শুক্রবার, ২ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অবহেলা নয় বাতব্যথায়

অবহেলা নয় বাতব্যথায়

বাতব্যথা অর্থাৎ হাত-পায়ের গিরা ব্যথাসহ ফুলে যাওয়ার প্রবণতা আমাদের মধ্যে অনেকেরই পরিলক্ষিত হয়। চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে অনেকের ব্যথা নিরাময় হয়। আবার অনেকের কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে কিছুদিন সুস্থ থাকার পর আবার ব্যথা ফিরে আসে এবং যা চক্রাকারে চলতে থাকে।

 

মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে বাতব্যথা, হাত-পায়ের গিরা ব্যথাসহ ফুলে যাওয়ার প্রবণতা আমাদের সমাজে অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়। এর সঙ্গে অনেকের কোমর, ঘাড়, কাঁধ ও পিঠে ব্যথা একটি সচরাচর অসুস্থতা হিসেবে বিরাজমান। কারও কারও এ ধরনের বাতব্যথা একবার শুরু হয়ে খুব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং কারও কারও মাঝে মাঝে মাঝারি ধরনের ব্যথা থেকে তীব্র ব্যথা হঠাৎ শুরু হয়ে কিছুদিন বিদ্যমান থেকে কয়েকদিন পর ধীরে ধীরে আরোগ্য হয়ে যায়। তাদের অনেকের চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে ব্যথা নিরাময় হয়, অনেকের কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, তবে কিছুদিন সুস্থ থাকার পর আবার ব্যথা ফিরে আসে এবং কিছুদিন ভোগার পর আবার আরোগ্য হয়ে যায়, যা চক্রাকারে চলতে থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ ধরনের সব অবস্থাকে আর্থ্রাইটিস বলা হয়। আর্থ্রাইটিস অনেক ধরনের হতে পারে। তবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই আর্থ্রাইটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা এবং সময়ের আবর্তে এর তীব্রতা এবং জটিলতা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর চিকিৎসাও বেশ জটিল এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন ধরনের মেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে বংশগতির ধারা হিসেবে আর্থ্রাইটিস হয়ে থাকে। তবে যাদের বংশগতির ধারা হিসেবে আর্থ্রাইটিস হয়, তারা কম বয়সেই আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং তাদের এ রোগের তীব্রতা অনেক প্রকট আকার ধারণ করে। আর্থ্রাইটিস প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে।

 

প্রদাহজনিত আর্থ্রাইটিস : যাতে শরীরে আক্রান্ত জয়েন্ট বা গিরা ফুলে যায়, লাল হয়ে যেতে পারে, গিরার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, তার সঙ্গে শরীর ব্যথা, জ্বর, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব ও শরীরে অত্যাধিক দুর্বলতা অনুভূত হতে থাকে। এ ধরনের রোগীদের ব্যথা সকাল বেলায় ঘুম থেকে ওঠার পর খুব বেশি অনুভূত হয় এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

 

ক্ষয়জনিত আর্থ্রাইটিস

এ ধরনের অসুস্থতায় সাধারণত ভারবাহী গিরা বিশেষ করে হাঁটু, কোমর, ও পায়ের অন্যান্য গিরা এবং মেরুদণ্ড বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত হয়। গিরা ব্যথার সঙ্গে জ্বর, শরীর ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ খুব বেশি পরিলক্ষিত হয় না। সাধারণভাবে এ জাতীয় আর্থ্রাইটিস বয়স্ক ব্যক্তিদের মাঝে বেশি পরিলক্ষিত হয়। কখনো কখনো আক্রান্ত গিরা ফুলে যেতে পারে। তবে তাপমাত্রা খুব একটা বৃদ্ধি পেতে দেখা যায় না। এ ধরনের ব্যথা সকাল বেলায় খুব কম থাকে বা থাকে না, বিকালে এবং সন্ধ্যায় বৃদ্ধি পায়।

বাতব্যথা থেকে হৃদরোগ হয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা প্রদাহজনিত আর্থ্রাইটিসে দীর্ঘদিন যাবত ভুগছেন। প্রদাহজনিত আর্থ্রাইটিসের ফলে হৃৎপিন্ডের প্রধান রক্তনালিতে (Aorta) প্রদাহ দেখা দেয় এবং এর থেকে হৃৎপিন্ডের এওরটিক ভাল্ব আক্রান্ত হয়ে ভাল্বের সমস্যা দেখা দেয়। এর সঙ্গে হৃৎপিন্ডের অন্যান্য অংশে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে অনেক ধরনের মারাত্মক হৃদরোগ সৃষ্টি করে থাকে যেমন- ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ, মাইওকার্র্ডাইটিস ও পেরিকার্ডাইটিস। প্রদাহজনিত আর্থ্রাইটিসের রোগীরা খুব বেশি ব্যথা নিরাময়ের ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন। এ ধরনের ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। আর উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত।

 

আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত রোগী বাতব্যথার তীব্রতায় ভুগতে থাকেন বলে হৃদরোগের উপসর্গগুলো ব্যথার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। ফলে হৃদরোগের জটিলতা না হওয়া পর্যন্ত অনেকে বুঝতেই পারেন না যে, তারা হৃদরোগে ভুগছেন। হৃদরোগের প্রাথমিক অবস্থায় রোগী সহজেই হাঁপিয়ে যান। বিশেষ করে একটু তাড়াহুড়া করে স্বাভাবিক কাজ করার সময় বা একটু পরিশ্রম করার সময় নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসা, কারও কারও এ সময়ে হালকা বুকব্যথা ও বুক ধড়ফড় করার মতো উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে এবং অনেকের শরীর অত্যাধিক ঘামতে থাকে তারপর শরীর অবসন্ন হয়ে যায়, কাজকর্মে অনীহা দেখা দেয় ও খুব বেশি অলসতা বোধ হয়। হৃদরোগ যখন জটিল আকার ধারণ করে তখন খুব বেশি শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় তার সঙ্গে মাঝে মাঝে বুকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে, শরীর, হাত, পা ও মুখ ফুলে যেতে পারে। শরীর ও পেটে পানি জমা হওয়ার জন্য পেট ফাঁপা, বদহজম, ক্ষুধা-মন্দা, খাদ্য গ্রহণে অরুচি, বমি বমি ভাব ইত্যাদি উপসর্গ দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করে।

 

ডা. এম শমশের আলী

কার্ডিওলজিস্ট

সিনিয়র কনসালট্যান্ট (প্রা.)

ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর