শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

দর্জিবাড়ির হালচাল

কাটিং-ফিটিংয়ে ভীষণ স্মার্ট। রং-বেরঙের ফেব্রিকে স্টাইলিশ ও ফ্যাশনেবল ফিটিংয়ের বেস্ট অপশন দর্জিবাড়ি।

নূরজাহান জেবিন

দর্জিবাড়ির হালচাল

♦ মডেল : শিমুল নাহিদ ♦ ছবি : নেওয়াজ রাহুল ♦ কৃতজ্ঞতা : টপটেন

তৈরি পোশাকের ওপর যারা নির্ভর করতে চান না বা যারা নিজের মতো ডিজাইনে পোশাক বানাতে চান তাদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় রোজার শুরু থেকেই। কম ভিড়ে নিজের পছন্দের ডিজাইনে পোশাকে ভিন্নতা আনাই যে উদ্দেশ্য। আর এতে ঈদের পোশাকটি সাজানো যায় নিজের মতো করে। ফরমাল এবং ক্যাজুয়াল; দুই ধরনের ফ্যাশনেই পাল তুলে পোশাকে বৈচিত্র্য এনে দেন দর্জিবাড়ির কারিগররা।

অনেকেই তৈরি পোশাক পছন্দ করেন না। তাই তো দর্জির বাড়িতে ঢু মারা। এতে অবশ্য লাভের পাল্লাটাই বেশি ভারী হয়ে থাকে। কেননা, কম খরচে নিজের পছন্দের ডিজাইন আর ফিটিংয়ে পোশাক বানানোর ক্ষেত্রে এটাই যে বেস্ট অপশন।

ফ্যাশন সদা পরিবর্তনশীল। আর সেই ফ্যাশনের পরিবর্তনের মূল কারিগর দর্জিবাড়ির কারিগররাই। ট্রেন্ড যেমনই হোক, রকমফের ফেব্রিকে কাট-ছাঁটের খেলায় তারাই তৈরি করেন নিজস্ব ফ্যাশন দুনিয়া।

রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল আর শো-রুমগুলোতে ঘুরে দেখা গেল দর্জিদের ব্যস্ততা। শবেবরাতের পর থেকেই দর্জিপাড়ায় শুরু হয় অর্ডার নেওয়া। আর তা চলে ১০ থেকে ১৫ রোজা পর্যন্ত। এ প্রসঙ্গে সানমুন টেইলার্সের কর্মকর্তা মিন্টু জানান, ‘ঈদ সামনে রেখে যেহেতু আগেভাগেই পোশাক বানানোর প্রচুর অর্ডার আসে তাই কারিগরদের ব্যস্তাও থাকে বেশি। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পোশাক তৈরির লক্ষ্যেই ১৫ রমজানের মধ্যে সব ধরনের অর্ডার নেওয়া বন্ধ থাকে।’

রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের দর্জির দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তাদের মধ্যেই একজন সারা আফরিন। তিনি বলেন, ‘ঈদে অনেক সময় নামি-দামি ফ্যাশন হাউসগুলোয় মনের মতো ডিজাইন মেলে না। তা ছাড়া  নিজস্ব স্টাইল ও প্যাশনের কারণেই দর্জিবাড়িতে দৌড়ঝাঁপ। রেডিমেড পোশাকের ফিটিং ও স্ট্রাচিংটা মানানসই না হওয়ায় এখানে নিয়ে আসা। পাশাপাশি নতুন কামিজ তৈরির ইচ্ছা তো আছেই!’

একইভাবে রাজধানীর বাটা সিগন্যাল মোড়ের শো-রুমগুলোতে দেখা গেল ফরমায়েশ পোশাক তৈরির ব্যস্ততা। ফরমাল পোশাকে ঈদ রাঙাতে ১৬ থেকে ৬৬, সব বয়সীদের ভিড় দেখা গেল ফেব্রিক ও টেইলরিং ব্র্যান্ড টপটেন শো-রুমে। স্টাইলিশ প্যান্ট থেকে শুরু করে ফরমাল এবং ক্যাজুয়াল ধাঁচের সব ধরনের শার্টের অর্ডার নেওয়া হয় এসব শো-রুমে। পাঞ্জাবির কাজের মধ্যে চলছে কারচুপি বা জারদৌসি। বুকে ডাবল পকেট, জরি এবং সুতার কাজও করাচ্ছেন অনেকে। শার্ট বা পাঞ্জাবির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য বানিয়ে নিচ্ছেন ফরমাল বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট। শার্টের হাতায় রাখছেন বৈচিত্র্য। বাহারি ডিজাইনের পোশাক তৈরি করতেই নগরীর বড় বড় শো-রুম এবং টেইলার্সগুলোতে ভিড় করছে সবাই।

একইভাবে রাজধানীর মৌচাক এবং গাউছিয়া মার্কেটে দেখা গেল তরুণীদের আনাগোনা। নানা ডিজাইন ও প্যাটার্নে পছন্দের পোশাকটি তৈরি করানোর জন্যই এই দৌড়ঝাঁপ। ক্যাটালগ দেখেও পোশাকের অর্ডার দিচ্ছেন অনেকে। ফ্যাশনে যে পরিবর্তন এসছে, তার প্রমাণ পোশাকের রকমফের কাট। বাহারি ঝুলের জামা বানাচ্ছেন অনেকে। তবে হাতায় রাখছেন ভিন্নতা। তীব্র রোদ থেকে বাঁচতে ফুল হাতা বা থ্রি-কোয়ার্টার হাতার ওপর ভরসা করছেন অনেকে। গরমের কথা মাথায় রেখেই ছোট হাতার দিকেও ঝুঁকছেন অনেকেই। পোশাকের গলার ক্ষেত্রে চলছে রকমফের স্টাইল। সিম্পল ডিজাইন থেকে শুরু করে নানা কাটছাঁটের গলার কাজ চলছে বেশ। পোশাকের পেছনে করছেন চেইন বা হুকের ব্যবহার। অনেকে আবার মাতছেন সামনের মধ্যখানে হিডেন চেইন ট্রেন্ডে। অনেকে স্কার্ট, লং কামিজ, শর্ট কামিজের জন্য বানিয়ে নিচ্ছেন লং কুর্তা বা কটি। শাড়ির ব্লাউজে দেখা যাচ্ছে বাহারি ডিজাইন। তবে পোশাক যেমনই হোক আরামের ফেব্রিকই বেছে নিচ্ছেন সবাই। সুতি, জামদানি, মসলিন, নরম সিল্কের কাপড়ের ব্যবহারই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

নগরীর চাঁদনীচক, গাউছিয়া, পিঙ্ক সিটি, প্রিয়াঙ্গন, মৌচাক মার্কেটসহ এলাকাভিত্তিকও মিলছে দর্জিবাড়ির হদিস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর