শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

শীতের আগে তকতকে

শীতের আগে তকতকে

♦ মডেল : পূর্ণিমা ♦ ছবি : মহসীন আহম্মেদ কাওসার

শীতের হাওয়া উড়িয়ে দেয় গরম বাতাস। মনেপ্রাণে দোলা লাগে অন্যরকম ভালো লাগার। এই আবহাওয়ায় ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শুষ্কতা। তার প্রভাব এড়ায় না আমদের ত্বক। ফলাফল শীতের আগে রুক্ষ শুষ্ক ত্বক। কিন্তু এমন ত্বক দেখতে নিশ্চয় কারোই ভালো লাগবে না। মন চাইবে সব ঋতুতে তকতকে থাকতে। ত্বকের সৌন্দর্য একই রকম বজায় রাখতে। শীতের আগের এই সময়টাতে ত্বকের যত্নের সাতসতের নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন - তানিয়া তুষ্টি

 

 

শীতের বারতা নিয়ে এসেছে হেমন্ত। কুয়াশা মোড়া সূর্য, শিশির ভেজা সকাল আর শিউলি ফুল তারই জানান দিচ্ছে। হাফছাড়া গরম থেকে রেহাই মিলেছে আমাদেরও। শান্তি মিলছে ফুরফুরে বাতাসে। কিন্তু এরই ফাঁকে চুরি যাচ্ছে মুখের ত্বকের আর্দ্রতা। নিয়মিত ব্যবহারের ক্রিম এখনো বদলাননি। ত্বকচর্চার অভ্যাসটাও এখনো আগেরটাই আছে। আর এতেই তৈরি হচ্ছে সমস্যা। ধীরে ধীরে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় ত্বক ফাটা, ত্বকে ছোপ কালো দাগ, ফাঙ্গাস, ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ ধরনের সমস্যায় কী করবেন, ভাবনা এখন সেটিই।

 

শীত সমাগত। ঋতুর ঠিক এই পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে আমাদের ত্বকে। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায়। ফলে ত্বক হয়ে পড়ে শুষ্ক ও রুক্ষ। অথচ একটু যত্ন আর সচেতনতাই পারে শীতের আগের এই সময়টাতে আপনার হাসিকে অমলিন রাখতে। শীতের রোদে আলট্রাভায়োলেট বেশি থাকে। ত্বকের প্রথম যত্ন হিসেবে বেছে নিতে হবে সানস্ক্রিন লোশন। প্রতিদিন বের হওয়ার আগে অবশ্যই ত্বক ভালো করে ধুয়ে তাতে  সানস্ক্রিন লোশন ভালো করে লাগাতে হবে। লোশনটি ত্বকে যেন মিশে যায় তার জন্য ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। আর লোশনের ক্ষেত্রে এসপিএফ কমপক্ষে ৪০ থাকা উচিত। ত্বকে সানস্ক্রিন লাগানোর ক্ষেত্রে  আরও একটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। আর তা হলো, অবশ্যই ৩-৪ ঘণ্টা পর তা ভালো করে ধুয়ে আবার লাগাতে হবে।

 

আবহাওয়ার ঠিক এমন সময় অনেকের জন্য খুব কমন একটি সমস্যা গলা ও ঘাড় কালো হয়ে যাওয়া। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় রয়েছে আপনারই হাতে। সেজন্য ব্যবহার করতে পারেন অ্যালোভেরা জেল। সপ্তাহে অন্তত চার থেকে পাঁচ দিন অ্যালোভেরা গলা আর ঘাড়ের উন্মুক্ত স্থানে ঘষে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হবে। অ্যালোভেরা লাগিয়ে দশ থেকে পনেরো মিনিট পর ধুয়ে  ফেলতে হবে। এরপর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। এবার আসা যাক, ত্বকচর্চার বিষয়ে। ত্বকে ফুসকুড়ি, ব্রণ, র‌্যাশের ঝামেলা বেড়ে যায় শীত আসার এই সময়টাতে। এই সমস্যা সমাধানে কমলা, টমেটোর রস খুব উপকারী। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় মুখ, হাত ও পায়ে ময়েশ্চারাইজারযুক্ত ক্রিম লাগাতে হবে। এতে করে নখের ভঙ্গুরতা, ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে।

এই সময়টাতে ত্বকের যত্নে যদি বাড়তি কিছু করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ভিন্ন চিন্তা করতে হবে। আধা চামচ শসার রসের সঙ্গে আধা চামচ দুধ ও আধা চামচ মধু মিশিয়ে ফ্রিজে রাখুন। ঠাণ্ডা হলে ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি শুষ্ক ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তবে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য শুধু শসার রস বা শসা কুচি ব্যবহার করুন। যাদের ত্বক খুব তৈলাক্ত বা ব্রণের সমস্যা আছে, তারা আনারসের সঙ্গে সমপরিমাণ গোলাপজল মিলিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে এর সঙ্গে বেসন দিতে পারেন, তবে এটি ২০ মিনিটের বেশি ব্যবহার করবেন না। মুখ পরিষ্কার করার জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ব্যবহারে ত্বকে রোদের  পোড়া ভাব চলে যাবে।

 

এই সময় বাতাসে প্রচন্ড পরিমাণ ধুলোবালি উড়তে থাকে। তাই ত্বকে ময়লা জমে বেশি। ত্বকের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সপ্তাহে একদিন অন্তত স্ক্র্যবিং করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি স্ক্রাবই বেশি ভালো। শসা বা মাল্টার রসের সঙ্গে চালের গুঁড়া মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে নিন। ত্বক স্বাভাবিক বা শুষ্ক হলে দুধ আর মধু মেশাতে পারেন। বেশি শুষ্ক ত্বক হলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিতে হবে। স্বাভাবিক ত্বকের জন্য কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল দিলে ভালো। এবার নিজের হাতে তৈরি করা স্ক্রাবটি শুধু মুখে নয়, আপনার হাত, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। যাদের ত্বক সেনসেটিভ, তারা টক দই দিয়ে স্ক্রাবিংয়ের কাজটা সেরে নিতে পারেন।

 

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে দুধের সরও খুব উপকারী। প্রতিদিন কাজের ফাঁকে ১০ মিনিট সময় নিয়ে ১ চামচ দুধের সঙ্গে ময়দা বা বেসন মিশিয়ে মুখ, গলা আর হাতে লাগাতে পারেন। ১০ মিনিট পর উষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শীতের প্রভাবে ত্বকের সমস্যা হলো ফাঙ্গাসের সংক্রমণ। এই সময়ে প্রকৃতির শুষ্কতার প্রভাব পড়ে ত্বকে। তা ছাড়া চারদিকের ধুলোবালি ত্বকে জমার ফলে নানা ধরনের সংক্রমণ হয়। তাই প্রতিদিন কয়েকবার করে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। নিজের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা মেকআপ কিটস, টাওয়েল, চিরুনি ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ সময় প্রতিবার ত্বক পরিষ্কারের পর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। যাদের হাতে কালো দাগ পড়েছে, তারা একটি প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। ১ টেবিল চামচ দারুচিনি গুঁড়া, ১ টেবিল চামচ জায়ফলের গুঁড়া ও ২টি ডিমের কুসুম ভালো করে মিশিয়ে নিন। এতে সামান্য  লেবুর রস মিশিয়ে ২০ মিনিট পুরো হাতে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি হাতের কালো দাগ, পোড়া ভাব ও আঙ্গুলের ভাঁজের কালো দাগ তুলতে সহায়তা করবে।

 

যাদের বেশিরভাগ সময় বাড়িতে থাকতে হয়, তারা প্রতিদিনের কাজ শেষে এক টুকরো লেবু ঘষে হাত পরিষ্কার করে নেবেন। দিনের কোনো এক সময়ে হাত দুটো লেবু লাগিয়ে কুসুম গরম পানিতে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এর পর পুরো হাতে লোশন লাগাতে হবে। এতে আপনার হাত পায়ের ত্বক সুন্দর ও মসৃণ থাকবে।

 

হালকা শীতে ত্বক সজীব রাখতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। তেলে ভাজা খাবার পরিহার করে মৌসুমি ফল, সবজি, সালাদ ও স্যুপ রাখতে হবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম আর বিশ্রামের ফলে ত্বক সজীব থাকবে। নিয়মিত যত্নে শীতের আগের এই সময় আপনার ত্বক থাকবে প্রাণবন্ত।

 

টিপস

- প্রথমতই মুখে ব্যবহার্য ফেসওয়াশটি পরিবর্তন করতে   হবে।

- নিয়মিত ব্যবহারের ক্রিমটিও বদলে নিন এই সময়ে।

- খাদ্যাভ্যাসে প্রচুর পরিমাণে সবজি ও দেশি ফল রাখুন।

- এই সময় মুখের ত্বকে ব্যবহারের জন্য একটি ভালো

  মানের সান কন্ট্রোল অথবা সানস্ক্রিন লোশন বেছে নিন।

- শীতের রোদ মিষ্টি লাগায় অনেকে ছাতা বা স্কার্ফ ব্যবহার ছেড়ে দেন। এটি ত্বকের জন্য মারাত্মক ভুল। বাইরে চলার

  সময় অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করতে হবে।

- ত্বক সুস্থ রাখার একটি বড় উপায় হলো প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।

- গোসলের আগে ১০ মিনিট তেল মালিশেই মিলবে ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টি।

- সেনসেটিভ ত্বকের জন্য ব্যবহার করা যাবে যে কোনো বেবি অয়েল বা অলিভ অয়েল। এতে উপকার মিলবে বেশি।

- উষ্ণ গরম পানিতে ত্বক ধুলে ব্রণে উপকার মেলে।

- অ্যালার্জি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।

- পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে ত্বকের জন্য   উপকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর