১৫ জুন, ২০১৬ ১৬:৩৯

ইফতারে খেজুর খাবেন যে কারণে

সেহেলী সরকার

ইফতারে খেজুর খাবেন যে কারণে

রমজান মাস আল্লাহর একটি অন্যতম রহমতের মাস এবং অধিক মর্যাদাপূর্ণ মাস। এ মাসে সিয়াম পালন করাকে ফরজ করা হয়েছে। ইফতারের অন্যতম একটি ফল হলো খেজুর। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইফতারের মেনুতে খেজুরের অবস্থান ছিল সর্বপ্রথম। দীর্ঘসময় খালি পেটে থাকার কারণে দেহে প্রচুর গ্লুকোজের প্রয়োজন হয়। খেজুরে অনেক গ্লুকোজ থাকায় এ ঘাটতি পূরণ হয়। হৃদরোগীদের জন্যও খেজুর বেশ উপকারী। এটি রক্ত উৎপাদনকারী, হজমশক্তি বর্ধক, যকৃৎ ও পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক। রুচি বাড়াতেও খেজুরের জুড়ি নেই। এছাড়া এটি ত্বক ভালো রাখে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর আঁশ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। খেজুরের মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম, সালফার, আয়রন, পটাশিয়াম, ফরফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬, ফলিক এসিড, আমিষ, শর্করাসহ একাধিক খাদ্যগুণ।

খেজুরের বিভিন্ন ধরণের গুণাবলী নিয়ে দেখুন গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য:

খেজুরের পুষ্টিগুণ: 

প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে রয়েছে:

পুষ্টিউপাদান     পরিমাণ

ক্যালোরি     ২৭৭ কিলোক্যালরি

কার্বোহাইড্রেট     ৭৪.৯৭ গ্রাম

প্রোটিন     ১.৮১ গ্রাম

চর্বি     ০.১৫ গ্রাম

খাদ্যআঁশ     ৬.৭ গ্রাম

ফলেট     ১৫  µg

নায়াসিন     ১.৬১০ মিলিগ্রাম

প্যান্থোথেনিক এসিড     ০.৮০৫ মিলিগ্রাম

প্যরিডক্সিন     ০.২৪৯ মিলিগ্রাম

রাইবোফ্লাবিন     ০.০৬০ মিলিগ্রাম

থায়ামিন     ০.০৫০ মিলিগ্রাম

ভিটামিন “এ”     ১৪৯ IU

ভিটামিন “কে”     ২.৭ µg

সোডিয়াম     ১ মিলিগ্রাম

পটাশিয়াম     ৬৯৬ মিলিগ্রাম

ক্যালসিয়াম     ৬৪ মিলিগ্রাম

কপার/দস্তা     ০.৩৬২ মিলিগ্রাম

আয়রন/লৌহ     ০.৯০ মিলিগ্রাম

ম্যাগনেসিয়াম     ৫৪ মিলিগ্রাম

ম্যাঙ্গানিজ     ০.২৯৬ মিলিগ্রাম

ফসফরাস     ৬২ মিলিগ্রাম

জিংক     ০.৪৪ মিলিগ্রাম

বিটা-ক্যারোটিন     ৪৯  µg 

 
(উৎস: ইউএসডিএ জাতীয় পুষ্টি কার্যক্রমের তথ্য অনুযায়ী) 

 
ক্যানসার প্রতিরোধ: খেজুরে রয়েছে খাদ্য আশঁ যা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে। 

দুর্বল হৃৎপিণ্ড: খেজুর হৃদয়ের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ও রক্ত পরিশোধন করে৷ এটি হৃদপিন্ডের সংকোচন প্রসারণ সঠিক রাখে৷   

মুটিয়ে যাওয়া রোধে: খেজুর ক্ষুদার তীর্বতা কমিয়ে দেয় ফলে পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহনে উদ্বুদ্ধ করে তবে খেজুরে বিদ্যমান গ্লুকোজ শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরন করে দেয়। খেজুরের আঁশ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। 

মায়ের বুকের দুধ: খেজুর বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য সমৃদ্ধ এক খাবার। খেজুর মায়ের দুধের পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে দেয় এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। 

হাড় গঠনে: ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সাহায্য করে। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। এর ফলে এটি হাড় মজবুত করে ও হাড়ক্ষয়ের হাত থেকে মুক্ত রাখে। 

অন্ত্রের গোলযোগ: অন্ত্রের কৃমি ও ক্ষতিকারক পরজীবী প্রতিরোধে খেজুর সহায়ক এবং খেজুর অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে। মুখে রুচি আনে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। 

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে: খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে যা  দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। রাতকানা রোগ প্রতিরোধেও খেজুর অত্যন্ত কার্যকর। 

কোষ্ঠকাঠিন্য: খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টি গুণ। যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং খেজুরে থাকা খাদ্যআঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। এছাড়াও খেজুর হজমবর্ধক, পাকস্থলী ও যকৃতের শক্তি বাড়ায়। 

সংক্রমণ: যকৃতের সংক্রমণে খেজুর উপকারী। এছাড়া গলা ব্যথা, বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি, এবং ঠাণ্ডায় খেজুর উপকারী। 

বিষক্রিয়া: খেজুর অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়ায় বেশ উপকারী। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়ায় দ্রুত কাজ করে।শিশুদের রোগ বালাই: শিশুদের জন্যও খেজুর ভারী উপকারী। খেজুর শিশুদের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও প্রতিরোধ করে। 

প্রসবকালীন সময়ে মায়ের জন্য: খেজুর প্রসব যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে৷ অন্তঃসত্ত্বা নারীরা খেজুর খেলে এটি জরায়ুর মাংসপেশি দ্রুত সংকোচন-প্রসারণ ঘটিয়ে তাড়াতাড়ি প্রসব হতে সাহায্য করে এবং প্রসব-পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়। 

কর্মশক্তি বৃদ্ধি: খেজুরে গ্লুকোজ ও প্রচুর খাদ্যশক্তি থাকায় দুর্বলতা দূর করে ও কর্মশক্তি বৃদ্ধি করে।

এছাড়াও খেজুর স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং রক্ত উৎপাদনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে তাই কেবল রমজান মাসের জন্য নয় সারা বছর পরিবারের সবার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমরা এই ফলটিকে রাখতে পারি। 

 

লেখক: খাদ্য ও পথ্য পরিকল্পনাকারী এবং পুষ্টিবিদ, কোরিয়ান ইপিজেড, চট্টগ্রাম


 

বিডি-প্রতিদিন/ ১৫ জুন, ২০১৬/ আফরোজ

সর্বশেষ খবর