শিরোনাম
শুক্রবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
অনুষঙ্গ

হালখাতা পরম্পরা

হালখাতা, বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্য। প্রযুক্তির কল্যাণে এর ঐতিহ্য হারিয়ে গেলেও হালখাতার আয়োজন এখনো চোখে পড়ার মতো। এটা নিছক হিসাবের খাতা হালনাগাদ নয়, ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কও গড়ে তোলে।

মোহাম্মদ সুজন

হালখাতা পরম্পরা

হালখাতা; নববর্ষের অন্যতম বড় আয়োজন। সারা বছরের হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে বৈশাখের প্রথম প্রহরে ব্যবসায়ীরা নতুন হালখাতা শুরু করেন। হালখাতার আনুষ্ঠানিকতায় ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে গড়ে ওঠে হৃদ্যতার বন্ধন। বিক্রেতা হাসিমুখে মিষ্টিমুখ করান। বাংলার ঐহিত্য আর সংস্কৃতিতে এই রেওয়াজ চলে আসছে শত শত বছর ধরে।  

 

পয়লা বৈশাখে কিংবা তার পরে সুবিধাজনক দিনক্ষণ বেছে নিয়ে ব্যবসায়ীরা আয়োজন করেন হালখাতা। প্রযুক্তির কল্যাণে হালখাতার ঐতিহ্যে ভাটা পড়লেও ব্যবসায়ীরা আজো উৎসবে বরণ করে নেয় হালখাতা। হালখাতার আয়োজনে বিক্রেতারা ক্রেতাদের বর্ণিল কার্ডের মাধ্যমে নিমন্ত্রণ করে থাকে। এই দিনে সাজানো থাকে দোকানপাট। তাজা ফুল, কাগজের ফুলসহ নানা কিছু ব্যবহার হয় তাতে।

 

ঢাকার চকবাজার, তাঁতীবাজার, আলুবাজার, শাঁখারীবাজার, বাংলাবাজার, শ্যামবাজারসহ রাজধানী শহরের বিভিন্ন এলাকায় হালখাতার আয়োজন এখনো চোখে পড়ার মতো। নতুন বছরের আয়োজনটিকে এখনো অনেক এলাকায় পালন করা হচ্ছে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে। আলুবাজারের স্যানিটারি ব্যবসায়ী মিন্টু সরকার বলেন, ‘বাঙালির এই ঐতিহ্য আজো পালন করা হচ্ছে স্বগৌরবে। এটা আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের কাছে উৎসব। মিষ্টিমুখ, আর কোলাকুলি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছাড়াও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বাড়ায়।’   

 

শাঁখারীবাজারের  গোল্ড ব্যবসায়ী শংকর দাস বলেন, ‘অনেক আগে থেকে আমাদের পারিবারিক ব্যবসায় এই রেওয়াজ চলে আসছে। ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করানো থেকে শুরু করে হালখাতা খোলা, পূজা আর উৎসবের নানা আয়োজন থাকে এই হালখাতায়।’

বর্তমানে হালখাতার আয়োজনে মিষ্টি তো থাকছেই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নানান মুখরোচক খাবার। ক্ষির, হালিম, কোমল পানীয় থেকে শুরু করে অনেকে বিরিয়ানি বা তেহারির ব্যবস্থাও করে থাকে হালখাতার আসরে। বর্তমানে ক্রেতাদের আপ্যায়নে এসেছে ভিন্নতা। কোনো কোনো ক্রেতার জন্য বানানো হয় মিষ্টির আলাদা বক্স যা ওই ক্রেতার বাসায় পাঠানো হয়। এ ছাড়া হালখাতায় খাওয়ানো হয় কোল্ড ড্রিংস, মিষ্টি, বেকারির খাবার ও মৌসুমি ফল।

হালখাতার হালচাল

হালখাতার সবচেয়ে বড় পসরা দেখা যায় পুরান ঢাকার বাংলাবাজারে। এ ছাড়াও নিউমার্কেট, নীলক্ষেতসহ বড় স্টেশনারি দোকানগুলোতে মিলবে লাল মলাটের হালখাতা। পয়লা বৈশাখের দুই দিন আগে থেকে রাস্তার পাশে বা দোকানের সামনে নতুন খাতা, শীতলপাটি ও মাটির আসবাবপত্র নিয়ে থরে থরে সাজিয়ে বসেন অনেক দোকানি। ছোট-বড়, মোটা কিংবা চ্যাপ্টা সব ধরনের হালখাতাই পাওয়া যায় এই দোকানগুলোতে। সাধারণত ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয় একেকটি হালখাতা।

হালখাতা অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানাতে কার্ডের প্রচলন আগেও ছিল এখনো আছে। দুই মলাটের অতি সাধারণ কিন্তু বৈশাখে বর্ণিল নকশায় ছাপা হরেক রকম কার্ডের নমুনা শোভা পাচ্ছে এখন বাংলাবাজারের কার্ড বিক্রির দোকানগুলোয়। এ ছাড়া নতুন রূপে দোকানকে সাজাতে ব্যবসায়ীর থাকে তাড়া। বর্ণিল ফুলের সাজ তো থাকেই, থাকে নকশাকাটা ককশিটের উপস্থিতিও। ‘শুভ নববর্ষ’ বা ‘শুভ হালখাতা’ নাম সংবলিত ককশিটও চোখে পড়ে দোকানে দোকানে। মিলবে ফুল বিক্রির দোকানে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর