শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

শীতে স্টাইলিশ স্ট্রিটওয়্যার

শীতে স্টাইলিশ স্ট্রিটওয়্যার

♦ মডেল : আল ফাহাদ বারি, নাজিবা নওশিন ও আহমেদ অনিক ♦ পোশাক ও ছবি : রাইজ

শীতের উষ্ণতা এখন আর শুধুই সেকেলে চাদর-শালে আবদ্ধ নেই। হাল ফ্যাশনে যুক্ত হয়েছে ওয়েস্টার্ন আউটফিট। শীত আসা উপলক্ষে দেশীয় আউটলেটগুলো সেজেছে সময়োপযোগী বাহারি ডিজাইনের ওয়েস্টার্ন ধাঁচের স্ট্রিটওয়্যারে। তরুণ-তরুণীরাও ছুটছেন নিজেদের পছন্দের পোশাকটি কিনতে। এই শীতের স্টাইলিশ স্ট্রিটওয়্যার নিয়ে আজকের প্রচ্ছদ। বিস্তারিত জানাচ্ছেন- তানিয়া তুষ্টি।

 

হাল আমলের ফ্যাশন মানেই বৈচিত্র্যময়। ফ্যাশনে নতুন হাওয়া লাগাতে আবহাওয়ার পরিবর্তন সবচেয়ে বড় অজুহাত বটে। সে হিসেবে পোশাক বৈচিত্র্য আনতে শীতকাল দারুণ একটি উপলক্ষ। দেশি-বিদেশি নানা স্টাইল ভর করে এই ফ্যাশন বৈচিত্র্যে। যে কোনো পরিবেশে তা মানিয়েও যায় বেশ। এই সময় রং আর ফেব্রিকের বিচারে যা খুশি তা ব্যবহার করাও যায়। খুব বেশি বাধ্যবাধকতার ধার ধারে না উদ্দাম তরুণরা। এ সময় তাদের ফ্যাশনের প্রধান অনুষঙ্গ হয় স্টাইলিশ স্ট্রিটওয়্যার। 

 

শীত ফ্যাশনে লেগেছে উষ্ণতার ছোঁয়া। বছরজুড়ে যেসব স্টাইল কেবল চোখেই দেখেছেন, প্যাঁচপ্যাঁচে গরমের কারণে করা হয়ে ওঠেনি। এবারের শীতে সেসব স্টাইল চোখ বুঝে ট্রাই করতে পারেন। রাতের পার্টি কিংবা দিনের বেলা ক্লাস, আড্ডা, ঘোরাঘুরি সবই স্টাইলিশ হবে শীতের আদর্শে স্ট্রিটওয়্যারে। স্টাইল হবে, শীতেও আসবে উষ্ণতা।

 

স্ট্রিট ফ্যাশন কালচার নিয়ে পোশাক ডিজাইনারদের নিরীক্ষণের শেষ নেই। চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই ফ্যাশনকে আমাদের দেশীয় ফ্যাশনের সঙ্গে ফিউশন স্টাইলে মিলিয়েছে। এখন যেন এটি আমাদেরই কালচারের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবরকম পোশাকেই যখন কমবেশি ওয়েস্টার্ন লুক চলে এসেছে, শীতের পোশাকটিই বা বাদ যাবে কেন! ধুর; শীত মানেই তো উষ্ণদায়ী ওয়েস্টার্ন স্ট্রিটওয়্যারের ছড়াছড়ি। তাছাড়া সময়টাই এমন যে কিশোর থেকে তরুণী এমনকি মধ্য বয়সী নারীও মেতে উঠতে চান এই পোশাকে। শীতের এসব পোশাকের ফেব্রিকের ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্নতা। মোটা, পাতলা, মাঝারি পুরুত্বের দেশি-বিদেশি সব কাপড়ের স্থান থাকে। এর মধ্যে রয়েছে বোম্বার জ্যাকেট, ডেনিম জ্যাকেট, ব্লেজার, সোয়েটশার্ট, সোয়েটার, ব্লেজার জ্যাকেট, লং সোয়েটার ও জ্যাকেট, হুডিসহ নানান ডিজাইনের শীতকালীন শার্ট ও রিপড ডেনিম প্যান্টস।

 

আজকালের তরুণদের প্রধান আকর্ষণের জায়গায় পরিণত হয়েছে স্টাইলিশ স্ট্রিটওয়্যার। এ বিষয়কে মাথায় রেখে আমাদের দেশের কিছু কিছু ফ্যাশন হাউস শুধু স্ট্রিটওয়্যার নিয়েই চুলচেরা নিরীক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের আয়োজনের বেশিরভাগই এ ধরনের পোশাককে ঘিরে। ২০১৪ সালে ঠিক এই থিমকে মাথায় রেখে বাংলাদেশের ফ্যাশন জগতে যাত্রা শুরু করে মডার্ন লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘রাইজ’। তাদের যাত্রা স্ট্রিট ফ্যাশনকে ভিত্তি করে। ‘প্রাইড ইন ইওরসেলফ’ স্লোগান নিয়ে দৃঢ় বিশ্বাসী রাইজ ব্র্যান্ড শীতকালীন কালেকশনে রাইজ নিয়ে এসেছে নতুন ডিজাইনে স্ট্রিটওয়্যারের বিশাল কালেকশন।

 

ব্র্যান্ডটির মার্কেটিং ম্যানেজার নাজিউর রহমান বলেন, ‘রাইজ বাংলাদেশের সর্বপ্রথম স্ট্রিটওয়্যার ফ্যাশন ব্র্যান্ড। তরুণদের পছন্দসই ও নজরকাড়া এসব পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে রাইজ সবসময়ই প্রাধান্য দিয়ে থাকে সেরা মানের ফেব্রিক এবং সর্বোত্তম কোয়ালিটি। ফিটিং এবং ডিটেইলিংয়ের ক্ষেত্রে থাকে বিশেষ নজর যা আমাদের প্রত্যেকটি পণ্যকে করে তোলে অনন্য।’

 

কেমন হবে শীতের পোশাক

স্ট্রিটওয়্যার হতে হবে স্টাইলিশ আর কাপড়েও থাকতে হবে বৈচিত্র্য। তবেই তো আসবে শীত ফ্যাশনে নতুনত্ব। কাটছাঁটে বৈচিত্র্যের অভাব থাকবে না। নিট, ফিস এসব কাপড়ের ডিজাইন পোশাকের চাহিদা থাকে বাড়তি।

 

পোশাক কালেকশনে শীত শুধু তরুণদের উষ্ণতার অনুষঙ্গই নয়। নিজেকে ফ্যাশনেবল করে তোলার উপলক্ষও বটে। এখানেই ফুটে ওঠে মুনশিয়ানা। কলেজ, ভার্সিটি পড়ুয়া তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে এক্সিকিউটিভ লেভেলের নারী-পুরুষরাও আজকাল  পোশাকগুলো পরছেন।

 

আমাদের দেশে বর্তমানে হাই স্ট্রিট বা হাই ফ্যাশনে আগ্রহীর সংখ্যা নেহায়েতই কম নয়। ওয়েস্টার্ন ট্রেন্ডে লং শার্ট, পাতলা সোয়েটার, বেশ কিছু স্কার্ফ, টাইটস, প্যান্টস, বেসিক টি-শার্ট, কার্ডিগান, ফুল লেন্থ সোয়েটার, ক্যাজুয়াল ব্লেজার, জ্যাকেট-হুডি যে কোনো কোসেটের খুব সাধারণ এই পোশাকগুলোই এখন ব্যাপক জনপ্রিয়।

নানা নকশার ‘আউটার উইন্টার’ অর্থাৎ অন্য পোশাকের ওপর পরার মতো আরেকটি পোশাক, যেমন- কোট, জ্যাকেট, ব্লেজার, সোয়েটার ইত্যাদি বাজারে আসা শুরু হয়েছে এর মধ্যে। পশ্চিমা ট্রেন্ড মেনেই নকশা করা হচ্ছে এসবের, তবে কাপড়টা এ দেশের আবহাওয়া উপযোগী।  যেমন উল বা ফিস নয়, বরং সুতি ও অ্যাক্রিলিক মিশ্রণে  সোয়েটার বানানো হয়েছে। এ ছাড়া মেয়েদের জন্য রাউন্ডনেক, টার্টলনেক সোয়েটার থাকছে। আছে নানা রকম পঞ্চো আর শ্রাগ।

 

উপযোগী সাজ

স্ট্রিটওয়্যারের সঙ্গে সাজসজ্জা হতে হবে একদমই বুঝেশুনে। তার আগে জানা দরকার পোশাক সম্পর্কে। ক্যাজুয়াল ড্রেস আর ফর্মাল ড্রেসের সাজ অবশ্যই ভিন্ন ধরনের হবে। ফর্মাল প্যান্ট-শার্ট পরলে সাজগোজ হবে একদমই সীমিত। হালকা মেকআপের সঙ্গে হালকা অর্নামেন্টস। ক্যাজুয়াল পোশাকের সঙ্গে জুড়ে নিতে পারেন মানানসই অর্নামেন্টস। নয়তো পুরো আয়োজনটাই মাটি হয়ে যাবে। ফর্মাল বা ক্যাজুয়াল ড্রেস যাই হোক না  কেন, ড্রেসের ধরনের পাশাপাশি মেকআপ হতে হবে দিনরাতের ওপর নির্ভর করে। দিনের বেলায় ক্যাজুয়াল  ড্রেসের মেকআপ খুব সাদামাটা হওয়া চাই। তাই বলে ফ্যাকাশে ধরনের নয়। হালকা সাজের মধ্যে পাউডার-কাজল ব্যবহার করতে পারেন। ঠোঁটে হালকা গোলাপি বা বাদামি গ্লস লাগাতে পারেন। ম্যাট লিপস্টিকও লাগাতে পারেন। ফর্মাল পোশাক পরলে মেকআপে একটা মিশ্রভাব থাকতে হবে। প্রথমে ফাউন্ডেশন দিন। তৈলাক্ত ত্বকে ম্যাট আর শুষ্ক ত্বকে অয়েল বেজড ফাউন্ডেশন দিন। আইশ্যাডো ব্যবহার করতে হলে মোটা করে আইলাইনার দিতে পারেন। তবে এটা রাতের বেলায় করবেন। আর দিনের বেলায় চুল খোলা রাখলে ভালো লাগবে।

 

এক্সেসরিজ ছাড়া এই লুকে পূর্ণতা আসে না। ড্রেসের ওপর ভিত্তি করে এক্সেসরিজ ব্যবহার করতে পারেন। হাতঘড়ি, কানে হালকা দুল, ব্রেসলেট মানানসই এক্সেসরিজ ইচ্ছামতো পরে নিন। লেয়ারিংয়ের সঙ্গে স্ট্যাক ফিঙ্গার রিং সেট খুব ভালো লাগে। তবে ড্রেসের রঙের সঙ্গে মানানসই টিপ পরা উচিত। ফর্মাল ড্রেস রাতে পরলে প্যান্ট-টি-শার্টের ক্ষেত্রে চুল খোলা রাখুন। পছন্দানুযায়ী ও নিজের গড়ন অনুযায়ী বেছে নিন সব  প্রডাক্ট ও এক্সেসরিজ। সেটআপ-গেটআপের সঙ্গে সঙ্গে সমান তালে টেনে দিন ম্যাচিং লাইনটাও। গড়ে নিন নিজস্ব স্টাইল। যেখানেই থাকুন কাছে বা দূরে, ঘরে বা বাইরে উপভোগ করুন শীত, স্টাইলিশ শীত।

সর্বশেষ খবর