শুক্রবার, ৮ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

কুর্তি কামিজে বৈচিত্র্য

কুর্তি কামিজে বৈচিত্র্য

♦ পোশাক : ইয়াং কে (কে-ক্রাফট) ♦ ছবি : বিশ্বজিৎ সরকার

বছরজুড়েই পোশাক বৈচিত্র্যে কুর্তি কামিজের কদর সবার ওপরে। দ্রুত রেডি হয়ে বাইরে যেতে এ ধরনের পোশাকের জুড়ি নেই। ক্লাস, ঘোরাঘুরি, কেনাকাটা এমনকি করপোরেট কালচারেও পোশাকটি নিজের জায়গা করে নিয়েছে গুরুত্বের সঙ্গে। বাহারি সব ডিজাইনের কুর্তি কামিজ শুধু ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবেই নয়, উৎসবেও প্রাধান্য পাচ্ছে। কুর্তি কামিজের এই বৈচিত্র্য নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন— তানিয়া তুষ্টি

 

ছিমছাম ফ্যাশনের প্রতি তরুণদের ঝোঁকটা একটু বেশি। কিছুটা পাশ্চাত্য ঘেঁষা ডিজাইন, আরামদায়ক চলাফেরা আর বৈচিত্র্যময় পোশাক তাদের পছন্দের শীর্ষে। এসব বিষয় বিবেচনা করলে চলতি ট্রেন্ডের কুর্তি-কামিজ প্রথমেই আসে। সব ধরনের আবহাওয়াতে এসব পোশাক উপযোগী।

 

এসব পোশাক দেখতে অনেক বেশি নান্দনিক। কুর্তির সবচেয়ে বেশি নতুনত্ব ডিজাইন প্যাটার্নে। কুর্তি বা লম্বা কামিজের বটমে ইউ, ভি, উল্টা ভি, বোট কাটিং, চওড়া বা স্ট্রেইট প্যাটার্ন ইত্যাদি থাকতে পারে।

 

 

কোনোটি আবার গোল ঘেরওয়ালা। হাতার ডিজাইনে ঢিলেঢালা, কার্ভ স্লিভ, বেল স্লিভ উল্লেখযোগ্য। অপরদিকে গলার ডিজাইনে থাকে সেমি বোট নেক, পোর্ট্রেট, জুয়েল, স্কয়ার, গেদার্ড নেক, সেট ইন স্লিভ নেকের মতো প্যাটার্নেও উন্নত ডিজাইন দেশীয় কামিজে চোখে পড়ে। কুর্তিতে অ্যামব্রয়ডারি, প্রিন্টের কাজ খুব বেশি জমকালো হলে তা বেমানান। তবে বডিতে হালকা কাজ ট্রেন্ডের মধ্যেই পড়ে।

 

এই কুর্তি কামিজগুলো ফতুয়ারই একটি আধুনিক রূপ। এসব পোশাক বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সুতি ভয়েল বা লিলেন ভয়েল কাপড় দিয়ে তৈরি হয়। আর তাই গরমে পরতে বেশ আরামদায়ক। তবে ইদানীং স্ট্রিট ফ্যাশনে গরমের সময়টায় সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি একটি কামিজ বা সিঙ্গেল কুর্তির অনেক কদর। সিঙ্গেল কামিজের ডিজাইন, কাটিং, রংসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়া।

 

 

 

বর্তমান ফ্যাশন ট্রেন্ড অনুযায়ী কামিজগুলোকে লম্বা করা হচ্ছে। এগুলো লম্বা হাতারও হয় আবার স্লিভলেসও পাওয়া যায়। আর কাপড়ের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ভয়েল, লিলেন, ধুপিয়ান, ডবি ফেব্রিক্স। হালকা রঙের সুতি, লিলেন, খাদি আর তাঁত কাপড়ে তৈরি হচ্ছে নকশাদার স্লিভলেস বা কম দৈর্ঘ্যের হাতার কামিজ আর কুর্তা স্টাইলের লম্বা কামিজ।

 

উৎসবের জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে সিল্ক, মসলিন, অ্যান্ডি সিল্ক, তসর, নেট, জর্জেটসহ নানা গর্জিয়াস কাপড়। কামিজ বা কুর্তার ক্যানভাসে নকশা করা হচ্ছে কারচুপি, স্প্রে, সিকুইনসহ নানা মাধ্যমে। মূলত স্লিভলেস পোশাক টিনএজার ও তরুণীদের ভালো মানায়। কুর্তা স্টাইলের লম্বা কামিজ বা সিঙ্গেল কামিজ আটপৌরে বা বাইরের ফ্যাশনের নতুন ধারা। রং নির্বাচনে সবকিছুর সঙ্গে ম্যাচিং করে পরা যাবে। তবে, অ্যামব্রয়ডারির কাজ করা প্যাটার্ন বেজডের সঙ্গে কন্ট্রাস্ট সহজ।

 

 

যাদের প্রতিনিয়তই নানা কাজের জন্য বাইরে যেতে হয় তাদের কাছে সিঙ্গেল কামিজের চাহিদা একটু বেশি। কেননা ব্যস্ততাময় জীবনে সময় বের করে নিয়ে কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে ওড়না, সালওয়ার কেনা খুবই কষ্টকর। তাইতো তরুণীরাও সিঙ্গেল কামিজ বা কুর্তিতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এই পোশাকটিকে একেবারে বিদেশি বলা চলে না।

 

 

আবার দেশীয় ধাঁচের ফিউশন তৈরি করে। কুর্তি বা সিঙ্গেল কামিজের সঙ্গে কেউ চাইলে স্কার্ফ বা ফেন্সি ওড়না ব্যবহার করতে পারেন। ফেব্রিক্স ও ডিজাইনের কারণে এই ধরনের পোশাকের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, প্রতিবার পরার সময় ইস্ত্রি করার দরকার হয় না। খুব সহজে কাপড়ে ভাঁজ পড়ে নষ্ট হওয়ারও ভয় থাকে না। আবার যে কোনো ওড়না বা প্যান্টের সঙ্গে এগুলো সহজে পরা যায়। বন্ধুদের আড্ডায়, শপিংয়ে, ঘোরাঘুরিতে অথবা ফ্যামিলি টাইমেও এসব পোশাক মানানসই।

 

 

 

আরও একটি বড় দিক হলো, পোশাকের সঙ্গে সাজগোজের ব্যাপারে খুব বেশি মনোযোগী না হলেও চলে। সাদামাটা সাজসজ্জা উপযুক্ত। কেউ চাইলে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে এন্টিক ম্যাটেরিয়ালের মালা, ব্রেসলেট বা চুড়ি, ঘড়ি, পুঁতির মালা, বিডসের মালা পরতে পারেন। তবে স্টাইলিশ এক্সেসরিজের ব্যবহার এ ধরনের পোশাকের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যায়।

 

 

কুর্তি কামিজের সঙ্গে পছন্দসই যে কোনো জিন্স, লেগিংস, জেগিংস অথবা ফ্যাশনেবল সালোয়ার পরা যাবে। জিন্স কিংবা লেগিংস ছাড়াও কুর্তি ও সিঙ্গেল কামিজ পরতে পারেন ধুতি, চুড়িদার ও স্লিপটেড ভ্যারিয়েশনের সালোয়ারের সঙ্গে। এখন তো চোস্ত পায়জামারও একাধিক স্টাইল, চুড়িদারেরও ২-৩টি ভ্যারিয়েশন দেখা যায়। কামিজে কাজ করা থাকলে সালোয়ারটা সিম্পল পরাই ভালো। আবার কামিজে হালকা কাজ হলে সালোয়ারে কাজ হয় গর্জিয়াস।

 

কামিজের সঙ্গে রং ম্যাচিং করে ওড়না পরতে পারেন অথবা একেবারে বিপরীত রংও বেছে নিতে পারেন। ফেন্সি ওড়নাগুলোর সবচেয়ে বড় সুবিধা একাধিক কুর্তির সঙ্গে পরা যায়। জুতার ক্ষেত্রে স্লিপার, সু, কনভার্স, কেডস সবই মানিয়ে যায়। তবে হাই-হিল বা কারুকাজের জুতা একদমই মানাবে না। 

 

 

রং বাংলাদেশ, নগরদোলা, কে-ক্রাফট, আড়ং, বসুন্ধরা সিটিসহ দেশের প্রায় সব ফ্যাশন হাউসে পাওয়া যাবে এই কুর্তি ও কামিজ। দাম পড়বে ৯০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে।

 

 

 

 

এ ছাড়া মনের মতো কুর্তিটি বেছে নিতে নিউমার্কেট, গাউসিয়া, চাঁদনীচক, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে যেতে পারেন। সুলভ মূল্যে হাজারো ডিজাইনের কুর্তি কামিজ মিলবে এখানে। কাপড় কিনেও বানিয়ে নিতে পারেন পছন্দের একটি কুর্তি। তবে রেডিমেড সিঙ্গেল কামিজের দাম পড়বে ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। ননব্র্যান্ডের কুর্তিগুলো ৩৫০ থেকে শুরু হয়ে ১০০০ টাকা পর্যন্ত দাম পড়বে। কুর্তির সঙ্গে জিন্সের প্যান্ট কিনতে পারবেন ৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে।

 

 

বিভিন্ন রঙের লেগিংস বা জেগিংস কিনতে পারবেন ২০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। সিঙ্গেল ওড়না কিনতে পারবেন ১৮০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। ফেন্সি ওড়নাগুলোর দামও হাতের নাগালে। প্রিন্টেড কুর্তিতে অনেকগুলো রঙের মিশেল থাকায় যে কোনো ওড়না বা প্যান্টের সঙ্গে পরা যাবে। দেখতেও বেশ ট্রেন্ডি লাগবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর