শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাঞ্জাবি-কামিজে বৈশাখ

পাঞ্জাবি-কামিজে বৈশাখ

♦ মডেল : রাজ আরিয়ান ও জারাশ্রী ♦ পোশাক : ইজি ও পরশ ♦ ছবি : শওকত মোল্লা ♦ মেকওভার : বিন্দিয়া

রঙিন বৈশাখ, রঙিন দিন। উৎসবকেন্দ্রিক মুহূর্ত। আর এই উৎসবে চলনে-বলনে চাই বাঙালিয়ানা। যার বিশাল অংশজুড়ে ট্রেন্ডি সব পোশাকের সমারোহ। এথনিক এবং পাশ্চাত্যের ফিউশনে বাঙালি ঐতিহ্যের ছোঁয়া। লিখেছেন— ফেরদৌস আরা

 

নববর্ষের সকাল। চাই নতুন জামা। আর বাঙালিয়ানার ঐতিহ্য পাঞ্জাবি। সেই পাঞ্জাবি পরে অলিতে-গলিতে ঘোরাঘুরি, হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দে মেতে ওঠা।

 

বৈশাখে পাঞ্জাবি ছাড়া বাঙালি ছেলেদের উৎসবে পড়ে ভাটা। অন্যদিকে শাড়ি পরতে অনীহা করা মেয়েদের বৈশাখের প্রথম ভরসা সালোয়ার-কামিজ। পাঞ্জাবি আর সালোয়ার-কামিজ শুধু পয়লা বৈশাখের ঐতিহ্যই নয়, আরামের ভূষণ। আরামদায়ক এই পোশাকগুলোতে গত কয়েক বছর থেকে চলছে রঙের খেলা। লাল-সাদায় এখন আর আবদ্ধ নেই বৈশাখের পাঞ্জাবি আর সালোয়ার-কামিজ। সিঙ্গেল রঙের পাশাপাশি মিক্সড অ্যান্ড ম্যাচিং ট্রেন্ডও চলছে সদর্পে। তাই তো বৈশাখের রংকে আরও রঙিন করে তুলতে ব্যস্ত নগরীর ফ্যাশন হাউসগুলোর ফ্যাশন বোদ্ধারা।    

 

বরাবরের মতো এবারও দেশি পোশাক সংস্কৃতিকে বিবেচনায় রেখে ফ্যাশন হাউসগুলো সাজিয়েছে তাদের বৈশাখী পসরা। এই সময়, প্রকৃতির অবস্থা, পারিপার্শ্ব, আবহাওয়াও পোশাকের উপকরণ নির্বাচনে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। অনেক দেশি ফ্যাশন হাউস পাশ্চাত্যের ফিউশনে সাজিয়েছে পাঞ্জাবি আর সালোয়ার-কামিজের জমিন। এবারের বৈশাখে অনেক ডিজাইনার উৎসবের পোশাকে দিয়েছেন গ্রামীণ ঐতিহ্যের ছোঁয়া। পোশাকের থিম হিসেবে বেছে নিয়েছেন হাঁড়ি, শীতল পাটি, সাঁওতালদের দেয়ালচিত্র, মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ অসংখ্য লোকজ পটচিত্রের নকশা।

 

এবারের বৈশাখে লাল-সাদার আদিখ্যেতা নিয়ে পরশ ফ্যাশন ডিজাইনাররা বলেন, ‘বৈশাখ মানে লালা-সাদা। এর বাইরেও তারুণ্য বেছে নিচ্ছে কমলা, হলুদ, সবুজ, বেগুনি এবং নীল-শুভ্র রং। তাই গত কয়েক বছর বৈশাখের পোশাকে দেখা গেছে রঙের খেলা। এ বছর কিছুটা ব্যতিক্রম। লাল-সাদাতেই আস্থা রাখছেন দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোর অসংখ্য ডিজাইনার।’

 

বৈশাখ মানেই কাঠফাটা রোদ্দুর আর গরম। বৈশাখের তপ্ত আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে ফেব্রিকেশনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রাণের এই উৎসবে যেন ভাটা না পড়ে তাই পাঞ্জাবি ও সালোয়ার-কামিজের ফেব্রিক হিসেবে আরামদায়ক সুতি, ভিসকস কিংবা লিলেন কাপড় ব্যবহৃত হয়েছে বেশির ভাগ পোশাকে। তবে এসবের বাইরেও তাঁত, সিল্ক, হাফ সিল্ক এবং মসলিনের মতো ফেব্রিকের ব্যবহার করা হয়েছে কিছু পোশাকে।

 

সেই সঙ্গে বিভিন্ন অনুসঙ্গ যোগ করা হয়েছে পোশাকের উৎসব আমেজকে বাড়িয়ে তুলতে। বিভিন্ন পুঁথি বাটন, টাসেল কিংবা পমপম ব্যবহারে পোশাকে এসেছে উৎসবের আমেজ। বোহেমিয়ান ঘরানার এসব পোশাকে যোগ হয়েছে নতুন প্যাটার্ন ও সিলহোটি। তাছাড়া পোশাকের হাতায় এসেছে নসর্ট সমাহার। ৭০ দশকের বেল স্লিভ পেয়েছে নতুন মাত্রা। এ ছাড়াও জাপানিজ লুজ ফিটেড স্লিভ, ট্রাম্পেড স্লিভ, পাফ স্লিভ পোশাকে এনেছে নতুনত্ব। দৈনন্দিন জীবনধারা ফুটে উঠেছে পোশাকের নকশায়। শহুরে রাস্তায় রিকশা ভ্রমণ থেকে শুরু করে গ্রামবাংলার হারিকেনও ঠাঁই পেয়েছে ট্রেন্ডি এসব পোশাকে। বিভিন্ন ট্রাইবাল মোটিফ ও ফোক মোটিফের ব্যবহার পোশাকগুলোকে করেছে প্রাণবন্ত। অনেক ফ্যাশন হাউস আবার হাঁড়ি, শীতল পাটি, সাঁওতালদের দেয়ালচিত্র, মঙ্গল শোভাযাত্রা থিম ছাড়াও কয়েক বছরের পঞ্জিকা থিমের বেশকিছু আইটেম করা হয়েছে ক্রেতা চাহিদার কথা মাথায় রেখে।

 

কাটিং, ফিনিশিং এক্সেসরিজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন নিয়ে করা হয়েছে এবারের বৈশাখের পোশাক। বাটন প্লেট, কলার ও হাতার মহুরীতে করা হয়েছে নানা ধরনের পাইপিন, এমব্রয়ডারি এবং হাতে আঁকা নকশা। সুতি, এন্ডি ও সিল্কে হাতের কাজ ও এমব্রয়ডারি কাজের পাঞ্জাবি এবং সালোয়ার-কামিজে থাকছে সাদা, লাল, মেজেন্টা, কমলা, গোল্ডেন, হলুদ, নীল, গেরুয়া, ফিরোজা, অ্যাশ, বিস্কুট, বেগুনি, মেরুন, ব্রিকরেড, কালোসহ নানা রঙে। কাট হিসেবে এবার চলছে স্লিম ফিট ও রেগুলার ফিট। যা দেখতে এথনিক এবং পাশ্চাত্যের ফিউশনে তৈরি। জ্যামিতিক নকশায় তৈরি এসব পোশাক সব বয়সীর পছন্দের।

 

বৈশাখের পোশাকের দাম এবার তুলনামূলক কিছুটা কম, এমনটাই জানালেন বিক্রেতারা। ১ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। সিঙ্গেল কামিজ ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ছাড়াও বসুন্ধরা শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্ক, পিংক সিটি এবং শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর