চামড়া টানটান করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, ডার্ক সার্কেল, অ্যাকনে সমস্যা দূর করে অনায়াসেই।

 

ত্বকের দাগছোপ দূর করতে কমলালেবু ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এটি ত্বক ক্লেনজারের পাশাপাশি ত্বককে ময়শ্চার করতেও বেশ কার্যকরী। এর সঙ্গে সামান্য দই মিশিয়ে সারা মুখে (ঠোঁট ও চোখের চারপাশ বাদে) ভালো করে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ভিজা হাতে ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার পর কমলালেবুর রস, গোলাপজল ও মধু মিশিয়ে তুলোয় ভিজিয়ে মুখে হালকা করে লাগান। শুকিয়ে গেলে ভিজে তুলা দিয়ে মুখ মুছে নিন। এতে ব্লাড সার্কুলেশন ভালো হবে। শুধু ত্বকে নয়, চুলের জন্যও কমলালেবু খুবই উপকারী। কমলালেবু ভালো করে চটকে নিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন। এর খোসা নিয়ে হালকা হাতে স্ক্যাল্পে ঘষুন। আধা ঘণ্টা রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খুসকি দূর হয়ে যাবে।

যে কোনো ত্বকের জন্যই স্ট্রবেরি খুব ভালো। স্ট্রবেরিতে থাকা আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডে ত্বকের মরা কোষ ঝরে যাবে। কয়েকটা স্ট্রবেরি সামান্য চটকে সঙ্গে সামান্য ফ্রেশ ক্রিম বা দই এবং এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে নিন। সপ্তাহে তিন দিন এই মাস্ক মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হবে। সানট্যানের সমস্যা দূর করতেও স্ট্রবেরি দারুণ কার্যকরী। স্ট্রবেরির সঙ্গে সামান্য চালের গুঁড়ি, কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে মুখ, গলা, কাঁধ ও পিঠে লাগাতে পারেন। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের জেল্লা ফিরে আসবে।

 

পাকা পেঁপে যে ত্বক সুন্দর রাখতে কতটা উপযোগী, অনেকেই তা জানেন না। এতে থাকা ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি-তে ত্বকের বলিরেখার সমস্যা, অনুজ্জ্বল ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পাকা পেঁপে টুকরো করে কেটে ভালো করে চটকে নিন। এতে সামান্য দুধ, তিন-চার ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন, শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের ক্লান্তি কাটিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবে।

 

মুলতানি মাটির সঙ্গে আঙ্গুরের রস মিশিয়ে নিন। ইচ্ছা হলে এতে লেবুর রস, গোলাপ জল দিতে পারেন। ফ্রেশ উজ্জ্বল ত্বক পাবেন। আঙ্গুরের রসে তুলা ভিজিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে লাগালে চুলের গোড়া মজবুত হবে আর মসৃণ হবে। এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, কে, বিওয়ান, বি সিক্স ত্বক ও চুলের জন্য খুব ভালো।

 

গরম এলেই সবার ঘরে ঘরে থাকে তরমুজ। এটি ডার্ক সাকেলের সমস্যা দূর করে। তরমুজ হাত দিয়ে সামান্য চটকে নিয়ে চোখের তলায় লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর ভিজা তুলা দিয়ে মুছে নিন। দিনের যে কোনো সময়ে ব্যবহার করতে পারেন। শুধু তাই নয়, মুখের ছোপ ছোপ দাগ কমাতেও তরমুজ বেশ কার্যকরী। তরমুজের রসের সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে মুখে ও গলায় লাগান। ১০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাক ত্বককে হাইড্রেট করে আস্তে আস্তে আপনার স্কিনটোন লাইট করতে সাহায্য করবে।

অ্যাভোকাডোয় থাকা ভিটামিন ই ও সি ন্যাচারাল সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে। দুটো অ্যাভোকাডো ভালো করে চটকে নিন, এতে ১/৪ কাপ মধু, লেবুর রস ও ১/৪ কাপ নারিকেল তেল মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে মুখে, গলায় ও পিঠে লাগিয়ে নিন। আধা শুকনো হলে ভিজে হাতে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। চুলের জন্যও অ্যাভোকাডো খুব ভালো। চুলের আগা ফাটার সমস্যা থাকলে অ্যাভোকাডো ভালো করে চটকে সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ, সামান্য অলিভ অয়েল, মধু মিশিয়ে নিন। হেয়ার মাস্ক হিসেবে দারুণ কাজ করে। প্রথমে চুলের ডগায় লাগিয়ে তারপর পুরো চুলে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে নিন। এই মাস্ক চুল মজবুত হবে ও উজ্জ্বলতা বাড়বে।

 

আমের মধ্যে থাকা ভিটামিন বি ও সি ত্বকের ডিপ ক্লিনজিং করে। পাকা আমের কাথের সঙ্গে ওটমিল দিয়ে  মিশ্রণ তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এই মাস্ক রোদে পোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করবে।  হাত ও পায়ের মরা কোষ তুলতে প্যাকটির সঙ্গে চালের গুঁড়া মিশিয়ে নিতে পারেন।

 

ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে শসার কোনো বিকল্প নেই। একটা শসা ভালো করে কুরে আধা কাপ টক দই ও আধা কাপ ওটমিলের সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে মুখে ও গলায় লাগিয়ে শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।  এটি ত্বকের বলিরেখা কমায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর