রবিবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েল : স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভোক্তারা

অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েল : স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভোক্তারা

অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েল ও মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব কয়েল ব্যবহারে শ্বাসকষ্ট, শ্বাসনালিতে প্রদাহ, ক্যান্সার হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভস্থ শিশুদেরও বিকলাঙ্গতাসহ মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। গতকাল ইডব্লিউএমজিএল কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম-এর সঞ্চালনায় ‘অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েল : স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভোক্তারা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অংশ নেন রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, পরিবেশবিদ,  সাংবাদিক, ম্যাজিস্ট্রেট ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি। বৈঠকের চুম্বকাংশ তুলে ধরেছেন— গোলাম রাব্বানী, আলী রিয়াজ, লাকমিনা জেসমিন সোমা ও তানভীর আহমেদ ছবি : জয়ীতা রায়

 

মশামুক্ত শহর পেতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে

—আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব

মশার কয়েলের আগে কীভাবে মশামুক্ত শহর গড়া যায় সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। কেননা মশা না থাকলেই তো আর কয়েল কিংবা বিষাক্ত কয়েল নিয়ে ভাবতে হবে না। আমরা যদি মনে করি, ঢাকাকে মশামুক্ত করব, তবেই যথেষ্ট। যদিও এর জন্য আমাদের একটু সময় লাগবে। যে কোনো কাজ একজন ব্যক্তির একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। কিন্তু ব্যক্তি সমাজ বা রাষ্ট্র সবাই যদি যে যার জায়গা থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করে তাহলে যে কোনো কাজে সফল হওয়া সম্ভব। মন্ত্রীদের কাজ কেবল এসি রুমে বসে থাকা নয়। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর চকবাজারের মতো দুর্গম এলাকায় অভিযান চালিয়েছি। শত-শত টন পলিথিন ব্যাগ নষ্ট করেছি। র্যাবকে নিয়ে বিভিন্ন ডাইং ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালিয়েছি। বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পরিবেশ নষ্ট করার দায়ে দেড়শ কোটি টাকার মতো জরিমানা করেছি। কারখানা সিলগালা করে দিয়েছি। মশামুক্ত সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়তে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সব ধরনের উদ্যোগের সঙ্গে আছে। যে কোনো সামাজিক সব ভালো উদ্যোগে আমাদের মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

 

ঢাকায় দুই হাজার বিঘা জলাভূমিতে মশা উৎপাদন হয়

— গোলাম রহমান

ঢাকা শহরে প্রায় দুই হাজার বিঘা জলাভূমিতে মশা উত্পাদন হচ্ছে। এমন একটি বড় শহরে এটা থাকতে পারে না। সেখানে যে মশা উত্পাদন হয় সেটা আমাদের বন্ধ করতে হবে। তাই অনুমোদনহীন মশার কয়েলের ক্ষতি বন্ধ করতে হলে মশার উত্পাদন বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়ে না। ঢাকা শহর মশামুক্ত করতে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। মশার কয়েল বেশি ব্যবহার করে দরিদ্র মানুষ। উচ্চবিত্তদের তেমন কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু দরিদ্র মানুষের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাদের ক্ষতি বেশি হচ্ছে। রোগব্যাধি তাদের বেশি হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্যের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তাতে রাষ্ট্রের অনেক টাকা স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়। মশার উত্পাদন যদি বন্ধ হয় কয়েলের ব্যবহার আর করতে হবে না। এ জন্য স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সাধারণ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে অনেক কাজ করা যায়। প্রচার-প্রচারণা ছাড়াও মশা উত্পাদনকারী জলাভূমি ধ্বংস করতে হবে। অবৈধ কারখানা বন্ধ করতে হবে। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন জনসচেতনতা। মানুষ সচেতন হলে সমাজের পরিবর্তন আসবে।

 

