শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঈদ পোশাকে বৈচিত্র্য

ঈদ  পোশাকে  বৈচিত্র্য

♦ মডেল : জাকিয়া মুন ও বৃষ্টি ♦ ছবি : মুনতাকিম ♦ মেকআপ : পলাশ ♦ পোশাক : রঙ বাংলাদেশ (ওয়েস্ট রঙ)

ঈদ নিয়ে ছেলে-বুড়ো সবারই থাকে মাতামাতি। সামর্থ্যবান হোক আর না হোক প্রত্যেকেরই চেষ্টা থাকে নিজেকে পোশাক-আশাকে সুন্দর করে সাজানোর। বাজেট কম বা বেশি যাই হোক সবার চিন্তাই থাকে ঈদ কেন্দ্রিক। আধুনিক ফ্যাশন আর আদিকালের আদিখ্যেতা যাই বলি না কেন, উৎসবের পোশাকে থাকা চাই বৈচিত্র্য। লিখেছেন— ফেরদৌস আরা

 

রোজা শুরু হতে না হতেই শপিংমলগুলোতে লেগেছে ভিড়। ঈদের কেনাকাটায় মেতে উঠেছে নগরবাসীসহ সারা দেশ। আর তা টের পাওয়া যায় বাইরে বেরোলেই। কারও পছন্দ বারো হাতের শাড়ি, কারও বা সালোয়ার কামিজ। কেউ দামি গাউন, লেহেঙ্গা ও শর্ট কামিজ, টপস এমনকি টি-শার্ট ছাড়া অন্য কিছুই ভাবতে পারছেন না। লক্ষ্য কিন্তু একটাই- ঈদে চাই নতুন পোশাক। আর তা অবশ্যই হতে হবে রুচিশীল ও চমকপ্রদ। দিন বদলে ফ্যাশনে ওয়েস্টার্ন ঠাঁই পেলেও শাড়ি-সালোয়ার কামিজ এখনো অমলিন।

 

ফ্যাশন সময়েরই প্রতিনিধিত্ব করে। ঘুরে-ফিরে আসা পুরনো দেশীয় ফ্যাশনে নতুনত্ব আনতে ফ্যাশন ডিজাইনাররা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছেন। বিদেশি ফ্যাশন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবে বদলাচ্ছে মানুষের ফ্যাশন বিষয়ক চিন্তা-ভাবনা। ঈদ বা উৎসবগুলোতে তার প্রমাণই মেলে। দেশীয় পোশাকে আন্তর্জাতিক উপকরণ আর নকশার মিশ্রণে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডগুলোর আউটলেট। যেহেতু ঈদ, তাই পোশাকে থাকবে রং, কাট ও আধুনিকতার মিশেল।

 

রঙ বাংলাদেশ-এর পরিচালক শৌমিক দাস বলেন, ‘সময় বদলেছে। প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে ফ্যাশন ট্রেন্ড এবং কাট। ইন্টারনেটের প্রভাবে তরুণীদের হাল ফ্যাশনে লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। আর তা উৎসব-পর্বণে সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। পাশ্চাত্যের ঢঙে সেজে উঠতে চান অনেক তরুণী। সেই তালে তাল মিলিয়ে চলতে চান মধ্য বয়সী অনেক নারীও। কিন্তু তাই বলে তো বাঙালিয়ানা ভুলে নয়। তাই দেশীয় আর পাশ্চাত্যের ঢঙে সাজানো হয়েছে আমাদের ওয়েস্ট রঙ-এর ঈদ কালেকশন।’

 

শহুরে তরুণীরা উৎসবে ওয়েস্টার্ন লুকে হাজির হতে চান। এখনকার ঈদে সিঙ্গেল কামিজ, পালাজ্জো, ন্যারো শেপ প্যান্ট, লেগিংস বা স্কার্টে নিজেকে ধরা দিয়ে থাকে অনেক উঠতি বয়সের তরুণী। শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ না পরে অনেকে ধুতি-সালোয়ার, ট্রাউজারের সঙ্গে বেছে নিচ্ছে রকমফের টপ। মাঝে সাঝে শার্ট, টি-শার্টে মেতে ওঠেন অনেক তরুণী। স্লিভ ডিজাইনে বৈচিত্র্য নিয়ে স্লিমফিট কাটের পোশাক বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। সঙ্গে চামড়ার জুতো, বেল্ট আর এক্সেসরিজে পাল্টে দিয়েছে বর্তমান সময়ের তরুণীদের ফ্যাশন ট্রেন্ড।

 

ঈদে নারীদের শাড়ির কদর একাল-ওকাল সব কালেই একই রকম। সেদিক থেকে বরাবরই শাড়ি প্রাধান্য পায় অন্য পোশাক থেকে ছাড়িয়ে। বাঙালি নারীর অঙ্গে ঈদের কেনাকাটায় বাজারেও হাজির হয় নানা রকমের শাড়ি। বর্তমানে তো মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের হুজুগ? কাঁথা, ব্লক, অ্যাসিড পেইন্ট সবাই একসঙ্গে শাড়িতে একটাই করছে। এতেই শাড়িতে উঠে আসছে অনবদ্য সৌন্দর্য। বেশ কিছুকাল আগেও শুধু কটনই ছিল ঈদের শাড়ি। সঙ্গে যুক্ত হতো মসলিন, জামদানির বাহার। বর্তমানে সেই আদল বদলে জরি, পুঁতি, চুমকির আলোড়নে তৈরি করা হচ্ছে আটপৌরে মসলিন, জামদানি, বেনারসি আর জর্জেটের সাম্রাজ্য। রঙে এসেছে ফেস্টিভ লুক। সামান্য লাবণ্যময় সাজ ঈদের সকাল-বিকালকে করে তুলবে বাজিমাত।

এবার ঈদে ডিজাইন বৈচিত্র্য কম থাকলেও গতানুগতিক সালোয়ার কামিজ ছাড়াও অনেকেই পরছেন প্যাটার্ন ভিন্নতার পোশাক। ফেব্রিক ভেরিয়েশনের পাশাপাশি এতে থাকছে প্রাচীন ভারতীয় ও মরোক্কান ঐতিহ্যের ছোঁয়া। কামিজের ঘের হচ্ছে নানা রকম। সম্ভবত দেশি ধাঁচের পোশাকগুলোই ঈদের প্রথম দিনে বেশি পরা হয়। তবে ঈদ পোশাকের তালিকায় যে পাশ্চাত্য পোশাকও থাকবে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করলেন অনেক ডিজাইনার।

 

ফ্যাশন বোদ্ধাদের মতে, কাপড় যেমনই হোক না কেন, এর কাটিং আর প্যাটার্নে পশ্চিমা প্যাটার্ন রাখাটা যেন হাল আমলের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। তবে এই ঈদে গরমের জন্য হালকা রংগুলো পোশাকে এনেছি। থাকছে কারচুপি, অ্যামব্রয়ডারি, সিকোয়েন্স, ডিজিটাল প্রিন্টসহ নানারকম নিরীক্ষাধর্মী কাজ। তরুণীরা উজ্জ্বল রঙের পোশাকের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বেশি। তুলনামূলকভাবে বয়স্করা আরামটাকে বেশি প্রাধান্য দেন। তবে আপনি কীভাবে এক্সেসরিজ ব্যবহার করেন পোশাকের সঙ্গে। আর ফ্যাশনে এখন কাপড়ের বৈচিত্র্যতা বা আরামদায়ক কিনা এবং কাটিংটা কতখানি ট্রেন্ডি সেটিও বিবেচ্য। নতুন কাপড়ের মধ্যে রয়েছে সিকোয়েন্স, ডিজিটাল, জুমার, লামলাম কটন, লেদার প্রিন্টসহ নানা ধরনের কাপড়। এর মধ্যে সিকোয়েন্স কাপড় বেশ গর্জিয়াস। ইন্ডিয়ান কটন রয়েছে কয়েক ধরনের। ইন্ডিয়ান কটনগুলোর পাড়ে চওড়া অ্যামব্র্রয়ডারি ও হাতের কাজ করা। ভেলভেট কাপড়ে জর্জেটের ওপর নকশা করা হয়েছে ভেলভেট দিয়ে। সিল্ক, সিফন বা কটনের মধ্যেও রয়েছে চোখ ধাঁধানো নানা ডিজাইন।

 

