শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

কানে কুন্দন পরনে সুতি

কানে কুন্দন পরনে সুতি

♦ মডেল : সাবরিনা সুলতানা কেয়া ♦ পোশাক : অঞ্জনস ♦ মেকওভার : বেয়ার বিজ বডি ওয়েক্স ♦ ছবি : রাফিয়া আহমেদ

বাঙালি নারীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক সুতি শাড়ি। এই ঐতিহ্যের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বিশেষ কিছু গয়না। যেমন কানের দুল কুন্দন। তাই কানে কুন্দন আর পরনে সুতি শাড়ির সম্মিলন যেন বাঙালি সাজের পরিপূর্ণ রূপ। লিখেছেন-  তানিয়া তুষ্টি

 

শাড়িতে সুন্দর বাঙালি নারী। জর্জেট আর বিদেশি নানা কাপড়ের ভিড়ে দেশি সুতি শাড়ি বছরজুড়েই আলাদা আকর্ষণের কারণ। এমনকি এই শাড়ি আপনার সাজেও এনে দিতে পারে নতুন চমক। যারা শাড়ি পরতে খুব বেশি পছন্দ করেন তারা ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে বারো মাসই বেছে নিতে পারেন সুতি শাড়ি। তবে শাড়ির পূর্ণতা আনতে ঐতিহ্য হিসেবে মিশে আছে বিশেষ কিছু গয়না। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কানের দুল কুন্দন। সুতি শাড়ির সঙ্গে এটিও তৈরি করে নিয়েছে নিজের অস্তিত্ব। কানে কুন্দন পরনে সুতিতে, এ যেন পুরোপুরি বাঙালি নারীর রূপ। 

বাঙালি নারীর সাজ শাড়িতে পূর্ণ হলেও ব্যস্ততা আর কাজের কারণে অনেকেই শাড়ি এড়িয়ে চলেন। এরপরও তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সী নারী নিজেকে বৈচিত্র্যময় শাড়িতে রাঙাতে পছন্দ করেন। আর তখন প্রথম পছন্দ হিসেবে চলে আসে সুতি শাড়ির প্রসঙ্গ। অনেকেই এই সুতি শাড়ি পরার সময় এর রকমভেদ বাছাইয়ে দ্বিধায় ভোগেন। এক্ষেত্রে সবার আগে জানতে হবে, সুতি শাড়ি নানা রকমের হয়। যেমন- তাঁত, কোটা, চেক এবং জামদানি। এর বাইরে শাড়ির আঁচল এবং পাড়ের ধরনেও ভিন্নতা থাকে। আবার সুতি শাড়িতে ব্লকপ্রিন্ট, বাটিক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, ভেজিটেবল ডাই, অ্যাম্ব্রয়ডারি করে আনা হয় রকমফের বৈচিত্র্য। তাই শাড়ি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সবার আগে নিজের পছন্দ আর স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে।

 

যুগ যুগ ধরে বাঙালির উৎসব থেকে শুরু করে নিত্যদিনের ব্যবহারে সুতির শাড়ি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অনেকের ধারণা সুতি শাড়ি বুঝি সাবেকি ঘরানার। সুতি শাড়ি ঐতিহ্যবাহী কিংবা সাবেকি ঘরানার ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে এ শাড়ি দারুণ স্টাইলিশও বটে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুতি শাড়ির আঁচল এবং পাড়ে নানা বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে। এসব ক্ষেত্রে দেশি ফ্যাশন হাউসগুলো অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। কেবল পাড় কিংবা আঁচলই নয়, কুঁচিতেও থাকছে আলাদা ডিজাইন। শাড়ির নকশা ও রঙেও রয়েছে ভিন্নতার ছোঁয়া। দেশি সুতি শাড়িতে এনেছেন কাঁথা স্টিচ, ফুলেল প্রিন্ট, জামদানি প্রিন্ট, কুঁচি প্রিন্ট, অ্যাপ্লিক, গুজরাটি কাজ, জ্যামিতিক নকশাসহ নানারকম ডিজাইন। শুধু তাই নয়, মোটা সুতি কাপড়ের পুরনো ট্রেন্ড ভেঙে কাপড়েও এনেছেন পরিবর্তন। এখন কোটা, নেট সুতি ও ফাইন সুতির অনেকরকম শাড়ি পাওয়া যায়। কিছু শাড়ি। এসব শাড়ি দেখতে অবিকল সুতির মতো। এগুলো দারুণ আরামদায়কও বটে। এ ধরনের শাড়ির মধ্যে কিছু কিছু হাফ সিল্কের শাড়িরও দেখা মেলে। এ তো গেল শাড়ির প্রসঙ্গ, সাজে পূর্ণতা আনতে গয়নার ভূমিকা অপরিসীম। শুধু গয়নার ব্যবহারের কারণেই আটপৌরে শাড়ি পরেও আপনি হয়ে উঠতে পারেন অনন্য। সুতি শাড়ির সঙ্গে ধাতব, মাটি, কাঠ, পুঁতি, কাপড় কিংবা অপ্রচলিত যে কোনো ধরনের গয়নাই মানিয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে শাড়ির রঙ, ধরন আর পরার ধরনটা মাথায় রাখতে হবে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শাড়ির রঙেরও পছন্দ পাল্টায়। যদিও এখন অনেকেই রঙের পার্থক্য করতে নারাজ। সে কারণেই সম্ভবত কালারফুল বর্ণিল সব ডিজাইনের শাড়ি এখন সব বয়সীর পছন্দের শীর্ষে। একই শাড়ির সঙ্গে শুধু গয়না পরিবর্তন করলেই সাজে অনেকটা পার্থক্য চলে আসে। এভাবে একই শাড়ি ও গয়না বেশ কয়েকবার পরেও নতুন লুক আনা যায়।

 

নারীর সাজের অনন্য উপকরণ হলো কানের দুল। আর অলংকার বলতে মেয়েরা সবার আগে হাতে তুলে নেয় কানের দুল। কানের দুল হলো সেই অলংকার যা নারীর ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে। একটা সময় ছিল যখন স্বর্ণ, আর এমিটেশন দুলের ব্যাপক ব্যবহার। তবে হাল ফ্যাশনে সব বয়সী নারীর মাঝেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে জাংক জুয়েলারি। মেটাল, বিডস, পিতল, বাঁশ, কাঠ, হাড়গোড়, মাটি, সুতা, ধাতু, পালক, নারকেলের মালা, ঝিনুক, শামুকের খোলাসহ নানা উপকরণ দিয়ে তৈরি এসব কানের দুলের নকশায় করা হচ্ছে নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট। নকশাতে এখন আদিবাসী থিমও চলছে বেশ। কানপাশা, মিনা করা ঝুমকা, নকশার ঝুমকা, মাকড়ি, কলকা, চুড়, ঘণ্টিসহ নানা ডিজাইন রয়েছে এসব কানের দুলে। তবে সবকিছু টপকে কুন্দনের রয়েছে আলাদা কদর। এই ধরনের দুল সাধারণত লম্বা হয়। কানের পাতায় থাকে ছোট গোলাকার অংশ এবং ঠিক তার নিচের অংশটি বেশ বড় মাপের গোলাকার হয়। ডিজাইন ভেদে এই থিমে ছোট বড় ঘণ্টা, পাতা বা ঝুলানো পাথর ব্যবহার করা হয়। এগুলো চাঁদবলি কুন্দন, স্টোন চাঁদবলি কুন্দন, কুন্দন ঝুমকি, গোল্ড প্লেটেড কুন্দন চাঁদবলিসহ আরও অনেক নামে পরিচিতি পায়। দোকান ভেদে এসব দুলের দামে থাকবে ভিন্নতা। ১০০ টাকা থেকে ইমিটেশনের একটি কুন্দন ৩ হাজার পর্যন্তও দাম হাঁকাতে পারে দোকানি। অপরদিকে সুতি শাড়ির দামেও রয়েছে ভিন্নতা। দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে রঙ বাংলাদেশ বিবিয়ানা, সাদা-কালো, দেশাল, দেশি দশ, কে-ক্রাফট, অঞ্জনস, নগরদোলা, যাত্রা, অরণ্য, বাংলার মেলা ইত্যাদিতে তাঁতের ডিজাইনের শাড়িগুলোর দাম পড়বে সাড়ে ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। ব্লক করা শাড়ি ও অ্যাপ্লিক, অ্যাম্ব্রয়ডারি করা শাড়ির দাম পড়বে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর