রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

শীতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক

অধ্যাপক ডা. মো. আবু সিদ্দিক

শীতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক

গুটি পায়ে শীত এসে গেছে। পঞ্জিকার হিসেবে শীতের পৌষ আসার আগে অগ্রহায়ণেই জেকে বসতে শুরু করেছে শীত। প্রকৃতিতে তাপমাত্রার ওঠানামার সঙ্গে আমাদের দেহযন্ত্রটিকে খাপ খাইয়ে নিতে নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের রোগবালাই সবচেয়ে কম থাকে নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রায় (১৫০-২০০ সেলসিয়াস)। অতিরিক্ত শীতে যেমন রোগবালাই বাড়ে তেমনি মাত্রাতিরিক্ত গরমেও রোগ ব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। শীতে মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি যেমন- মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফুসফুসের নিউমোনিয়া, অ্যাজমার প্রকোপ বহুলাংশে বৃদ্ধি পায় শীতে।  

সবচেয়ে মারাত্মক ভয় হলো হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। শীতের প্রকোপে শীতে বিশেষ করে হঠাৎ শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে এবং সেটি যদি দু-তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় তবে হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট অ্যাটাক জনিত হঠাৎ মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তেমনিভাবে ব্রেইন স্ট্রোকও বহুগুণ বেড়ে যায়।  

শীতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক বৃদ্ধি পাওয়ার নিয়ামক হিসেবে দেখা গেছে যে হঠাৎ মাত্রাতিরিক্ত শীতের মুখোমুখি হলে মানুষের রক্তনালির সংকোচন বৃদ্ধি পেয়ে রক্ত চাপ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে রক্তের বায়োকেমিস্ট্রিতেও কিছু পরিবর্তন ঘটে এবং রক্তের জমাটবদ্ধতা বৃদ্ধি পায়। যে কারণে করোনারি (হার্ট) ও সেরিব্রাল (ব্রেইন) থ্রোমবাসিস ত্বরান্বিত হয় এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক বৃদ্ধি পায়। এ কারণেই ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, রাশিয়া, কানাডার মতো শীত প্রধান দেশে যখন তাপমাত্রা ০০ সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায় তখন রাস্তাঘাটে বিশেষ করে খুব ভোরে এবং রাতে হঠাৎ মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যা এবং রাতে হঠাৎ হৃদরোগ ও নিউরোলজি হাসপাতালের রোগী ভর্তির সংখ্যাও অনেক বৃদ্ধি পায়। তবে শীতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সংখ্যা নির্ভর করে শীত মোকাবিলার প্রস্তুতির ওপর। গরম কাপড় চোপড়, জুতো-মোজা, হ্যান্ড গ্লাবস, বাড়তি হিটিং সিস্টেম, স্নানে উষ্ণ পানির ব্যবহার এবং গাড়িতে তাপ নিয়ন্ত্রকের ব্যবস্থা থাকায় শীত প্রধান উন্নত দেশগুলোতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সংখ্যা ষাটের দশক থেকে বর্তমানে অনেকটাই নিচে নেমে এসেছে।  

কিন্তু আমাদের দেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশের চেহারা ভিন্ন। পরিবেশ দূষণের কারণে বৈশ্বিক আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশেরও আবহাওয়ায় গতি-প্রকৃতি বদলে গেছে। হঠাৎ করে প্রচণ্ড গরম বা ডিপ্রেশন যেমন দেখা যায় তেমনি শ্বৈত্যপ্রবাহ এবং গড় তাপমাত্রা ও হেরফের পরিলক্ষিত হচ্ছে। এখন শীতে দেশের অনেক স্থানেই তাপমাত্রা ১০০ সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়। আর আমাদের দেশের বাড়িঘরে তো হিটিং সিস্টেম নেই। অসচ্ছল লোকদের গরম কাপড়, গরম লেপ তোশকেরও ব্যবস্থা নেই। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধরা শীতের প্রকোপে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, নিউমোনিয়াসহ অসুখ বিসুখের ঝুঁকিতে পড়ে। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন এবং প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন।  

লেখক : চেয়ারম্যান, কার্ডিওলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

 

 

সর্বশেষ খবর