শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

নীলে নীলাম্বরী

নীলে নীলাম্বরী

♦ মডেল : রামিসা খান ও সিমু ♦ পোশাক : রঙ বাংলাদেশ ♦ ছবি : নেওয়াজ রাহুল ♦ স্টাইল : বিডি মিজু মেকওভার : ওমেন্স ওয়ার্ল্ড

বর্ষাকালে ময়ূর নাচন তাল তোলে সবার মনে। বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দে সে তাল পায় নতুন মাত্রা। কিন্তু তার আগে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে হবে ময়ূরের সাজে। তখন সব দায় গিয়ে ঠেকে নীল রঙা শাড়ির ওপর। সৌন্দর্য সচেতন মেয়েরাও তাই নীল শাড়ি বেছে নিতে একদমই দেরি করেন না। কারণ বর্ষায় যে হতে হবে নীলে নীলাম্বরী। নীলাম্বরীর রূপকথন জানাচ্ছেন— তানিয়া তুষ্টি

 

আকাশজুড়ে ধূসর মেঘের আনাগোনা। এর ফাঁক গলে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে ঝিলিক দেওয়া রোদ। সময়-অসময় নেই, প্রকৃতিতে চলে জলকেলি খেলা। বৃষ্টিজলে ধোয়া আকাশ সাজে রংধনুর সাতটি রঙে। বর্ষার এই বিচিত্র রঙের খেলায় মত্ত হতে ইচ্ছে করে আমাদেরও। তাই তো প্রকৃতির এই রূপ বদলের সঙ্গে বদলে যায় সাজ পোশাকের ধরন। বছরের এ সময়টাতে ফ্যাশন হাউসগুলো বর্ষার কথা মাথায় রেখে পোশাক তৈরি করে। প্রতিটি পোশাকের কাপড়, রং ও ডিজাইন নির্বাচন করা হয় বিশেষভাবে। বৃষ্টি, বর্ষার ফুল, লতাপাতা, মেঘলা আকাশ উঠে আসে পোশাকের মোটিফ হিসেবে। এ ছাড়া ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্ট, হালকা অ্যামব্রয়ডারি ও চুমকির কাজ থাকতে পারে পোশাকগুলোতে। রঙের ক্ষেত্রে সবুজ, নীল, ছাই, আকাশি— সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। 

 

বাদল হাওয়ায় মনের সুখে ময়ূর নাচে পেখম তুলে। আমাদের মন ময়ূরও হতে চায় সেই পেখম তোলা নীল ময়ূর। তাই তো সবার অগোচরেই বর্ষার সঙ্গে নীল রঙের একটি গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। আর তাই এই সময়ে নীলের ছটায় নীলাম্বরী হতে প্রস্তুত রমণীরা। বর্ষায় সময় উপযোগী সাজে নিজেকে উপস্থাপন করতে নীল শাড়ির তুলনা নেই। এই নীলেও রয়েছে কত শত বৈচিত্র্য। গাঢ় নীল, হালকা নীল, আসমানি নীল, ময়ূরকণ্ঠী নীল, রয়েল ব্লু, নেভি ব্লু আরও কত কি? এই নীলকে সাজাতে ব্যবহার হয় মানাসই আরও অনেক রং। শাড়ির নীল জমিনে ফুটে ওঠে ফিরোজা, সাদা, ছাই, সোনালি, খয়েরি, সবুজ, হলুদ, গোলাপির নান্দনিক ডিজাইন। এগুলোর ভিতর থেকে যে যার পছন্দ মতো ডিজাইনের শাড়িটি অঙ্গে জড়িয়ে নিচ্ছেন বর্ষার আগমনে।

 

বৃষ্টির সময়টাতে জর্জেট বা সিল্কের কাপড়কে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষ করে যারা খুবই ব্যস্ত থাকেন, পোশাকের যত্ন নেওয়ার সময় কম তাদের জন্য এই আবহাওয়ায় সিল্ক, হাফসিল্ক, জর্জেট, মিক্সড কাপড়ের পোশাক পরা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ এই ধরনের পোশাক ভিজলে দ্রুত শুকিয়ে যায়। দাগ লাগলেও তা উঠানো সহজ। কিন্তু সুতি কাপড়ে ঘটে উল্টোটা। বৃষ্টির পানি বা কাদা লাগলে তা শুকিয়ে দাগে পরিণত হয়। সেই দাগ সহজে উঠানো সম্ভব হয় না। অনেক সময় দাগ রয়ে যায়। খুব শৌখিনদের পক্ষেই এই মৌসুমে সুতি কাপড় সামলানো সম্ভব। তাই কোনো রকম ঝামেলা পোহাতে না চাইলে যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যেতে পারেন অ্যান্ডি সিল্কের পোশাক। এগুলো পরলে পোশাকের সৌন্দর্যহানির কোনো রকম চিন্তা আপনাকে পোহাতে হবে না।

বর্ষার দিনে রাজশাহী সিল্ক, সিফন জর্জেট কাপড় হবে বেশ সহনশীল। এসব কাপড়ের রং হিসেবে একটু গাঢ় নির্বাচন করাই সুবিধাজনক। সহজে ধোয়া যায় আবার ভিজলে তাড়াতাড়ি শুকায়। কোনো অনুষ্ঠানে যেতে চাইলে অন্যান্য উজ্জ্বল রঙের পোশাক নির্বাচন করতে পারেন। কারণ মেঘলা দিনে আবহাওয়া অনেকটা অন্ধকার থাকে। রং যেন দৃষ্টিকটু না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বৃষ্টির মৌসুমে বেগুনি, মেজেন্টা, গাঢ় সবুজ, লাল, হলুদ রংগুলো দারুণ মানায়। শুধু শাড়ি নয়, সালোয়ার-কামিজের ক্ষেত্রে সুতির বদলে সিনথেটিক ফেব্রিকের কাপড় বেছে নিতে পারেন। বর্ষায় লং ড্রেস না পরাই ভালো। এতে পায়জামার সঙ্গে সঙ্গে কামিজেও কাদা লেগে যায়। শাড়ি পরলে অবশ্যই তা যেন গাঢ় রঙের জর্জেট হয়।

 

বর্ষার দিনে পোশাকের যত্ন নিতে হয় একটু বেশি। নইলে পরিহিত পোশাকটি খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সে জন্য পোশাকে কাদা লাগলে দ্রুত ধুয়ে নিন। এরপর পুরো কাপড় ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুতে হবে। বর্ষায় কাপড় শুকাতে সময় লাগে বেশি, কারণ বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে। তবু ভালোভাবে কাপড় শুকানো দরকার। তা না হলে কাপড় নষ্ট হতে পারে। কাপড় ভালো করে শুকানোর পর ইস্ত্রি করে নিন। একবারে চিন্তা দূর।

বর্ষার এই সময়ে মুখের সাজ হালকা হলেই ভালো লাগবে। কপালে মানানসই টিপ এবং চোখে নীল, সবুজ বা ছাই রঙের কাজলের টান দিতে পারেন। চোখের সাজের ক্ষেত্রে ওয়াটারপ্রুফ কাজল, মাশকারা, লাইনার ব্যবহার করুন। আইশ্যাডো দিলে হালকা কোনো রং বেছে নিন। হালকা ফেস পাউডার লাগাতে পারেন। লিপস্টিকের বেলায় গ্লোসি হলেই ভালো। হালকা গোলাপি, বাঙ্গি, হালকা বাদামি ধরনের রং বাছাই করতে পারেন লিপস্টিকের ক্ষেত্রে। এই সময় হাতে একগোছা চুড়ি না থাকলে চলে? নীল তো বটেই, থাকতে পারে অন্য রঙের উপযোগী মিশ্রণ।

 

বর্ষার সময়ে চুলের জন্য চাই বর্ষা উপযোগী বাঁধন। যাদের চুল লম্বা বা মাঝারি, তারা হাত খোঁপা করতে পারেন। আপনার চুলগুলোকে সুন্দর করে গুছিয়ে নিন। এবার সব চুল একসঙ্গে মাথার নিচের দিকে এনে সেখানে ধরে হাতের সাহায্যে খোঁপা করে নিন। খোঁপা আটকানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন চুলের কাঁটা বা ক্লিপ। পনিটেল বাঁধতে চাইলে সব চুল ভালোভাবে গুছিয়ে পেছনে নিয়ে রাবার ব্যান্ড বা ক্লিপ দিয়ে আটকে নিন। এভাবে চুল বাঁধার উপায়টি সব থেকে সহজ আর যে কোনো পোশাকের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে যায়। চাইলে সাধারণ বেণীর পাশাপাশি করতে পারেন ফ্রেঞ্চ বেণীও। ছোট-বড় সব সাইজের চুলেই এ বেণী খুব সুন্দরভাবে করা যায়। সালোয়ার-কামিজ বা জিন্স, টপ, ফতুয়া যে কোনো পোশাকের সঙ্গে এ বাঁধন বেশ মানানসই। চাইলে বর্ষার কোনো ফুল গুঁজে নিতে পারেন চুলে।

 

বর্ষায় কাপড় বা চটের পার্টস ব্যবহার করা উচিত নয়। চামড়ার ব্যাগও এড়িয়ে চলা ভালো। এই সময় ওয়াটারপ্রুফ, রেক্সিন, প্লাস্টিক বা রাবারের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে এখন বর্ষা উপযোগী ফ্যাশনেবল ব্যাগ কিনতে পাওয়া যায়। জুতার ক্ষেত্রেও হতে হবে সাবধানী। পুঁতি বা জরির জুতার পরিবর্তে পরতে পারেন রাবার, রেক্সিন ও স্পঞ্জের তৈরি ফ্যাশনেবল জুতা বা স্লিপার। বেশি কাদাযুক্ত রাস্তায় পরবেন সেমি-হিল। এতে কাদায় পা ডোবানো থেকে রক্ষা পাবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর