শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ঋতু পরিবর্তনে সতর্কতা

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

ঋতু পরিবর্তনে সতর্কতা

ঋতু পরিবর্তনের খেলা শুরু হয়েছে আবহাওয়ায়। পরিলক্ষিত হচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। কার্তিকের মাঝামাঝি এ সময়টাতে বইতে শুরু করেছে কিছুটা শীতল হাওয়া। দিনের বেলা গরম থাকলেও শেষ রাতে অনুভূত হচ্ছে ঋতু পরিবর্তনের খেলা। এ সময়টাতে একটু সতর্ক থাকতে হয়। অন্যথায় স্বাস্থ্য নিয়ে পড়তে হয় চিন্তায়। এ সময় স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে প্রথমেই চলে আসে সাধারণ ঠাণ্ডাজনিত সর্দি-কাশির কথা। বিশেষত শীতের শুরুতে তাপমাত্রা যখন কমতে থাকে, তখনই এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এ ছাড়া যাদের হাঁপানি বা অনেক দিনের কাশির সমস্যা আছে, ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় তাদের কষ্টও বাড়ে। ফুসফুসের নিউমোনিয়াও এ সময় দেখা যায়। বলা চলে, মূল ধাক্কাটা যায় শ্বাসতন্ত্রে।

শ্বাসতন্ত্রের রোগ বাড়ে কেন : অনেকের ধারণা, বেশিক্ষণ ঠাণ্ডায় থাকলে বা পানিতে ভিজলে ঠাণ্ডা লাগে, সর্দি হয়। যদিও এসব রোগের প্রধান কারণ ভাইরাস, তথাপি বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গেও এর সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব এনজাইম আছে তা স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাপমাত্রায় কম কার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। শীতে বাতাসের তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে আদ্রতাও কমে যায়, যা শ্বাসনালির কর্মপ্রক্রিয়াকে বিঘি্নত করে ভাইরাসের আক্রমণ সহজ করে। শুষ্ক আবহাওয়া বাতাসে ভাইরাস ছড়াতে সাহায্য করে।

সর্দি ও ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ : ঠাণ্ডাজনিত সর্দি-কাশির শুরুতে গলাব্যথা করে, গলায় খুসখুস ভাব দেখা দেয়, নাক বন্ধ হয়ে যায়, নাক দিয়ে ক্রমাগত পানি ঝরতে থাকে এবং হাঁচি আসে। মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করা, দুর্বল লাগা ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। হালকা জ্বর ও শুকনা কাশিও হতে পারে। এটা মূলত শ্বাসতন্ত্রের উপরের অংশের রোগ এবং ৫-১০ দিনের মধ্যে নিজ থেকেই ভালো হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাশি কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা মূলত ফুসফুসের রোগ এবং এক্ষেত্রে জ্বর ও কাশিটা খুব বেশি হয়। ঠাণ্ডার অন্যান্য উপসর্গ ছাড়াও এ ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া ভাইরাসে আক্রান্ত দেহের দুর্বলতার সুযোগে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়াও আক্রমণ করে থাকে। বিশেষ করে নাকের সর্দি যদি খুব ঘন হয় বা কাশির সঙ্গে হলুদাভ কফ আসতে থাকে, তবে তা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণকেই নির্দেশ করে। এ সময় শুধু ফুসফুস নয়, টনসিলের প্রদাহও বাড়ে।

অন্যান্য রোগ : কাশির মতো প্রকট না হলেও শীতে আরও অনেক রোগেরই প্রকোপ বেড়ে যায়।

বিশেষ করে আথ্রাইটিস বা বাতের ব্যথা শীতে বাড়তে পারে। মূলত বয়স্কদেরই এ সমস্যা হয়। শীতের

শুষ্কতায় অনেকের ত্বক ফেটে যায় এবং চর্মরোগ দেখা দেয়। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় রক্তচাপ বাড়তে পারে। সেইসঙ্গে যদি ঠাণ্ডার ওষুধে সিউডো এফেড্রিন বা ফিনাইলেফ্রিন থাকে, তবে রক্তচাপ বাড়ে।

ঠাণ্ডা ও হাঁপানি প্রতিরোধে করণীয় : ঠাণ্ডা খাবার ও পানীয় পরিহার করা। শরীরের সর্বত্র ক্রিম, ভ্যাসলিন, লোশন ইত্যাদি মেখে রাখা। তাজা, পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা, যা দেহকে সতেজ রাখবে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করবে। মাঝেমধ্যে হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া। হাত ধোয়ার অভ্যাস করা। বিশেষ করে নাক মোছার পর হাত ধোয়া।

লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ

মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

 

 

সর্বশেষ খবর