অনুমোদনহীন মশার কয়েলের ভোক্তা কেবল মানুষ না, প্রাণীও

— ড. এ কে এম মো. শামসুজ্জামান

যখনই ধোঁয়া নিয়ে কথা বলব, তখনই স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। শুধু মশার কয়েল না, কয়েলের ধোঁয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপান ক্যান্সারের কারণ। সেই হিসেবে যিনি ধূমপানকারীর পাশে থাকেন তারাও পরোক্ষভাবে ধূমপায়ী। ধোঁয়া কোনো অলিক পদার্থ নয়, ধোঁয়ার কিছু রাসায়নিক গঠন আছে। রাসায়নিক গঠনে যা কিছু থাকে সেটা আমরা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভিতরে গ্রহণ করি। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রের যে কোষগুলো আছে, সেগুলো নিষ্ক্রিয় করার জন্য একটি প্রলেপ তৈরি করে দেওয়া। আর এটা হচ্ছে একটি মৃত্যুঞ্জয়ী কোষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার আবরণ বা প্রলেপ। এমনভাবে সচেতন হন, যাতে আপনি মশা থেকে বেঁচে থাকতে পারেন। বিষাক্ত যে কোনো জিনিসে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। একটি তালিকা করতে হবে— আসলে অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েল আমাদের দেশে কী পরিমাণ আছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামর্থ্য এত কম নয় যে, এদের আইনের আওতায় আনতে পারবেন না। অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েলের ভোক্তা শুধু মানুষ না, প্রাণীও। বিষাক্ত কয়েলের ছাইটা কোথায় যায়? এটা পরিবেশে মিশে প্রাণীও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে। পরিবেশকে সুন্দর রাখতে হবে।

 

মিডিয়া জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মানুষের পাশে থাকবে

— নঈম নিজাম

বাংলাদেশ প্রতিদিন জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত কাজ করছে। নকল ও ভেজাল খাদ্যদ্রব্যে বাজার সয়লাব। এসব খাবার খেয়ে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। অন্যদিকে অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংকটে রয়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মানহীন বিষাক্ত মশার কয়েল উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন। সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে দ্রুত অবস্থার উন্নতি হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আশা করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েল উত্পাদন ও বিপণনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখবে। এ কাজে লোকবলের সংকট আছে। সুতরাং সমস্যা চিহ্নিত করে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। জন-সচেতনতার বিকল্প নেই, যা পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে তা হতে দেওয়া যাবে না। মানুষ সচেতন হলে অনেক সংকটের উত্তরণ সম্ভব। মিডিয়া জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সবসময় মানুষের পাশে থাকবে।

 

বিষাক্ত কয়েল ব্যবহারে কিডনি ড্যামেজ ও ক্যান্সার হতে পারে

—অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোস্তফা হোসেন

আমি চিকিত্সাশাস্ত্রে স্নাতক হওয়ার পর তত্কালীন পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ইন্টার্নি করছিলাম। তখন আমাদের মেডিসিন বিভাগের খ্যাতিমান শিক্ষক ছিলেন প্রফেসর ডা. এম এ মান্নান। হঠাৎ এক দিন শুনলাম স্যারের ব্লাড ক্যান্সার। কিন্তু স্যারের ব্লাড ক্যান্সার কেন? এটা নিয়ে পিজি হাসপাতালে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। স্যারের চিকিত্সা নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হলো। পরে জানা গেল, তিনি  বাড়িতে নিয়মিত মশার কয়েল ব্যবহার করতেন। বিষাক্ত কয়েলে যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, এতে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। যেমন আপনার অ্যাজমা, ব্রোঙ্কাইটিজ হতে পারে। এমনকি মারাত্মক হূদরোগও হতে পারে। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের পেটেও ইনফেকশন হতে পারে। স্ট্রোক হতে পারে। কিডনিকে ড্যামেজ করে দিতে পারে। সুতরাং যে কোনো অননুমোদিত ওষুধ বা পণ্য মানুষের দেহে নানা রোগ ছড়াতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের সচেতন হতে হবে। মিডিয়া যদি বিষাক্ত মশার কয়েলের ক্ষতিকর দিকগুলো বেশি বেশি প্রচার করে, তবে মানুষ সচেতন হবে।    

 

মশার কয়েলের ধোঁয়ায় ভয়াবহ ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে

—অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হানিফ

মশার কয়েলে কত ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় আমরা জানি না। কিন্তু যতগুলো কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এর সবগুলোই মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্যান্সারের ঝুঁকি বহন করে। বিশেষ করে গর্ভে থাকা শিশুরা এই ঝুঁকি নিয়ে জন্ম নেয়। জন্মের প্রথমে হয়তো আমরা বুঝি না। কিন্তু ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়স হলে এর অনেক লক্ষণ দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় যেসব মা মশার কয়েল ব্যবহার করেন তাদের শিশুরা ভবিষ্যতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বড় হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে কিডনি, শ্বাস-প্রশ্বাস সমস্যা দেখা দেয়। নানা রোগ বাসা বাঁধে। কয়েল উত্পাদন কারখানার শ্রমিকদেরও ঝুঁকি আরও মারাত্মক। চীনে এমন একটি কারখানায় দেখা গেছে, ৫ বছরের মধ্যে সব শ্রমিকের ক্যান্সার হয়েছে। আমাদের এখানে অনুমোদন ছাড়া কারখানা চালানো যায়। এটা চলতে পারে না। কয়েলে যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় তার অনেকগুলো কখনো ধ্বংস হয় না। ছাই পানিতে মেশে। সেটা আবারও আমাদের শরীরে আসার সম্ভাবনা থাকে। বিএসটিআই বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের সক্ষমতা ছাড়াই কেন দেড়শর বেশি মশার কয়েল কারখানার অনুমোদন দেওয়া হয়। এটা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করতে হবে।

ওষুধ ছিটানো ছাড়াও সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি

— ব্রি. জে. ডা. এস এম এম সালেহ্ ভূঁইয়া

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ২ হাজার ২৭৩ বিঘা জলাভূমি রয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ১০০ বিঘা অপরিষ্কার। এসব স্থানে মশা জন্মানোর সুযোগ পায়। আমরা ইতিমধ্যে জলাভূমির কচুরিপানা অপসারণে অভিযান শুরু করেছি। এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো— জলাভূমি পরিষ্কারের ক্ষেত্রে মালিকদের অনুমতি প্রয়োজন হয়। এখানে সিটি করপোরেশনের এখতিয়ার নেই। তাই জলাভূমির মালিকদের বলেছিলাম, তারা নিজেরাই যেন কচুরিপানা পরিষ্কার করেন। কিন্তু তারা সেটি করেননি। তাই আমরা কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে অনুসারে ইতিমধ্যে গুলশান, বনানী ও কড়াইল বস্তি এলাকায় কাজও শুরু করেছি। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সব কচুরিপানা পরিষ্কার করব বলে ঠিক করেছি। আশা করি, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এসব এলাকার কচুরিপানা অপসারণ করে পরিষ্কার করা হবে। মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যে ওষুধ ছিটানো হয় তাতে মশা নিধন হয় না— এটা আমারও অভিযোগ ছিল। কারণ ওষুধে ভেজাল থাকত। আমরা সকাল-সন্ধ্যা ওষুধ ছিটানো ছাড়াও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি।

 

অনুমোদনহীন পণ্যে কেবল স্বাস্থ্যঝুঁকি নয় পরিবেশ ঝুঁকিও রয়েছে

— অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ

অনুমোদনহীন মশার কয়েলের ক্ষতিকর উপাদান থেকে বাঁচতে সরকারকে অনুমোদিত রাসায়নিক উপাদানের মাত্রা ঠিক আছে কিনা তা মনিটরিং করতে হবে। কেননা এটি কেবল স্বাস্থ্যঝুঁকির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, এখানে পরিবেশ  ঝুঁকিও রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয় এবং উৎপাদনকারীরা তা মেনে চলেন। কিন্তু আমাদের দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করছেন, যা স্বাস্থ্যঝুঁকির মূল কারণ। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। দেশে প্রচুর পরিমাণে চীন থেকে আমদানিকৃত মশার কয়েল ব্যবহার হচ্ছে। চীনারা খুব কম মূল্যে যে কোনো পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করে। এসব পণ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কিনা সেটা নিয়ে তারা চিন্তা করেন না। অথচ উন্নত দেশে রপ্তানিকৃত চীনা পণ্য পরীক্ষার মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে না। অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনুমোদিত অনেক প্রতিষ্ঠান মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে মশার কয়েল তৈরি করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদারকি করার আহ্বান জানাই।

 


কয়েল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে মান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

—সৈয়দ আলমগীর

দেশজুড়ে অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েলে ছেয়ে গেছে বাজার। এসব কয়েলে ব্যবহার করা হচ্ছে অতিরিক্ত মাত্রায় বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য। কয়েলের কাজ মশা তাড়ানো, মশা মেরে ফেলা নয়। অথচ বাজারে এখন এমন কয়েলও পাওয়া যাচ্ছে যাতে মশাই নয়, তেলাপোকা, টিকটিকিও মরে যাচ্ছে। এটা মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। দেশে কয়েল প্রস্তুত ও বাজারজাতকরণে বিদ্যমান নীতিমালা ও আইনকে পাশ কাটিয়ে এসব কয়েল বাজারে থাকছে কীভাবে? আমরা দীর্ঘদিন ধরে কয়েল প্রস্তুত করছি। একটা কয়েল বাজারে আনতে প্রক্রিয়া শেষ করতেই ন্যূনতম তিন বছর সময় লাগে। অথচ রাতারাতি এসব নকল কয়েল বাজারে আসছে। ঘরে ঘরে তৈরি হয়েছে কয়েল ফ্যাক্টরি। এসব কয়েলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি দেশে প্রচুর চায়না কয়েল আমদানি হচ্ছে। এ কয়েলগুলোয় অন্তত তিনটি অননুমোদিত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। প্রচুর পরিমাণে ভেজাল চায়নিজ মশার কয়েলে বাজার ভরে যাচ্ছে। সুতরাং সংশ্লিষ্টদের কয়েল উত্পাদন ও বাজারজাতকরণে মান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

.

 ভেজাল পণ্য জনস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে

—অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু

অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েলে যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় তা মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি করে। এসব কেমিক্যাল জন্মের আগেই শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে, যা পরবর্তী জীবনে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশে ভেজাল পণ্য উত্পাদন ও বাজারজাতকরণ এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, শুধু ময়দা দিয়ে ট্যাবলেট তৈরি করে ভিটামিন হিসেবে বিক্রি করা হয়। যত্রতত্র এসব উত্পাদন বন্ধ না করলে জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই হুমকিস্বরূপ। ভেজাল পণ্য উত্পাদন ও বাজারজাত বন্ধ করতে সব সংস্থার ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। অনেকগুলো এজেন্সি দায়িত্ব না নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান করলে এসব বন্ধ করা খুবই সহজ। ভেজাল পণ্য বিশেষ করে জনস্বাস্থ্যের ওপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে। এসব পণ্য উত্পাদন আমাদের বন্ধ করতেই হবে। তবে এ কাজ কোনো সংস্থা একা করতে পারবে না। এ জন্য সব প্রতিষ্ঠানকেই এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকেও সচেতন করতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে সরকারের সব সংস্থার এগিয়ে আসা উচিত। অনুমোদনহীন মশার কয়েলের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরতে হবে।

 

পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়িত্বশীল হতে হবে

— অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার

মশার কয়েল ব্যবহার না করে উপায় নেই। বাইরে যেসব শ্রমিক কাজ করেন তারা মশারি নিয়ে ঘোরেন না। দোকান থেকে কয়েল কিনে তা জ্বালিয়ে তারা ঘুমান। এক্ষেত্রে যেসব কয়েল বাজারে যাচ্ছে তা আমাদের জানতে হবে, কোন কয়েল বাজারে যাচ্ছে। আমরা জানি কয়েল ও অ্যারোসোলের মধ্যে পার্থক্য আছে। কয়েলের কাজ হচ্ছে মশা তাড়ানো। আর অ্যারোসোলের কাজ মশা মারা। কিন্তু কয়েলের ধোঁয়ায় যদি মশা মারা যায় সেটা ক্ষতিকারক। ওই কয়েলে কেমিক্যালের পরিমাণও বেশি থাকে। নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি পরিমাণ দেওয়া হলেই মশা মারা যায়। আমি ৮টি কয়েল পরীক্ষা করে দেখেছি। কিন্তু দেখলাম বাজারে যে কয়েলগুলো আছে, তা দিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে ১০০ ভাগ মশা মারা যায়। কাস্টমার এতে অনেক খুশি। কারণ মানুষ বাসায় কয়েল জ্বালাচ্ছেন, মশা টপ টপ করে মরে যাচ্ছে। তখন ভোক্তারা ওই কয়েলটাই কিনছেন। কিন্তু তারা জানেন না যে কয়েলটাতে মশা মারা যাচ্ছে তা তার নিজের স্বাস্থ্য ও শিশুর জন্য কত ক্ষতিকর। এসবের জন্য সরকারকে দোষ দিলে হবে না, সবাইকে সচেতন হতে হবে। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

ক্ষতিকর ও অবৈধ মশার কয়েল উৎপাদন বন্ধ করতে হবে

—মো. রিয়াজুল হক

কারখানা অনুমোদন বিএসটিআই দেয় না। তাই কোনো কারখানা অনুমোদনহীন কিনা সেটা বিএসটিআইর খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। অভিযোগ পেলেই আমরা খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। কয়েল তৈরির কারখানার অনুমোদন পেতে সর্বপ্রথম কৃষি অধিদফতর থেকে দুটি সার্টিফিকেট লাগে। এরপরে জনস্বাস্থ্য নিরাপদ রাখার নিশ্চয়তা দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সার্টিফিকেট লাগবে। পরে বিএসটিআইর অনুমোদন নিতে হয়। আগের কোনো সার্টিফিকেট ছাড়া কীভাবে তারা ব্যবসা করেন, পণ্য বাজারজাত করেন, সেটা বিএসটিআইর পক্ষে খুঁজে বের করা কঠিন। গত এক বছরে আমরা এমন অনুমোদনহীন অনেকগুলো মশার কয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছি। অভিযানে দেখা গেছে, অনুমোদন নেই কিন্তু বিএসটিআইর লোগো ব্যবহার করছে। এমনও রয়েছে নামি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে অনুমোদন ছাড়া কয়েল উৎপাদন করছে। আমরা ৫৫টি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দিয়েছি। প্রায় ৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সবসময় আমাদের অভিযান চালু রয়েছে। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর এসব অবৈধ মশার কয়েল উত্পাদন বন্ধ করতে আমরা সবই করব।

প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে

— ডা. নওশিন শারমিন পূরবী

অননুমোদিত মাত্রার বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করে তৈরি মশার কয়েলে প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এসব কয়েলের ধোঁয়া মশা মারছে ঠিকই, কিন্তু তা মানুষের প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। গর্ভপাতের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। পুরুষের শুক্রাণু কমে যাচ্ছে। প্রিম্যাচিউরজ বাচ্চার জন্মহার বেড়ে যাচ্ছে। শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ বাড়ছে। কয়েলের ধোঁয়া চোখে কম দেখা, মাথাব্যথাসহ নানা সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। সিটি করপোরেশনকে বলছি, দয়া করে মশা মারতে পানি ছিটাবেন না, ওষুধ ছিটাবেন। মশা ও বিষাক্ত কয়েল থেকে বাঁচতে হলে ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্র সবার জায়গা থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কয়েলের গায়ে বিএসটিআইর অনুমোদন আছে কি না দেখে কিনতে হবে। সিটি করপোরেশনকে মানসম্মত সেবা দিতে হবে। যেন মশা মারতে পানি ছিটানো না হয়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। সর্বোপরি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবার সমান প্রচেষ্টাই পারবে স্বাস্থ্যকর পৃথিবী গড়তে।

 

জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্যের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান চলবে

—মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন

আগামী সপ্তাহ থেকে অনুমোদিত মাত্রার অতিরিক্ত ক্ষতিকর উপাদান দিয়ে মশার কয়েল উত্পাদনকারীদের বিরুদ্ধে আটঘাট বেঁধে অভিযানে নামবে র‌্যাব। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যেখানেই অপরাধ ও অপরাধী থাকবে, সেখানেই র‌্যাব অভিযান চালাবে। জনস্বাস্থ্য ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে র‌্যাব সদা তত্পর। চায়না থেকে অনুমোদনহীন কয়েল আসছে। শিগগিরই এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। কিছু লাইসেন্সধারী ওষুধ কোম্পানি চীন থেকে অনুমোদনহীন ক্ষতিকর জেলি এনে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করছিল। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও  নেই। এমন কিছু প্রতিষ্ঠানকে অভিযান চালিয়ে ধরা হলে তারা উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিয়েছে। কিছু কোম্পানি শুধু রাতেই চলে, দিনে বন্ধ থাকে। এদের ধরতে সম্প্রতি ১৪ দিন শুধু রাতে অভিযান চালানো হয়। অনেক প্রতিষ্ঠানকে ভোররাতে গিয়ে পাকড়াও করা হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সব পণ্য উত্পাদন ও বিপণনকারীর বিরুদ্ধে র‌্যাব অভিযান অব্যাহত রাখবে। আমাদের অভিযান বন্ধ হবে না।

 

 

আধুনিক সুপার শপগুলোতেও ভেজাল পণ্য বিক্রি হয়

— তানবীর মুহম্মদ আজিম

ভেজাল পণ্য শুধু খুচরা দোকান নয়, আধুনিক সুপার শপগুলোও বিক্রি করছে। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর মশার কয়েল এসব সুপার শপ বিক্রি করে। আমাদের মোবাইল কোর্ট গত এক বছরে এমন অনেক সুপার শপকে শাস্তি দিয়েছে। উত্পাদন পর্যায়ে অভিযান চালাতে হলে স্বাস্থ্য অধিদফতর, কৃষি অধিদফতর, বিএসটিআই সবার সম্মিলিতভাবে কাজ করা উচিত। এমন কিছু জায়গায় মশার কয়েল উত্পাদন হচ্ছে, যা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। অবৈধ কারখানাগুলো অল্প বিনিয়োগে অনেক মুনাফা করে। এমনও দেখেছি দুই বছর ধরে মশার কয়েল উত্পাদন করছে, যেগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাজারজাত করা হয়। এসব কয়েলে যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মানুষের অসচেতনতা ব্যবহার করে মুনাফা করে যাচ্ছে। এখনো বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। যেসব কারখানার কোনো অনুমোদন নেই। এমনকি উত্পাদকরা জানেনই না কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করছেন। আইনশৃঙ্খলাসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে মানুষকে সচেতন করতে হবে। আশার কথা হচ্ছে, আগের চেয়ে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

 

মশার কয়েল ব্যবহারকারীদের সচেতন হতে হবে 

— শাহনাজ মুন্নী

অনুমোদনহীন বিষাক্ত মশার কয়েল ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। এ ধরনের মশার কয়েলে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মূলত ব্যবহারকারীরা সচেতন না হলে সুফল পাওয়া যাবে না। বিষাক্ত কয়েল ব্যবহারে গর্ভবতী মায়েরা ও তাদের গর্ভে থাকা শিশুরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘরে বেশি সময় অবস্থান করতে হয় বলে তারাই বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। তাই বিষাক্ত মশার কয়েলের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম গুরুত্ব সহকারে প্রচার করলে এর চাহিদা কমে আসবে। সাধারণ মানুষ না কিনলে একপর্যায়ে বিষাক্ত কয়েলের উত্পাদন, বিপণন হ্রাস পাবে। যারা মশার কয়েল উৎপাদন ও বিপণনের অনুমোদন দিয়ে থাকেন তাদেরকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে আরও গতি আনতে হবে। যারা অনুমোদন ছাড়াই বিষাক্ত মশার কয়েল উত্পাদন ও বিপণন করে আসছেন তাদের প্রচলিত আইনের মুখোমুখি করতে হবে। তাদের চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলে দ্রুতই সুফল পাওয়া যাবে।

 

যারা অংশ নিলেন

আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, এমপি

উপমন্ত্রী, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়

গোলাম রহমান, প্রেসিডেন্ট, কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ

অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোস্তফা হোসেন

সাবেক পরিচালক, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হানিফ

বিভাগীয় প্রধান, কিডনি বিভাগ, ঢাকা শিশু হাসপাতাল

অধ্যাপক ড. এ কে এম মো. শামসুজ্জামান

পরিচালক, রোগনিয়ন্ত্রক ও লাইন ডিরেক্টর, স্বাস্থ্য অধিদফতর

ব্রি. জে. ডা. এস এম এম সালেহ্ ভূঁইয়া

প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন

সৈয়দ আলমগীর, নির্বাহী পরিচালক, এসিআই লিমিটেড

অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ

প্রেসিডেন্ট, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ

অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু

বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ

ড. কবিরুল বাশার, সহযোগী অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাবি মো. রিয়াজুল হক, সহকারী পরিচালক, বিএসটিআই

ডা. নওশিন শারমিন পূরবী, গাইনোক্লোজিস্ট

মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাব-২

তানবীর মুহম্মদ আজিম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা জেলা প্রশাসন

সঞ্চালক : নঈম নিজাম, সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

শাহনাজ মুন্নী, প্রধান বার্তা সম্পাদক, নিউজ২৪

সর্বশেষ খবর