বাঁচ্চাদের জন্ম হয় সাধারণত নরমাল ডেলিভারিতে কিংবা সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে। যেভাবেই জন্ম হোক না কেন জন্মের আগেই বাচ্চার অণ্ডকোষ তার থলিতে থাকার কথা। অনেক সময় থাকে না বা মাঝে মধ্যে ওপরে উঠে নামে বা অণ্ডকোষ পেঁচিয়ে মারাত্মক সমস্যাও হতে পারে। সাধারণত অণ্ডকোষের যে সমস্যাগুলো নিয়ে আমাদের কাছে আসে, সেগুলো-
১. অণ্ডকোষ না নামা ( Undescended Testis) : বাবা-মা জন্মের পর পর আনন্দে আপ্লুত থাকায়, সাধারণত সমসাময়িক সময়ে সমস্যাটি দেখা যায় না। তবে বাচ্চা বড় হতে থাকলে এ সমস্যাটি দেখা যায়। যদি আলট্রাসনোগ্রাম করানো হয় সেখানে দেখা যায়, কুঁচকিতে অণ্ডকোষ থাকে। সেই অণ্ডকোষকে এক বছরের মধ্যে অপারেশনের মাধ্যমে নামিয়ে আনলে পরবর্তীতে আর সমস্যা হয় না।
২. অণ্ডকোষ প্যাঁচ খাওয়া (Testicular torsion) : সাধারণত দুই বছরের পর থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের হঠাৎ এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। অণ্ডকোষ লাল হয়ে ও ফুলে যেতে পারে, ব্যথা হতে পারে তীব্র। সেই সব ক্ষেত্রে আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে যদি রক্ত চলাচল কম হয় বা না হয়, তবে জরুরি ভিত্তিতে সার্জন দিয়ে অপারেশন করাতে হবে। না হলে অণ্ডকোষ পচে যেতে পারে।
৩. অণ্ডকোষের ইনফেকশন (Epididzmo- orchitis) : হঠাৎ অণ্ডকোষ ফুলে, লাল হয়ে গেলে, ব্যথা হলে এমনটি হতে পারে। যদি অণ্ডকোষ উঁচু করে ধরলে ব্যথা কমে যায় তবে, বুঝতে হবে অণ্ডকোষে ইনফেকশন হয়েছে শিশুর । সাধারণত প্রস্রাবে যাদের বারবার ইনফেকশন হয় তাদের এমনটি হতে পারে। রোগ নির্ণয়ের জন্য আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে, পরবর্তীতে ইনফেকশনের চিকিৎসা-অ্যান্টিবায়োটিক দিলেই রোগী সুস্থ হয়ে যায়। সাধারণত অণ্ডকোষ প্যাঁচের সঙ্গে এর উপসর্গ মিল থাকায় অবশ্যই আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে শিশু সার্জারির ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া উচিত।
৪. অণ্ডকোষ থলিতে আসে যায় (Retractile Testis) : বাবা-মা এসে বলে বাচ্চা ঘুমিয়ে থাকলে অণ্ডকোষ দেখা যায়। খেলাধুলা করলে, লাফালাফি করলে অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। এটাকে বলে Retractile testis, এগুলোতে অপারেশন লাগে না। সাধারণত বাচ্চা বড় হলে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। তবে সন্দেহ থাকলে শিশু সার্জারি বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে নেওয়া ভালো।
৫. অণ্ডকোষে টিউমার (Testicular tumour) : সাধারণত জন্মের কিছুদিন পর হঠাৎ দুটো অণ্ডকোষের পাশে আরেকটি শক্ত চাকার মতো টিউমার দেখা দিতে পারে। সেখানে সাধারণত ব্যথা থাকে না, তবে ইনফেকশন হলে ব্যথা হতে পারে। অবশ্যই আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে, রক্ত পরীক্ষা করিয়ে, শিশু সার্জারি বা শিশু অনকোলজি ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা পরামর্শ নিতে হবে। এগুলো অনেক সময় ক্যানসার হয়ে থাকে, যেগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা জরুরি।
৬. অণ্ডকোষ অন্য জায়গায় থাকা Ectopic testis) : Ectopic শব্দের অর্থ হলো নরমাল নয়। সাধারণত অণ্ডকোষ যেখানে থাকার কথা সেখানে অবস্থান না করে অন্য কোথাও যেমন লিঙ্গের গোড়া, তলপেট, মলদারের পাশে, রানের মাংসে বা বিপরীত অণ্ডকোষে ইত্যাদিতে থাকতে পারে। এমন সমস্যায় অণ্ডকোষ অপারেশন করে সাভাবিক অবস্থানে আনতে হবে।
৭. অণ্ডকোষ উপরে থাকা (Ascending testis) : হরমোন জনিত সমস্যায় এমনটি হতে পারে। অনেক সময় এর উপসর্গ Retractile testis-এর মতো মনে হয়। এমন হলে অবশ্যই শিশু সার্জারির পরামর্শ নিয়ে ফলোআপ করতে হবে।
৮. অণ্ডকোষ গায়েব হয়ে যাওয়া (Vanishing testis) : জন্মের পরপর কিছুদিন থাকে, পরবর্তীতে অ-কোষ গায়েব বা ভ্যানিস হয়ে যায়। সাধারণত ইনফরমেশন হয়ে অটো অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে বিপরীত অ-কোষ গায়েব করে ফেলতে পারে। অবশ্যই শিশু সার্জারি বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে চিকিৎসা পরামর্শ নিতে হবে।
৯. অণ্ডকোষ একটি ওপরে আরেকটি একটু নিচে (Normal testis) : সাধারণত বাম পাশের অণ্ডকোষ একটু নিচে থাকে, কারণ বাম দিকের শুক্রাণু বহনের নালিটি নিচে থাকে। এটা স্বাভাবিক। চিকিৎসকের পরামর্শের তেমন প্রয়োজন নেই।
১০. অণ্ডকোষের পাশে পানি জমা (Hernia & Hydrocele) : অনেক সময় অণ্ডকোষের সঙ্গে পানি জমে থাকতে দেখা যায়, ফুলে থাকে এবং ঘুমালে স্বাভাবিক হয়। এটা সাধারণত যদি হার্নিয়া বা হাইড্রোসিল থাকে সে সময় শিশুদের অণ্ডকোষ এমনটা মনে হতে পারে। হার্নিয়া হলে অবশ্যই অপারেশন লাগবে। আর হাইড্রোসিল হলে সাধারণত এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর অপারেশনের চিন্তাভাবনা করা হয়। অবশ্যই শিশু সার্জন দেখিয়ে পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক : নবজাতক, শিশু ও কিশোর সার্জারি বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর, ঢাকা।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