শুক্রবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রবীণ বয়সে মস্তিষ্কের পরিবর্তন

প্রবীণ বয়সে মস্তিষ্কের পরিবর্তন

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরের নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করার সক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। আর বার্ধক্যজনিত পরিবর্তন এবং নানা রকমের রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে। এরমধ্যে অন্যতম মস্তিষ্কের সমস্যা।

 

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতি জনসচেতনতা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ঘটেছে। যেমন- রোগনির্ণয় এবং তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, হৃদরোগ, লিভার বা কিডনি রোগ এমনকি জটিল অপারেশনসহ চিকিৎসায় এসেছে বিস্ময়কর উন্নতি। ফলে মৃত্যুহার যেমন হ্রাস পেয়েছে, তেমনি মানুষের গড় আয়ুও বেড়েছে। ফলে বিশ্বে বয়স্কদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানবজীবন পরিক্রমার সর্বশেষ, অবশ্যম্ভাবী ও স্বাভাবিক পর্যায় হচ্ছে বার্ধক্য। অকাল বা অন্যকোনো কারণে মৃত্যু না হলে, প্রত্যেককে বার্ধক্যের স্বাদ গ্রহণ করতে হবেই। অনেক সমস্যাই আছে যা পাশ কাটিয়ে বা এড়িয়ে চলা যায় সন্তর্পণে বা সুকৌশলে। কিন্তু জন্মের সঙ্গে মৃত্যুর যেমন সম্পর্ক, জীবিত থাকা অবস্থায় বার্ধক্যের সঙ্গেও তেমন। জীবনের এই কঠিন অলঙ্ঘনীয় বাস্তবতা থেকে মুক্তির অবকাশ সৃষ্টিকর্তা রাখেননি।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন মানুষের শরীরের নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করার সমতা লোপ পায়, আর বার্ধক্যজনিত পরিবর্তন এবং রোগগুলো শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে। প্রবীণ বয়সে প্রকৃতিগত  ভাবেই শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে।  যার মধ্যে অন্যতম হলো মস্তিষ্কের সমস্যা।  বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কে যে ধরনের পরিবর্তন আসে, তাকে বলা হয় ‘ব্রেন এট্রফি’। ফলশ্র“তিতে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ডিমেনসিয়া বা স্মৃতিবিভ্রম এমনকি আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত হয়ে মস্তিষ্কের কার্যক্রম আরও হ্রাস পায়। সাধারণত ষাটোর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিদের এ সমস্যা দেখা যায়। এ ছাড়া মাথাঘোরা, হাত-পা কাঁপা যাকে বলে ‘পার্কিনসন্স ডিজিজ’ ইত্যাদি নানা ধরনের মস্তিষ্কের রোগও প্রবীণদের মাঝে দেখা যায়। এর কারণ হলো, বয়স বাড়লে মস্তিষ্কে সমস্যা এমনিতেই হতে পারে। তবে মাথায় আঘাত পেলে, উচ্চরক্তচাপ বা অনান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা বংশগত কারণেও এ ধরনের সমস্যা হতে পারে।

 

মস্তিষ্কের রোগের লক্ষণ

♦  মস্তিষ্কে সমস্যা হলে বিজ্ঞ মানুষও শিশুর মতো আচরণ করে। স্বাভাবিকতা থাকে না আচরণে। এ কারণে ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হয়, অনেক সময় বুঝতে পারে না যে সে কী ধরনের আচরণ করছে।

♦   অযথায় রেগে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, বিরক্তি ভাব দেখায়, ঘুম কম হয়। স্মৃতি শক্তির মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো মনে রাখতে পারে না, আবার পুরনো অনেক বছর আগের ঘটনাও মনে করতে পারে।

♦   ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারে না, প্রস্রাব-পায়খানা করতে সমস্যা হয়, কথাবার্তা বলতেও সমস্যা হয়।

♦   একটা পর্যায়ে গিয়ে বিছানায় পড়ে যায়।  হতাশা বৃদ্ধি পায় এবং হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো মানসিকতা কাজ করে।

 

চিকিৎসা

প্রবীণ বয়সে মস্তিষ্কের এ ধরনের রোগ আসলে পুরোপুরি ভালো হয় না। নেই কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসাও। সাধারণত লক্ষণ বুঝে সাহায্যকারী ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসক। প্রবীণদের স্বাস্থ্যসমস্যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি বিশেষায়িত বিভাগ। চিকিৎসাবিজ্ঞানে কিছু রোগ আছে যা শুধু বয়স্কদেরই হয়। তাই ওষুধ ও খাবার দুই ক্ষেত্রেই সতর্ক থাকতে হবে।

 

পরিবারের দায়িত্ব

আমাদের দেশে এখনো বয়স্কদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা সীমিত। এই বয়সে অনেক রোগই দেখা যায়, সুনির্দিষ্ট উপসর্গ থাকে না বা বয়স্করা সেগুলো ঠিকমতো অনুভব করেন না বা ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারেন না। অনেক সময় দেখা যায়, খুব জটিল বা মারাত্মক অসুখে বৃদ্ধ রোগী সাধারণ অবসাদ, দুর্বলতা, অস্বস্তি এ ধরনের সমস্যার কথা বলছেন। এমন ক্ষেত্রে পরিবার থেকেও নজর দেওয়া হয় না, এমনকি অনেক চিকিৎসকও যথার্থ মনোযোগ দেন না, হয়তো বার্ধক্যজনিত বলে মনে করেন। এভাবে অবহেলার ফলে অনেক রোগ নিরাময় সম্ভব হয় না। এসব ক্ষেত্রে পরিবারকে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হয়। প্রবীণদের প্রতি পরিবারের অন্যান্যদের সহানুভূতিশীল আচরণ করা খুব জরুরি। রোগীকে সুষম খাবার খাওয়াতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করার ব্যবস্থা করতে হবে, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। পারিবারিক সাহচর্য আর যথোপযুক্ত সেবাযত্নই পারে এ ধরনের রোগীকে সুস্থ করে তুলতে।

 

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

ডিন, মেডিসিন অনুষদ,

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর