শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পোশাকে ফেব্রিক ও প্যাটার্ন বৈচিত্র্য

পোশাকে ফেব্রিক ও প্যাটার্ন বৈচিত্র্য

♦ মডেল : উম্মে সানজিদা জিনিয়া ♦ হছবি : রাফিয়া আহমেদ ♦ হপোশাক : অঞ্জন’স ♦ মেকওভার : ওমেন্স ওয়ার্ল্ড

আবহাওয়ার বদল মানেই পোশাক রীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনটি প্রথমে পরিলক্ষিত হয় পোশাকের ফেব্রিকে। দ্বিতীয় পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় পোশাক প্যাটার্নে। তবে পরিবর্তন যতই হোক পোশাকটি হওয়া চাই ট্রেন্ডি। শীত চলে এসেছে। তাই পোশাক ভাবনার এই বৈচিত্র্য নিয়ে তরুণদের মাঝে থাকছে আলাদা ভাবনা। শীতের পোশাকের যুগোপযোগী ফেব্রিক ও প্যাটার্ন বৈচিত্র্য নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন- তানিয়া তুষ্টি

 

শীত নিবারণে বেছে নেওয়া হয় উষ্ণদায়ী কাপড়ের পছন্দসই পোশাক। কিন্তু পরিহিত  পোশাকটি শুধু উষ্ণ হলেই এখন আর চলছে না। ফ্যাশন সচেতনরা এখন দারুণ রুচির। ক্রেতা হিসেবে তাদের চুলচেরা বিশ্লেøষণ, ফ্যাশনে সচেতনতা, যুগের হাল-হকিকত সম্পর্কে রাখা ধারণা রীতিমতো বিক্রেতাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেয়। তারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী প্যাটার্নে তৈরি পোশাককে বেশি প্রাধান্য দেন। শুধু তাই নয়, তাদের পোশাক ভাবনায় উপস্থিত থাকে দেশীয় ভাবনাও। তরুণদের পোশাক ভাবনায় সব ধরনের এমন উপস্থিতি এখন পোশাক শিল্পে আশা জাগানিয়া লক্ষণ বটে। আর এ কারণেই হয়তো শীতের পোশাকে প্রস্তুতকারকদের এত এত বৈচিত্র্যের সমাহার ঘটাতে হচ্ছে।

 

 

আজকাল আমাদের সংস্কৃতিতে পশ্চিমার প্রভাব অনেকখানি। ক্লাস, আড্ডা, ঘুরতে যাওয়া এমনকি প্রাইভেট জব অফিসে এই ধরনের পোশাক চলছে হরহামেশা। তাই  শীতের উষ্ণ ও আরামদায়ক পোশাকে যুক্ত হচ্ছে দারুণ সব প্যাটার্ন। দেশীয় পোশাক ভাবনার মিশেলে পাশ্চাত্য ডিজাইনের এসব পোশাককে ফিউশনধর্মী পোশাকও বলা চলে। আগের দিনে শীতের পোশাক মানেই উল, কটন অথবা খদ্দর ছিল। কিন্তু সেখানেও এখন যোগ হয়েছে জিন্স, ডেনিম, সিঙ্গেল জার্সি, লিনেন, ভিসকজ, জর্জেট। ফেব্রিক বৈচিত্র্যের এই রেশ রেখে আমাদের দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো তাদের  ভিন্ন প্যাটার্নের পোশাক পসরা সাজাচ্ছেন। ক্রেতার চাহিদা আর যুগের হাওয়া সেখানে মিলেমিশে একাকার। এককথায় ট্রেন্ডি পোশাকের ঘরানায় তৈরি হয় এখনকার অধিকাংশ শীত পোশাক। তবে দেশীয় বা পুরনো ডিজাইনগুলোরও কদর সেখানে উপস্থিত। কখনো স্বাতন্ত্র্যভাবে কখনো ফিউশন নিয়ে এসব ডিজাইন দেখা যাচ্ছে। তবে এখনকার প্রতিটি পোশাক মানেই নতুন কিছু স্টাইল।

 

এবারও শীত উপলক্ষে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো সেজেছে বৈচিত্র্য নিয়ে। পুরনো ও নতুন ফ্যাশনের সংমিশ্রণে জমে উঠেছে পোশাক বাজার। হয়তো অনেক আগেই দোকানিদের কাছে শীতের আগমনী বার্তা পৌঁছে গিয়েছিল, তাই শীত আসতে না আসতেই দোকানে গরম পোশাকের যেন কমতি নেই। শীতকে কেন্দ্র করে নানা রং আর ঢং-এর পোশাক এরই মাঝে চলে এসেছে তাদের আয়োজনে।

 

ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণীরা শীতকালে নিত্যনতুন ফ্যাশনের সঙ্গে ভিন্নমাত্রার ফ্যাশনের মিশেল ঘটানোর সুযোগ পায়। বছরজুড়ে তারা যেন অপেক্ষাও করে এই সুযোগের। কারণ এই সময় না আছে রং এর বাছ-বিচার, না আছে পুরু কাপড়ের বাছ-বিচার। ভাবতে হয় না একটু পুরু হলেই অস্বস্তি আসবে অথবা রঙের কারণে গরম ধরবে। তাই পোশাক নিয়ে ইচ্ছেখুশি নিরীক্ষা চালনোই যায়। তাছাড়া প্রতিনিয়ত তরুণ-তরুণীদের ফ্যাশন পরিবর্তন হচ্ছে। তাই তাদের যদি নতুন কোনো প্যাটার্নের পোশাকে নতুন রূপে দেখা যায়, তাহলে এতে মোটেই অবাক হবার কিছু নেই।

 

 

আগে ধারণা ছিল দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো সব সময়ই দেশি উপকরণ নিয়ে কাজ করবে। আর তাই ধরেই নেওয়া হতো এসব হাউসে, দেশীয় উপকরণে সালোয়ার কামিজ, লং জ্যাকেট, পঞ্চ পাওয়া যাবে। ফুলহাতা উজ্জ্বল রঙের লম্বা পাঞ্জাবিও থাকবে। কিন্তু প্রচলিত এই ধারণার কিছুটা বদল আসছে। এখন তরুণীরা পছন্দ করছে মোটা কাপড়ের টপস, লেগিংস আর বাহারি ডিজাইনের কার্ডিগেন। শাড়ির ক্ষেত্রে ফুলস্লিভ ব্লাউজ আর শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে শাল। ছেলেরা টি-শার্ট বা শার্টের ওপরে ব্লেজার, জ্যাকেটকে প্রাধান্য দিচ্ছে। অথবা একটু ঢিলেঢালা পুলওভারও প্রাধান্য পাচ্ছে। আর এসব চিন্তা মাথায় রেখে দেশের অনেক ফ্যাশন হাউসই এই ঘরানার পোশাক তৈরি করছে ক্রেতাদের জন্য।

 

এই শীতে  লেগিংসের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। ঢিলেঢালা সোয়েটারের সঙ্গে  লেগিংস আর পা ঢাকা জুতায় দারুণ মানাবে। ভি আকৃতির টি-শার্টের সঙ্গে সোয়েটার আর একটা স্কার্ফ জড়িয়ে নিলেও দেখতে ভালো লাগবে। এখন চেক শার্টও তরুণীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। শীতকাল হলো আঁটসাঁট চাপা জিন্স পরার উপযুক্ত সময়। এক্ষেত্রে গাঢ় রং-এর প্রাধান্য দেওয়া উচিত। বিভিন্ন রং-এর শার্টের সঙ্গে অল্প কিছু গয়না কিংবা গয়না না পরে কেবল স্কার্ফ ব্যবহার করা যায়। স্কার্ফ এমন একটা ফ্যাশন অনুসঙ্গ, যা কি না শীত বা গ্রীষ্ম যে কোনো ঋতুতে যে কোনো পোশাককেই দারুণ আকর্ষণীয় করে তোলে। সাদা টপ আর  প্লেইন জিন্সের সঙ্গে একটা স্কার্ফ জড়িয়ে নিলে ভীষণ মার্জিত আর স্টাইলিশ দেখাবে।

 

ছেলেদের জন্য শীত উপলক্ষে জ্যাকেটের পাশাপাশি ফুলহাতা টি-শার্ট, ফুলহাতা শার্ট, খদ্দর কাপড়ের আরামদায়ক ট্রাউজারও আছে। এবারের শীতে আঁটসাঁটের পাশাপাশি ঢিলেঢালা  পোশাকের সবই পরতে পারেন তরুণরা। পশমি বা উলের ক্রুসকাটার কাজ করা সোয়েটার পরছেন অনেকেই। সোজা কাটের পোশাকের সঙ্গে বেছে নিতে পারেন হাঁটু পর্যন্ত- লম্বা ব্লেজার।

জ্যাকেট আর ব্লেজারের সংমিশ্রণে তৈরি নতুন ধরনের শীতের পোশাক উঠে আসছে তরুণদের পছন্দের তালিকায়। অফিসের প্রয়োজনে ব্লেজার পরতে পারেন। তবে আগের মতো আর সাদা, কালো বা ছাই রঙের ব্লেজার নয়। এবার বেছে নিতে পারেন গাঢ় মেরুন, কালো হলুদের মিশ্রণ, বেগুনি, পার্পেল রঙের ব্লেজার। এ ছাড়া হুডি জ্যাকেটও ধরে রাখছে হাল ফ্যাশনের আবেদন। আর মাফলার তো আছেই। ছেলে-মেয়ে সবার পছন্দের শীর্ষে উঠে এসেছে রঙিন মাফলার।

 

ইদানীং তরুণরা আরও কিনছেন প্রিন্স কোট ও  ব্লেজার। পার্টি কিংবা নানা ধরনের অনুষ্ঠানে এসব পোশাকে দেখা যায় তাদের। লেদারের জ্যাকেটও জায়গা করে নিয়েছে শীতের ফ্যাশনের সঙ্গে। শীত তো নিবারণ হয়ই। এই পোশাকে ফ্যাশনটাও হয় জুতসই। ক্যাজুয়ালের মধ্যে ছোট ও বড় চেকের কাপড়ের স্যুট বেশ পছন্দ করেছে ক্রেতারা। এ ছাড়া জ্যাকেট ও সোয়েটারের কদর থাকে সব সময়ই। এদিক থেকে অবশ্য এবার সুতির চেয়ে প্যারাসুট বা পলেস্টার কাপড়ের জ্যাকেট এগিয়ে আছে। শীত জেঁকে বসুক বা না বসুক শীতের পোশাকে শীত উদযাপন করতে আগ্রহী তরুণরা। এ কারণে নামিদামি দোকান থেকে শুরু করে ফুটপাথের দোকানেও শীতের নতুন পোশাকের দেখা মিলছে।

 

এবারের শীতে ছেলেদের জন্য ডেনিম হুডিস, নিটেড ব্লেজার, জগারস ও ট্র্যাক প্যান্টস হলো প্রধান আকর্ষণ। এ ছাড়া রয়েছে সোয়েট শার্ট, শার্ট, জ্যাকেট, ক্যাজুয়াল ব্লেজার, লাইট ওয়েট সোয়েটার, ফুলস্লিভ টি-শার্ট, পোলো টি-শার্ট, চিনোস, ডেনিম, কার্গো, বারমুডা ও শর্টস। ফেব্রিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে নিটেড ডেনিম, পিসি মিলাঞ্জ, ফ্রেঞ্চ টেরি, সিঙ্গেল জার্সি, লিনেন, ভিসকজ ইত্যাদি। রং হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ব্ল্যাক, রেড, মেরুন, পার্পল, অ্যাশ, গ্রেমিল্যাঞ্জ, অরেঞ্জ ও ব্লুু। নেক লাইনে ভিন্নতা যোগ করা হয়েছে কখনো টার্টল নেক, ম্যান্ডারিন কলার, বেসবল কলার, হুডি ইত্যাদি দিয়ে।

 

এবারের শীতে মেয়েদের পোশাক পরিকল্পনায় প্রাধান্য পেয়েছে নিটেড শার্ট, সোয়েটার, শ্র্যাগ, লিনেন জ্যাকেট, কেপ ও পঞ্চো। বরাবরের মতো শাল, সালোয়ার-কামিজ, লং কামিজ, টিউনিক তো রয়েছেই। ফেব্রিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে উল, সিঙ্গেল জার্সি, লিনেন, ভিসকজ, জর্জেট, কটন ইত্যাদি। রং হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ফিউশিয়া পিংক, পার্পল, রেড, ব্ল্যাক, অরেঞ্জ, লাইট পিংক, ব্লু, ইয়েলো ও টিল। বটমে প্রাধান্য পেয়েছে অ্যাংকল লেংথ লিনেন প্যান্ট, ইন্ডিগো কালার রিপড জিন্স, চিনোস এবং বাহারি পালাজ্জো, কুলেটস ও হারেম প্যান্ট ইত্যাদি। মেয়েদের পোশাকগুলো বেশির ভাগই লং। বিশেষ করে কিছু পোশাক তৈরি করা হয়েছে কুর্তি ও গাউন স্টাইলে। এগুলো শীত নিবারণে যেমন উপযোগী, তেমনি উপযোগী ফ্যাশনে। যে কোনো গড়নের মেয়েদের এই ধরনের পোশাকে মানিয়ে যায়। দেখতেও খুব স্মার্ট লাগে। কোথাও যেতে ঝটপট রেডি হতে পোশাকের ওপর নির্ভর করলেই চলে। এ ধরনের পোশাকে অনুষঙ্গের ব্যবহার কম করলেও চলে। ফেব্রিক ও প্যাটার্ন বৈচিত্র্যের পোশাকে আপনার এবারের শীত হতে পারে উপভোগের।

সর্বশেষ খবর