শুক্রবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিয়েবাড়ির তত্ত্ব

সাদিয়া সারা

বিয়েবাড়ির তত্ত্ব

ছবি : ড্রিমি ওয়েডিং

বিয়ের কেনাকাটা শুরু তত্ত্ব দিয়ে। বিয়ের কেনাকাটার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো তত্ত্ব। সাধারণত গায়ে হলুদের আনুষ্ঠানিকতায় তত্ত্বের আদান-প্রদান হয়। কনেপক্ষ হোক বা বরপক্ষ, দুই বাড়ির ক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব পায় এটি। আসলে, বিয়ে মানে তো বর-কনের মিলন নয়, দুই বাড়ির মানুষের মাঝে আত্মীয়তার বন্ধন। আত্মীয়তার এই চিরন্তন বন্ধন অটুট রাখতে তত্ত্বের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে মনে রাখবেন, কুটুমবাড়িতে পাঠানো এই তত্ত্ব আপনার রুচির পরিচায়ক। তাই হবু আত্মীয়র তত্ত্ব বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিন। এতে অবশ্য কোনোরকম কনফিউশন ছাড়াই খোলামেলা আলাপ করে নিতে পারেন হবু আত্মীয়র সঙ্গে। আজকাল দুই পরিবার এক হয়ে নানা বিষয়ে খোলামেলা আলাপ করে নেন। আগেভাগেই জেনে নিন, কুটুমবাড়ির পরিবারের সদস্যরা কেমন পোশাক পছন্দ করেন। হবু শ্বশুর-শাশুড়ির পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিন। তত্ত্বে পোশাক তো পাঠাবেনই, সঙ্গে আরও বিশেষ কিছু। হবু শ্বশুরবাড়িতে ননদ বা শ্যালিকা থাকলে পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে ব্যাগ, গয়না, সুগন্ধি এবং জুতাও দিতে পারেন। এতে অবশ্য ননদ বা শ্যালিকা খুশিতে লুটোপুটি খাবে। বাড়ির খুদে সদস্যদের জন্য অবশ্যই নিন সফট টয় বা চকোলেট। বাড়ির পুরুষ সদস্যদের জন্য দিতে পারেন গ্রুমিং গ্যাজেট বা স্মার্ট কোনো এক্সেসরিজ।

 

পোশাকের সঙ্গে মিষ্টির তত্ত্বও কিন্তু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আত্মীয়ের বাড়ির কারোর ডায়াবেটিসের প্রবলেম থাকলে সুগার ফ্রি মিষ্টি পাঠান। জাঁকজমকপূর্ণ পেপারে মোড়ানো মিষ্টির প্যাকিং তো অতি আধুনিক। তবে সাবেকিয়ানা লুক আনতে মাটির হাঁড়িতে মিষ্টি পাঠাতে পারেন হবু শ্বশুরবাড়ি। তত্ত্বে রাখতে পারেন ফিরনি-পায়েস, পুডিং, নোনতা ড্রাই ফ্রুটস, চিপস, চকোলেট এবং নানারকম কাবাব। তত্ত্বে মিষ্টির পাশাপাশি থাকতে পারে লাড্ডু, বালুশাই, রসকদম, প্রাণহরা ইত্যাদি। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে তত্ত্বে থাকতে পারে পিঠা-পুলি। নানারকম নকশি পিঠা সাজিয়ে তত্ত্ব হিসেবে পাঠাতে পারেন। এ ছাড়া ওয়েস্টার্ন কালচারকে ধারণ করতে তত্ত্বে রাখতে পারেন গায়ে হলুদের উপহারস্বরূপ কেক। বাড়ির মুরব্বিদের জন্য তত্ত্বে অবশ্যই রাখতে হবে নানারকম ফল এবং পান। তত্ত্বকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে হবু শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা কবিতা বা মজার ছড়া লিখে দিতে পারেন। এই ছোট ছোট ছোঁয়া দুই পরিবারের ভবিষ্যতের বন্ধনকে সুদৃঢ় করবে।

 

তত্ত্বে কী পাঠাবেন সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি কীভাবে পাঠাবেন সেটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দর করে সাজিয়ে পাঠানো উপহারও অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এজন্য অবশ্য ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রফেশনালদের সাহায্য নিতে পারেন। কেননা, বিয়ের হাজারও ব্যস্ততা সামাল দিয়ে এসব তত্ত্ব সাজানো একপ্রকার মুনশিয়ানার ব্যাপার। যা সবাই সামাল দিতে পারেন না। ভুল করে বসেন অনেকেই। ফলে সম্পর্কে বন্ধনে শুরুতেই গলদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এক্ষেত্রে প্রফেশনালদের সাহায্য নিয়ে কাজটি সেরে ফেলুন। এক্ষেত্রে আধুনিক ডিজাইনের কারুকাজ করা ট্রে, বেতের ঝুড়ি, বাক্স, পুঁটলি, বটুয়া ইত্যাদিতেও তত্ত্ব পাঠাতে পারেন। তবে বাঙালির ঐতিহ্যের কথা বললেই চলে আসে ডালা-কুলার কথা। আর এই ডালা-কুলার তত্ত্বে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় বর-কনের হলুদের তত্ত্ব। প্রতিটি ডালা-কুলার আলাদা আলাদা পাত্রের একেকটিতে হলুদ, মেহেদি, উপটান ও প্রদীপ থাকে। সাধারণত হলুদ এবং মেহেদি বেটে আলাদা পাত্রে নিয়ে কালার পেপারে মুড়ে ডালা-কুলায় সাজিয়ে তত্ত্বে পাঠানো  হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর