২৭ জুন, ২০১৮ ১২:৪৮

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফল বাতিলের দাবি বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফল বাতিলের দাবি বিএনপির

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (গাসিক) নির্বাচনের ফলাফল 'ঘৃণাভরে' প্রত্যাখান করে পুনরায় ভোট দাবি করেছে বিএনপি। আজ বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'গাজীপুরে নির্বাচনের নামে শুধুমাত্র একটি তামাশা হয়েছে। ভোট ডাকাতির নতুন নতুন কৌশল আবিস্কার করে তা প্রয়োগ করেছে। আমরা গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফলাফল ‍ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি। আমরা এই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছি। জনগণকে এই ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।'

কিছু কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে বড় ধরনের গোলযোগহীনভাবে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। ৪১৬ কেন্দ্রের ঘোষিত ফল অনুযায়ী, মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর পেয়েছেন ৪ লাখ ১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট। ফলে সাবেক সাংসদ হাসান সরকারের চেয়ে দুই লাখ দুই হাজার ৩৯৯ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ২০১৩ সালের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমতউল্লাহ খানকে এক লাখ ৩২ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন বিএনপি নেতা এম এ মান্নান। এবার দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাকে বাদ দিয়ে বিএনপি প্রার্থী করে প্রবীণ নেতা হাসান সরকারকে।

সকালে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, 'খুলনায় নতুন কৌশলে ভোট ডাকাতি করে তারই ধারাবাহিকতায় গাজীপুরে এই নির্বাচন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিয়েছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি।'

‘নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরকার গাজীপুরে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে।' যোগ করেন তিনি। 

স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'তারা আগের রাতেই অনেকে ভোট দিয়ে দিয়েছেন। এটা ভোটের পারসেনটেইজ দেখলে বুঝা যায় যে, ভোটের টার্নআউট কত আর টোটালটা কত? তার থেকেই বুঝা যায় যে আগের রাতে ভোট দিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা দিনের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এই সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।'

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক এজেন্টকে কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি, অনেককে বাসা থেকে বের হতেই দেয়নি, অনেককে পথেই বাঁধা দিয়ে রুখে দেয়া হয়েছে। এসব দৃশ্য গণমাধ্যমের কর্মীরা মঙ্গলবার নিজেরাই দেখেছেন। এভাবে ষড়যন্ত্র করে গাজীপুরের নির্বাচনের ফলাফল সরকার, নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন এক হয়ে কাজ করেছে।'

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে সরকার একটি নির্বাচনী প্রকল্প করেছে, তার অংশ হিসেবে খুলনায় যা ঘটিয়েছিলো, গাজীপুরেও তারা একই কাজ করেছে।'

তিনি আরও বলেন, নীল নকশার অংশ হিসেবে পুলিশের একটি অংশ যারা দলীয় পুলিশ, নির্বাচন কমিশন সকলে মিলে একের পর এক নির্বাচনকে কবজা করছে তারা। গণতন্ত্র ফিরে পেতে হলে এই নির্বাচনী প্রকল্পকে ভেঙে দিতে হবে।'

ভোট কারচুপির এরকম ঘটনার পরও রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘আন্দোলনের অংশ’ হিসেবে অংশ নেওয়ার দলের সিদ্ধান্তের কথাও জানান বিএনপি মহাসচিব।

ফখরুল আরও বলেন, 'সরকারের নির্লজ্জ গণবিরোধী চরিত্র উন্মোচনের জন্য ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছি আন্দোলনের অংশ হিসেবে। আসন্ন বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি একই কারণে। এই জনবিচ্ছিন্ন সরকাররের প্রকৃত চেহারা উন্মোচন, নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও পক্ষপাতিত্ব প্রমাণিত হচ্ছে এই নির্বাচনগুলোর মধ্য দিয়ে।'

কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জানান মির্জা ফখরুল। একই সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকার ‘নীল নকশার গল্প’ সাজিয়ে গ্রেফতার করেছে অভিযোগ করে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর