শুক্রবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

শারদীয় পোশাক

শারদীয় পোশাক

♦ মডেল : জ্যোতিকা জ্যোতি ♦ ছবি : রাফিয়া আহমেদ ♦ পোশাক ও অলঙ্কার : রঙ বাংলাদেশ ♦ সাজ : ওমেন্স ওয়ার্ল্ড

বৃষ্টিভেজা সবুজ মাড়িয়ে প্রকৃতি সাজে এক অনন্য রূপে। মেঘের ভেলা ভিড় জমায় কাশবনে। চারপাশে থই থই করা জলে শাপলা-কমল করে জলকেলি। প্রকৃতি নিজেই ডাকে উৎসব আনন্দে মেতে উঠতে। মন্দিরে মন্দিরে পড়ে উলুধ্বনি। তাই শারদের এই প্রাতে চলে পোশাকে বৈচিত্র্য। বিস্তারিত জানাচ্ছেন- তানিয়া তুষ্টি

 

শারদ এলে আসে দুর্গোৎসব। বৃষ্টিভেজা সবুজ মাড়িয়ে প্রকৃতি সাজে এক অনন্য রূপে।  মেঘের ভেলা ভিড় জমায় কাশবনে। চারপাশে থই থই করা জলে শাপলা-কমল করে জলকেলি। প্রকৃতি নিজেই সবাইকে ডাকে উৎসব আনন্দে মেতে উঠতে। মন্দিরে মন্দিরে পড়ে উলুধ্বনি। ঢাকঢোলে তাল তোলে ঢাকির হাতের কাঠি। এমন সময় মনকে নিশ্চয় বেঁধে রাখা যায় না। নিজেকে পরিচ্ছন্ন রূপে সাজিয়ে মাকে অঞ্জলি দানেই মিটে তৃপ্তি। মায়ের সামনে কীভাবে যাব, সাজ কেমন হবে তা নিয়ে থাকে হাজারটা প্রশ্ন। আর তাই তো এ নিয়ে অস্থিরতাও কম থাকে না সবার মনে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মাঝে এমন ভাবনার জল একটু বেশিই উথাল-পাথাল করে। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চলবে বৈচিত্র্যময় নিজেকে উপস্থাপন। দেবী-দর্শন, অঞ্জলি দান, সন্ধ্যা আরতি আর আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বেড়ানোর পরিকল্পনায় স্থান পায় রংধনুর সাত রং। তাই পূজার ভিন্ন ভিন্ন দিনে নিজেকে রাঙাতে চাই অনেক কিছু।

 

দেবীর বোধনে পূজা শুরু হয় ষষ্ঠী দিয়ে। তবে পূজা পুরোপুরি জমে উঠে সপ্তমী থেকে। এজন্য সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর রাতে আরতি, ঘুরতে যাওয়া আর বাসায় থাকে আগত অতিথির ভিড়। আর তাই তো একেক দিন আপনার সাজপোশাকে থাকতে পারে ভিন্নতা। সপ্তমীতে মেয়েরা পোশাক হিসেবে বেছে নিতে পারেন চওড়া পাড়ের কাতান শাড়ি। সঙ্গে সোনা, রুপা বা ইমিটেশনের ভারী গয়না। হাতভর্তি চুড়ি। পুরুষের জন্য পাঞ্জাবিই সেরা। সঙ্গে থাকতে পারে প্যান্ট, পায়জামা অথবা ধুতি। তবে একটু ক্যাজুয়াল ভাব থাকলেও খুব বেশি মন্দ লাগবে না। এ সময় স্বস্তির খোঁজে টি-শার্টও পরতে পারেন। 

 

একটি করে দিন গড়াতে থাকে আর পূজার আড়ম্বর বাড়তে থাকে। অষ্টমীতে থাকে কুমারী পূজা। বিশেষ করে অষ্টমীতে মেয়েরা বেছে নেন লাল সাদা শাড়ি। সাজেও থাকে লালের আধিক্য। হাতভর্তি চুড়ি, আলতা লিপস্টিকে মেয়েরা হয়ে উঠে পুরোদস্তুর বাঙালি রমণী। চুলের বেণিতে ঝুলতে পারে একগোছা তাজা ফুল।

 

নবমীর দিন ভরপুর খাওয়া-দাওয়া আর ঘুরে বেড়ানো। দিনের বেলা কিংবা সন্ধ্যা আরতি সব সময়ই থাকতে পারে জাঁকজমক সাজ। আর তাই তো মেয়েদের জন্য ভারী কাজের শাড়ি, লেহেঙ্গা অথবা থ্রিপিস হবে পোশাক বাছাইয়ে উপযুক্ত পছন্দ। জর্জেট, কাতান বা সিল্কের শাড়িতে পুঁতি, জার্দসি, ডলার বসানো থাকলে অন্যরকম গ্ল্যামার আনবে। আজকাল সুতা ও জরির নজরকাড়া নানা কাজ থাকছে শাড়িতে। এগুলো হতে পারে যে কোনো রমণীর পূজার পোশাক। গলা, কানে ও হাতে থাকবে ভারী গয়না। তবে সব সময় মনে রাখতে হবে, সাজের আধিক্যে আপনি যেন হারিয়ে না যান। শাড়ির পরিবর্তে আজকাল লেহেঙ্গাও বেছে নিচ্ছে মেয়েরা। তাছাড়া ভারী কাজের থ্রিপিসে মন্দ লাগবে না। এই সময় একটু ভারী মেকআপই প্রযোজ্য।

শারদীয় দুর্গাপূজার প্রধান আকর্ষণ দশমী। এই দিনের সাজ মানে শাড়ি বা থ্রিপিসে লালের ছটা। সেখানে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, একদম লালরঙা শাড়ি বা সাদা জামদানি আর লাল ব্লাউজে হাতের কাজের নকশা থাকলে মন্দ হয় না। গোল্ডেন বা সিলভার রঙের শাড়িও মানাবে। তবে যে ধরনের শাড়িই পরুন না কেন মিলিয়ে ব্লাউজ আর ব্যবহৃত অর্নামেন্টস অবশ্যই গর্জিয়াস হওয়া চাই সঙ্গে সাজটাও। শুধু শাড়ি নয়, মাঝে মাঝে থ্রিপিস, লেহেঙ্গা বা আনারকলি স্টাইলের ড্রেসও পরা যেতে পারে। কেউ যদি একান্তই শাড়ি না পরতে চান তাহলে সাদা আর লালের মিশ্রণে কোনো সালোয়ার-কামিজও পরে যেতে পারেন। সাদা কুর্তির সঙ্গে লাল পায়জামা আর লাল ওড়নাও বেশ ফ্যাশনেবল লাগবে। সাদা শাড়ির সঙ্গে লাল নেটের ফুলহাতা ব্লাউজ খুব ভালো মানাবে। খুব বেশি ঘোরাঘুরি করার জন্য উপযুক্ত একটি হাতব্যাগ থাকা জরুরি। তার ভিতর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস রেখে দিন। ছোট আয়না, লিপস্টিক, ছোট্ট কমপ্যাক্ট পাউডার আর অবশ্যই ছোট পানির বোতল রাখা চাই তাতে। প্রয়োজনীয় কিছু টিস্যুও রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

 

সাজে ছেলেরাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। পূজার শুরুর দিনগুলোতে তারা হালকা রঙের পাঞ্জাবি ও পায়ে আরামদায়ক ফিতে যুক্ত স্যান্ডেল পরতে পারেন। আর শেষ দিনগুলোতে জমকালো পাঞ্জাবি, ফতুয়া পছন্দ করতে পারেন। যারা একটু অন্যভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে চান তারা ধুতি পরতে পারেন।

 

আমাদের ফ্যাশন হাউসগুলো ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য নান্দনিক ডিজাইনের পূজার পোশাক দিয়ে সাজিয়েছে তাদের আউটলেট। আপনি পূজার দিনের জন্য পছন্দের পোশাক কিনতে যেতে পারেন রঙ বাংলাদেশ, আড়ং, অঞ্জন’স, কে ক্র্যাফট, বিবিআনা, নগরদোলা, বাংলারমেলাসহ অন্যান্য ফ্যাশন হাউসগুলোতে।

 

এখন ছেলেরাও পোশাক ম্যাচিং করে পরে। পাঞ্জাবি, পাজামা, কুর্তা, শার্ট কিংবা টি-শার্ট। আর পূজার সময়টাতে  তো উত্তরীয়, ধুতি ট্র্যাডিশনাল এবং ফ্যাশনেবল বিষয়। একটু স্টাইল করে পাঞ্জাবিটার সঙ্গে পাজামার বদলে ধুতি, কাঁধে একটা উত্তরীয়, মাথায় চন্দন ফোঁটা পুরো বিষয়টাই যেন পরিবর্তন করে দেয়। তারপর বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেবী দর্শন এবং আশীর্বাদ নেওয়া শুরু হয়। ষষ্ঠীতে হয়তো শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট পরলেন, সপ্তমীতে হয়তো কুর্তা-পাজামা, নবমী এবং বিজয়া দশমীতে হয়তো ধুতি-পাঞ্জাবি, উত্তরীয় পরার ইচ্ছা বা পরিকল্পনা থাকে। আর এই ইচ্ছাগুলো কিন্তু বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের মাধ্যমে ডিজাইন করা পোশাক কিনেই পূরণ হয়। ফ্যাশন হাউসগুলো তাই পূজা উপলক্ষে একটি বিশেষ আয়োজন করে। রুচিশীল ডিজাইন, প্রতিটি পোশাক দৃষ্টিনন্দন ও সময়োপযোগী ফ্যাশনেবল করে  তোলা। আর এসব পোশাকে স্থান পায় হিন্দুশাস্ত্রের বিভিন্ন মোটিফ।  যেমন পদ্ম, শঙ্খ, ত্রিশূল, চক্র, ওম সিম্বল, বেলপাতা, পানপাতা, হাতি, দেবীর প্রতীক। বিশেষ করে ছেলেদের পাঞ্জাবিগুলোতে বুকের কাছে বোতাম ঘরের পাশে, কাঁধে কিংবা বডিজুড়ে এসব সিম্বলের ডিজাইন করা হয়। এ ছাড়া ধুতি এবং উত্তরীয়তে বিভিন্ন দেবীমন্ত্রের লাইন এঁকে ডিজাইন করা হয়, যা একটু ভিন্ন স্টাইল প্রকাশ করে। সেই সঙ্গে ফ্যাশনেবল তো বটেই।

 

পূজার দিনগুলোতে সাজবে শিশুরাও। ফ্রক, লেহেঙ্গা বা থ্রিপিসে মেয়ে বাচ্চা এবং পাঞ্জাবি-পায়জামা, শার্ট-প্যান্ট অথবা টি-শার্টে মানিয়ে যাবে ছেলে বাচ্চারা। তাছাড়া ম্যাচিং ফ্যামিলি ড্রেসও পাওয়া যাচ্ছে শোরুমগুলোতে। চাইলে সেগুলোও বেছে নিতে পারেন। আজকাল অবশ্য ছেলে বাচ্চাদের জন্য তৈরি করা পাওয়া যাচ্ছে আকর্ষণীয় ডিজাইনে পাঞ্জাবি ও ধুতি। মা-বাবার পোশাকের সঙ্গে আদরের সোনামণির পোশাকটিও মিলে যাবে রং আর ডিজাইনে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর