সোমবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

মানসিক রোগী মানেই পাগল নয়

মানসিক রোগী মানেই পাগল নয়

মানসিক রোগী মানেই পাগল নয়। 'পাগল' শব্দটি ব্যবহার করে আমরা অপরাধ করছি। কারণ এতে সামাজিক আচরণ স্থূল হয়ে পড়ছে। ফলে এ ধরনের রোগীরা হীনমন্যতায় আক্রান্ত হয়। তাই আমরা চাই 'মন' নিয়ে সচেতনতা, চাই উন্নত সমাজ ব্যবস্থা, উন্নত মানসিক স্বাস্থ্য। মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক জানতে ডা. মোহিত কামালের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন- শামছুল হক রাসেল      

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, নারী-পুরুষ সবাই বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে পারে, নারীরা ১-৩ গুণ বেশি ভোগে। প্রতি ১০ জনে একজন নারী বিষণ্নতায় ভুগে থাকেন। এ প্রবণতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে জাতির বোঝা হিসেবে চিহ্নিত রোগের তালিকায় বিষণ্নতা হবে দ্বিতীয়। দেখা যায়, ১% বেকারত্ব বাড়লে আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ে ০.৭%। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে দরিদ্রতা ও বেকারত্ব বাড়লে আত্মহত্যা বৃদ্ধি পায়। বিষণ্নতায় আত্মহত্যা ও মদ্যপানের প্রবণতা বেশি দেখা দেয়।  

দেহ ও মন মিলেমিশে একাকার, একই সূত্রে এবং ছন্দে গাঁথা। বুকের বাম দিকে আলতো করে হাত রেখে হৃদয়ের কথাবলি, মনের অভিব্যক্তির স্থান নির্ধারণ করি। কেউ কেউ বলেন, 'মন' কী, কোথায়? আসলে মন ব্রেনেরই অংশ; চিন্তা-চেতনা, বুদ্ধিবৃত্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেহ আমরা দেখি, মন দেখি না। আবেগ, অনুভূতি, আচার-আচরণ এবং নানাবিধ ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমেই 'মনের' চিত্রটি বাইরে বেরিয়ে আসে, প্রতিভাত হয়। দেহের আছে সুস্থতা, অসুস্থতা। মনেরও তেমনি রয়েছে সুখ, অসুখ। দেহ অসুস্থ হলে দেহের কলকব্জায় ওলটপালট কিছু ঘটলেই আমরা উদ্বিগ্ন হই, ছুটে যাই চিকিৎসকদের কাছে। আর মন যখন বিগড়ে যায়, তখন নানারকম উদ্বিগ্নতা, অসংলগ্নতা এবং হতাশায় আক্রান্ত হই। সেই সঙ্গে পারিপার্শ্বিকতার কটাক্ষ, টিটকারি তো আছেই। উপেক্ষিত হয় মনের দাবি। চিকিৎসা যে মনেরও হতে পারে এ ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবেই আমরা সচেতন নই, আমাদের সমাজও অন্ধ, উন্নত দেশগুলোর মতো মানসিক স্বাস্থ্যকে মূল্যায়ন করার মতো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তবে প্রচেষ্টা চলছে। অচিরেই অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়। আমাদের অবহেলা, অন্ধত্ব এবং অজ্ঞানতার সুযোগে ছোট ছোট আঘাত মনের মধ্যে বাসা বাঁধতে থাকে। সেই ক্ষত ধীরে ধীরে ফুলে-ফেঁপে ওঠে, প্রকট আকার ধারণ করে। তীব্র এবং জটিল মানসিক সংকটের সৃষ্টি করে। চিকিৎসা ব্যবস্থা আজ বিশ্বব্যাপী উন্নততর হচ্ছে।  

দেহের নানা রোগের যেমনি চিকিৎসা হয়েছে, সব ধরনের মানসিক সংকটেও তেমনি বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা রয়েছে। 'মানসিক স্বাস্থ্য' মানেই মানসিক কোনো রোগ নয়। আরও জেনে রাখুন, মানসিক রোগ না থাকাকেই মানসিক স্বাস্থ্য বলে না। একটি বিষয় মনে রাখা ভালো, মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। এমন কোনো বৈশিষ্ট্য নেই, যা মানসিক সুস্বাস্থ্যের প্রমাণ হিসেবে এককভাবে সুস্পষ্ট। বলা যায়, মানসিক সুস্থতা ও অসুস্থতার মধ্যে পরিচ্ছন্ন কোনো বিভাজন রেখা নেই। একজন সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যসম্পন্ন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি, উত্তর পেলেই সুস্থতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা সহজ হবে। মানসিক অসুস্থতা মানেই উন্মাদগ্রস্ততা নয়। চলমান জীবনে প্রতিটি মানুষের জীবনে এ ধরনের সংকট জটিলতা Acute stress disorder কিংবা reactive depression আসতেই পারে। প্রাথমিক অবস্থায় সমস্যার সমাধান না হলে দীর্ঘ মেয়াদি মানসিক অস্থিরতা চলে আসতে পারে। তাই একা একা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে না পারলে মনের চিকিৎসার জন্য সচেতনতা বাড়ানো উচিত। মনোরোগ চিকিৎসক, থেরাপিস্ট বন্ধুর মতো হাত বাড়িয়ে দেবেন। তারাই দেখাবেন শান্তির পথ। দূর করবেন মানসিক যন্ত্রণা। মনে রাখতে হবে, সব ধরনের মানসিক অসুস্থতা কিংবা সংকটের বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা এবং সমাধান রয়েছে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই একটি স্বচ্ছ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, মানসিক রোগী মানেই পাগল নয়। 'পাগল' শব্দটি ব্যবহার করে আমরা একটি সামাজিক অপরাধ করছি। কারণ এতে সামাজিক আচরণ স্থূল হয়ে পড়ছে। তাই আমরা চাই 'মন' নিয়ে সচেতনতা, চাই উন্নত সমাজ, উন্নত মানসিক স্বাস্থ্য।

 

 

সর্বশেষ খবর