২০২৪ সালের বিশ্ব স্পাইন দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “মুভ ইয়োর স্পাইন” বা “আপনার মেরুদণ্ড সচল রাখুন”। এই প্রতিপাদ্যর মূল উদ্দেশ্য হলো মেরুদণ্ডকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখতে দৈনন্দিন জীবনে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা অনিয়মিত জীবনযাত্রা মেরুদণ্ডের সমস্যার অন্যতম কারণ। তাই ব্যায়াম, সঠিক ভঙ্গিমায় বসা এবং শরীর সচল রাখার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে এই দিবসটি পালনের মাধ্যমে পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথাসহ অন্যান্য মেরুদণ্ড-সম্পর্কিত সমস্যার সমাধানে ফিজিওথেরাপির গুরুত্বও তুলে ধরা হয়।
মেরুদণ্ডের বিভিন্ন রোগ ও তার চিকিৎসা
১. স্পন্ডাইলোসিস: এটি একটি বয়সজনিত সমস্যা। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মেরুদণ্ডের হাড় ও ডিস্কের ক্ষয় হতে থাকে, যাকে স্পন্ডাইলোসিস বলে। এটি সাধারণত স্যারভাইকাল স্পাইন বা ঘাড়ের অংশে হলে তাকে স্যারভাইকাল স্পন্ডাইলোসিস ও লাম্বার স্পাইন বা কোমরের অংশে হলে লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস বলে।
• উপসর্গ:
স্যারভাইকাল স্পন্ডাইলোসিস:
- ঘাড় ব্যথা, অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা ঘাড় থেকে হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে
- হাত ঝিনঝিন বা অবশ মনে হয়
- হাতে শক্তি কম অনুভব করে
লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস:
- কোমর ব্যথা, অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা কোমর থেকে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে
- পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ মনে হয়
- পায়ে শক্তি কম অনুভব করে
• চিকিৎসা: ফিজিওথেরাপি, ব্যথানাশক ওষুধ এবং শারীরিক ব্যায়াম।
২. ডিস্ক প্রলাপস (মেরুদণ্ডের দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্ক সরে যাওয়া):
• কারণ: ভারী কাজ বা দুর্ঘটনা।
• উপসর্গ:
- কোমর ব্যথা, অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা কোমর থেকে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
- ডিস্ক সরে গিয়ে স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে যার ফলে পায়ে ব্যথা বা দুর্বলতা ও দুর্বল অনুভব করে।
- কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর কিংবা কিছুক্ষন হাটলে ব্যথা বেড়ে যায় কিন্তু বিশ্রামে ব্যথা কমে আসে।
• চিকিৎসা: ওষুধ, ফিজিওথেরাপি থেরাপি, প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার।
৩. স্পডাইলোলিসথেসিস - মেরুদণ্ডের কশেরুকা একটি থেকে আরেকটি সরে যাওয়া
• কারণ: ভারী কাজ বা দুর্ঘটনা।
• উপসর্গ:
- কোমর ব্যথা, অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা কোমর থেকে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
- ডিস্ক সরে গিয়ে স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে যার ফলে পায়ে ব্যথা বা দুর্বলতা ও দুর্বল অনুভব করে।
- কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর কিংবা কিছুক্ষন হাটলে ব্যথা বেড়ে যায় কিন্তু বিশ্রামে ব্যথা কমে আসে।
• চিকিৎসা: ওষুধ, ফিজিওথেরাপি, প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার।
৪. স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি:
• কারণ: দুর্ঘটনা বা ওপর থেকে পড়ে যাওয়া।
• উপসর্গ: শরীরের কিছু অংশ অবশ হওয়া বা পক্ষাঘাত।
• চিকিৎসা: ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন এবং গুরুতর ক্ষেত্রে সার্জারি।
৫. স্কোলিওসিস (মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যাওয়া)
কারনঃ জন্মগত বা তরুণ-তরুণীদের বেশি হয়।
• চিকিৎসা: ব্রেস ব্যবহার, নিয়মিত ফিজিওথেরাপি ও ব্যায়াম, প্রয়োজনে সার্জারি।
৬. স্পাইনাল ক্যানেল স্টেনোসিসঃ মেরুদণ্ডের গঠন অনুযায়ী প্রতিটি কশেরুকার দু'পাশ দিয়ে স্পাইনাল নার্ভ বের হয়ে শরীরের দুপাশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে গেছে। এর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন অনুভূতি পায়। একটি ক্যানেলের মাধ্যমে নার্ভটি বেরিয়ে আসে। কোনো কারণে এ ক্যানেলের মুখে চাপ অনুভূত হলে আক্রান্ত স্থান থেকে নার্ভের ডিস্ট্রিবিউশন অনুযায়ী ব্যথা অনুভুত হয়।
চিকিৎসাঃ
চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও খুব বেশি ভাগে ভাগ করা হয়। রোগটি প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পর্যায়ে থাকলে কনজারভেটিভ চিকিৎসা যেমন- ওষুধ ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে ঠিক করা যায়। কিন্তু খুব সিভিয়ার হলে স্পাইনাল সার্জারির প্রয়োজন পড়ে।
৭. স্পাইনাল টিউবারকিউলোসিস: এটি প্যাথলজিক্যাল ডিজিজ। সাধারণত স্পাইনে থোরাসিক বা পিঠের অংশে দেখা দেয়।
চিকিৎসাঃ এ রোগে অ্যান্টি-টিবি ড্রাগের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল চিকিৎসায় প্রয়োজন হয়। এছাড়া কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
প্রতিরোধ ও সুস্থতা টিপস:
• নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা।
• সঠিক ভঙ্গিতে বসা ও শোয়া।
• ভারী বস্তু তোলার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা।
• দীর্ঘ সময় বসে থাকলে বিরতি নেওয়া।
মেরুদণ্ডের সমস্যা নিরসনে সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া এবং সক্রিয় জীবনধারা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
লেখক : চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