সোমবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

হার্ট, ব্রেইন ও গর্ভের সন্তানকে সুস্থ রাখে ফলিক এসিড

হার্ট, ব্রেইন ও গর্ভের সন্তানকে সুস্থ রাখে ফলিক এসিড

ফলিক এসিড হৃদরোগ, বিষণ্নতা ও ডাইমেনসিয়া প্রতিরোধ করে, গর্ভজাত সন্তানের অঙ্গহানি রোধ করে।

ফলিক এসিড এক ধরনের ভিটামিন 'বি' কমপ্লেক্স। যাকে ভিটামিন ই-৯ বলা হয়। ফলিক এসিড পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন বলে চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনের মতো শরীরে মজুদ থাকার সুযোগ নেই। ফলে খাদ্যের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়। ফলিক এসিডকে ফোলেট নামেও অভিহিত করা হয়। সবুজ পাতাজাতীয় শাকসবজি, টক ফল ও ডাল জাতীয় খাবারে ফলিক এসিড প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। উন্নত বিশ্বে আটা, ময়দা, চাল জাতীয় খাবারের সঙ্গে কৃত্রিমভাবে ফলিক এসিড সংমিশ্রণ করে সরবরাহ করা হয়। আমরা প্রাকৃতিক খাদ্যবস্তু গ্রহণের মাধ্যমে এবং প্রয়োজন মোতাবেক ওষুধ হিসেবে ফলিক এসিড গ্রহণ করতে পারি।

আমরা জানি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের প্রাদুর্ভাব আমাদের দেশে অনেক বেশি, যা কর্মক্ষম ব্যক্তিদের শারীরিক অসমর্থতা ও মৃত্যুর জন্য প্রধানত দায়ী। এ ধরনের মৃত্যুর প্রভাব পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সুদূরপ্রসারী। বিপুল সংখ্যক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ফলিক এসিড এবং ভিটামিন ই-৬ ও ই-১২ এর অভাবে শরীরে হোমোসিসটিন নামক এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ মজুদ হতে থাকে। মানবদেহে হোমোসিসটিনের আধিক্য হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। রক্তনালির নমনীয়তা কমায়, যার ফলে রক্ত প্রবাহের বিঘ্ন ঘটার মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। রক্তনালিতে কোলেস্টেরল জমা হওয়াকে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বলা হয়। রক্তে হোমোসিসটিনের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বৃদ্ধির যোগসূত্র বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক এসিড গ্রহণের মাধ্যমে হোমোসিসটিনের মাত্রা স্বাভাবিক রেখে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুতরাং পরিমিত মাত্রায় ফলিক এসিড গ্রহণের মাধ্যমে রক্তে হোমোসিসটিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এসব প্রবণতা বৃদ্ধিকে রোহিত করা যায়, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।

মাতৃগর্ভে ৩০ দিন বয়সে শিশুর স্নায়ুতন্ত্র সুসংগঠিত হয়ে থাকে। এ সময় মায়ের শরীরে ফলিক এসিডের ঘাটতি থাকলে শিশুর স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্ক গঠনে বড় ধরনের ত্রুটি দেখা দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি যে সব মা অতিরিক্ত ফলিক এসিড গ্রহণ করছেন তাদের গর্ভজাত শিশুদের মধ্যে স্নায়ুতন্ত্রের ও মস্তিষ্কের এসব ত্রুটি শতকরা ৬০ ভাগ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত কমানো সম্ভব, যার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে অতিরিক্ত ফলিক এসিড কৃত্রিমভাবে সংযোজন করা বাধ্যতামূলক করেছে।

ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার : সবুজ পাতা সমৃদ্ধ খাবার যেমন- পুঁইশাক, পাটশাক, মুলাশাক, সরিষা শাক, পেঁপে, লেবু, ব্রকলি, মটরশুঁটি, শিম, বরবটি, বাঁধাকপি, গাজর ইত্যাদি। আম, জাম, লিচু, কমলা, আঙ্গুর, স্ট্রবেরী ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের ডাল যেমন- মসুর, মুগ, মাষকালাই, বুটের ডাল ইত্যাদিতে ফলিক এসিড প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। এছাড়াও রয়েছে সরিষা, তিল, তিসি, সূর্যমুখীর বীজ, লাল চাল, লাল আট ইত্যাদি।

ডা. এম. শমশের আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা ।

 

 

সর্বশেষ খবর