বাহারি কুর্তা নামে ইন্ডিয়া, পাকিস্তানের পোশাক হলেও বাংলাদেশি মেয়েদের কাছে জনপ্রিয় একটি পোশাক। ফ্যাশনের এ অন্যতম অনুষঙ্গটি সব বয়সীদের পছন্দের শীর্ষে। কুর্তা আরামদায়ক ও বেশ ঢিলেঢালা। কুর্তার আদলে নানা রঙে ঢঙে নিজেকে সাজিয়ে তোলা সম্ভব। ক্যাজুয়াল অথবা ফরমাল যে কোনো স্টাইলের সঙ্গেই এই পোশাকটি বেশ মানানসই। তাই তো এবারের ঈদে জিন্স, লেগিংস ছাড়া ঢিলা সালোয়ারের সঙ্গেও কুর্তা বেছে নিচ্ছেন উঠতি বয়সের তরুণীরা। এ ছাড়া কামিজেও ফ্যাশনেবল লুক আনা যায় খুব সহজেই। শুধু মানানসই রং আর ডিজাইনের সালোয়ার ও ওড়না জড়ালেই আপনি হয়ে উঠতে পারেন অনন্য। রোদ-বাদলের খেলায় কামিজের কাপড়ে হিসেবে বেছে নিতে পারেন সুতি, এন্ডি কটন, তাঁত, হাফ সিল্ক, সিল্ক ইত্যাদি। তবে রেগুলার ডিজাইনের পোশাকেই সবার আগ্রহ বেশি। তাই ঢিলে সালোয়ার বা পালোজ্জার সঙ্গে মানানসই করে পরা যায় লং কামিজ বা শর্ট কামিজ।

 

বিভিন্ন কাটের সুতি কাপড়ের কুর্তা বেছে নিতে পারেন। কামিজের ক্ষেত্রেও বেছে নিতে পারেন সুতি কাপড়। সুতার কাজ করা, ব্লক, অ্যামব্রয়ডারি, টাইডাই করা পোশাকে আপনাকে লাগবে অনন্য। এ সময়ের তরুণীরা রঙিন পোশাককে বেশি প্রাধান্য দেন। সবুজ, লাল, হলুদ, ফিরোজা, কমলা, গোলাপি, মেরুন, নীলের মতো উজ্জ্বল রং উৎসবকে করে তোলে আরও রঙিন।

 

পাশাপাশি চলছে লম্বা টপ বা কামিজে অসমান দৈর্ঘ্য অর্থাৎ সামনে বেশি ঘের, পেছনে কম, আবার পেছনে বেশি, সামনে কম ঘেরের নকশার পোশাক। ফতুয়া বা কুর্তায় থাকছে অসমান কাট। গরমের কারণে এবার স্লিভলেস পোশাক বেশ চলছে, তাই কিছু পোশাকের হাতায় নতুনত্ব আনতে করা হয়েছে পাইপিংয়ের ব্যবহার। কামিজ আর টপের লম্বা হাতায় থাকছে লেস। পালাজ্জোর সঙ্গে লম্বা জ্যাকেট বেশ চলবে। স্কার্ট কিংবা পালাজ্জোর ওপরে লম্বা জ্যাকেট বা কেপ বেশ চলবে এবার। ভিতরে আপনি ছোট কুর্তি কিংবা ট্যাংক টপ পরতে পারেন। হাতকাটা ম্যাক্সি ড্রেসের ওপরে লম্বা সামার জর্জেট জ্যাকেট বা কেপ ভিন্নতা আনবে।

 

ঈদকে কেন্দ্র করে পোশাকে অত্যধিক চাকচিক্য এড়িয়েই পছন্দের ঈদ পোশাক বেছে নিচ্ছে অনেক তরুণী। এবার ঈদে কাপড় ও কাটিং বৈচিত্র্য নিয়ে ঈদের পোশাক এনেছে আড়ং, সেইলর, ক্যাটস আই, এক্সট্যাসি, ইনফিনিটি, গ্রামীণ ইউনিক্লো, রঙ বাংলাদেশ (ওয়েস্ট রঙ), ইয়াংকি, অঞ্জন’স, ইয়োলো, জেন্টল পার্ক, আইকনিক ফ্যাশন গ্যারেজসহ বিভিন্ন দেশি লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড। আর ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাকই এনেছে ব্র্যান্ড স্টোরগুলো। কিছু কিছু দোকানে আবার দিচ্ছে উৎসবকালীন ছাড়ের রমরমা সুবিধা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর