শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অস্ট্রিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয়

সাধারণত ২৮ বছর বয়স পর্যন্ত ঘনত্ব বাড়ে; ৩৪ বছর পর্যন্ত তা বজায় থাকে। এরপর থেকে হাড় ক্ষয় হতে থাকে। ৫০ বছর পেরোবার পর থেকে হাড় ক্ষয় বা এর লক্ষণ পরিলক্ষিত হতে থাকে।

অস্ট্রিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয়

ছবি : ইন্টারনেট

অতীতে হাড় ভাঙার ঘটনা ঘটে থাকলে পরবর্তীতে হাড় ভাঙার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। একবার পাঁজরের হাড় ভাঙলে কোমরের হাড় ভাঙা এবং ঊরুর হাড় ভাঙারও সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

 

অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় বলতে শরীরে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়াকে বুঝায়।  অস্টিওপরোসিস হাড় অনেকটা মৌচাকের মতো হয়ে যায়। এতে হাড় ঝাঁঝড়া বা ফুলকো হয়ে যায়, যা অতি দ্রুত ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।  মারাত্মক হাড় ক্ষয়ে হাঁচি বা কাশি দিলেও তা ভেঙে যেতে পারে।

পঞ্চাশ বছর পেরোবার পর থেকে শরীরের হাড় ক্ষয় বা এর লক্ষণ পরিলক্ষিত হতে থাকে। কিন্তু এর শুরু অনেক আগে থেকেই হতে থাকে। এক পুরুষ বা মহিলার দেহের হাড় সাধারণত ২৮ বছর বয়স পর্যন্ত ঘনত্বে বাড়ে; ৩৪ বছর পর্যন্ত তা বজায় থাকে। এরপর থেকে হাড় ক্ষয় হতে থাকে।

যাদের ক্ষেত্রে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি তাদের দ্রুত হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে।  মহিলাদের মাসিক-পরবর্তী সময়ে হাড় ক্ষয়ের গতি খুব বেগবান হয়। এ ছাড়াও অনেকগুলো কারণ বা ঝুঁকি হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে (পরে আলোচিত হলো)।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩০% রজঃনিবৃত  মহিলা হাড় ক্ষয়ে আক্রান্ত। ইউরোপের চিত্রও অনেকটা তেমনই। অন্ততপক্ষে ৪০% মহিলা ও ১৫%-৩০% পুরুষ তাদের জীবদ্দশার বাকি সময়ে স্বল্প আঘাতে হাড় ভাঙার শিকার হবেন (যা হাড় ক্ষয়ের কারণেই হয়ে থাকবে)। আর যাদের একবার হাড় ভাঙার ঘটনা ঘটে, তাদের পরবর্তীতে হাড় ভাঙার ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়। একবার পাঁজরের হাড় ভাঙলে কোমরের হাড় ভাঙার সম্ভাবনা ২-৩ গুণ বৃদ্ধি পায় এবং ঊরুরও হাড় ভাঙার সম্ভাবনা ১-৪ বাড়ে। তবে, বাংলাদেশের মহিলা-পুরুষদের মাঝে হাড় ক্ষয়ের হার ও ঝুঁকির উপস্থিতির তথ্য অপ্রতুল।

 

অসংশোধনযোগ্য ঝুঁকি

বয়োবৃদ্ধি, স্ত্রী লিঙ্গ, জিনগত ত্র“টি, অপারেশনের কারণে ডিম্বাশয় না থাকা, হায়পোগোনাডিজম (পুরুষ ও মহিলার), অতি খর্বাকৃতি।

 

সংশোধনযোগ্য ঝুঁকি

ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি, ধূমপান, অপুষ্টি [ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন এ, কে ইত্যাদি], ক্ষীণকায় দৈহিক আকার, আমিষ-নির্ভর খাদ্যাভ্যাস, বেশি বয়সে অতিরিক্ত চা/কফি/চকোলেট গ্রহণের অভ্যাস, খাদ্যে বা বাতাসে ভারি ধাতু, কোমল পানীয় ও মদ্যপান।

 

মেডিকেলগত ঝুঁকি

দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন [বাংলাদেশের রোগীদের মাঝে এটি খুব ব্যাপক; বিশেষ করে অস্বীকৃতদের দ্বারা নির্দেশিত হয়ে যারা ওষুধ সেবন করছেন, কিছু কিছু প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির মাঝে স্টেরয়েডের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি] এবং অন্যান্য হরমোনজনিত রোগ যেমন- হাইপারথাইরয়েডিস্ক, হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিস্ককুসিং সিনড্রম, ডায়াবেটিস, এক্রমেগালি, অ্যাডিসন রোগ, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই, কিডনি অকার্যকারিতা ইত্যাদি।

 

উপসর্গ

প্রথমত, কোনো শারীরিক লক্ষ্মণ নাও থাকতে পারে। তবে কোমরে বা পিঠে বা অন্য কোথাও ব্যথা, বিশেষ করে তা ব্যথানাশকে কমছে না, এমন চরিত্রের। কারও কারও দৈহিক উচ্চতা কমে থাকবে, কুঁজো হয়ে যাওয়া বা সামনে ঝুঁকে থাকা। তবে সংগোপনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হলো, মেরুদণ্ডে ফাটল বা চিড় ধরা এবং ঠুনকো আঘাতেই হাড় ভাঙা।

 

শনাক্তকরণ

অনেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার হতে পারে। যেমন- কিছু ঘনত্ব পরিমাপ, আবার ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত করা। বি এম ডি পরীক্ষাটি এ কাজে সবচেয়ে ভালো ফলাফল দেবে।

 

চিকিৎসা

এ রোগে প্রধান ও প্রথম পদক্ষেপ হবে ঝুঁকি শনাক্তকরণ, সম্ভব হলে তা রহিত করা। এরপর বাজারে যে সব ওষুধ পাওয়া যায় সেগুলোর কোনো একটি নির্দিষ্ট রোগিণী বা রোগীর জন্য প্রযোজ্য হতে পারে।

 

যেহেতু, হাড় ক্ষয় (অস্টিওপরোসিস) একবার হলে আর পেছন দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ, তাই একে আগে ভাগেই রোধ করার জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচি নিতে হবে। এর অংশ হিসেবে কারা কতটুকু ঝুঁকিতে আছেন বা কারা ইতিমধ্যে হাড় ক্ষয়ে ভুগছেন, তা নির্ধারণ করতে হবে এবং উপযোগী চিকিৎসা নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে হবে।

আর হাড় ক্ষয় রোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে-

♦  নিয়মিত ব্যায়াম

♦  স্টেরয়েডসহ ক্ষতিকারক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকা

♦  পুষ্টি নিশ্চিতকরণ

♦  ধূমপান ত্যাগ

♦  প্রয়োজনে পরিমিত ক্যালসিয়াম সেবন।

 

ডা. শাহজাদা সেলিম

সহকারী অধ্যাপক

অ্যান্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর