শনিবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

নাকের এলার্জি রাইনাটিস

অধ্যাপক ডা. একেএম মোস্তফা হোসেন

নাকের এলার্জি রাইনাটিস

এলার্জি নামক ব্যাধিটির সঙ্গে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। এটি মানুষের দেহের একটি যন্ত্রণাদায়ক ব্যাধি। যে কোনো বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে এ সময়টায় এলার্জির প্রাদুর্ভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া ঠাণ্ডা ও গরম মিলিয়ে আবহাওয়াটা থাকে এ রোগের অনুকূলে। এলার্জির কারণে হাঁচির উদ্রেক হয় এবং এক সময় তা শ্বাসকষ্টেও রূপ নিতে পারে। নাকের এলার্জিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এলার্জিক রাইনাটিস বলা হয়। যার অর্থ হচ্ছে এলার্জিজনিত নাকে প্রদাহ। সাধারণত এলার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানসমূহ মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শ্বাসনালিতে প্রবেশ করলে এলার্জির উদ্ভব হয়। এলার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থকে অ্যালার্জন বলে।

কারণ : নানা ধরনের এলার্জন যা সচরাচর বা ঋতু পরিবর্তনের কারণে দেখা যায়। ঘরে বা অফিসে জমে থাকা পুরনো ধুলাবালি, পরাগ রেণু, পোষা প্রাণীর পশম বা চুল। নানা ধরনের ছত্রাক, ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির কারণেও নাকে এলার্জি হয়। বংশগত কারণে অনেক সময় এ রোগ হয়ে থাকে। আবহাওয়া বা বাতাসের আর্দ্রতার তারতম্যের কারণেও এ রোগ হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের এলার্জি জাতীয় খাদ্য যেমন : চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ, ডিম, পাকাকলা, গরুর মাংস, বেগুন, দুধ, তামাক ইত্যাদি গ্রহণ করলেও এলার্জি হয়। মাইট হচ্ছে এলার্জির সবচেয়ে বড় শত্রু। এটি অতি ক্ষুদ্রাকৃতির। যা কিনা ঘরের জমে থাকা ধুলা, কার্পেট, বিছানা, বালিশে ইত্যাদিতে থাকে। নিঃশ্বাসের সঙ্গে ধুলার সঙ্গে যদি এটি শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে, তবে তা এলার্জি রোগীর জন্য মারাত্দক আকার ধারণ করে। নাকের পলিপ ডিএনএস বা অন্য কিছু নাকে আটকে থাকলেও এলার্জিক রাইনাইটস হতে পারে।

লক্ষণ : নাক বন্ধ হওয়া। সাধারণত এক নাক, কখনো কখনো দুই নাকই বন্ধ হয়ে যায়। নাক দিয়ে পানি বা পানি জাতীয় পদার্থ নিঃসৃত হওয়া। মাত্রাতিরিক্ত হাঁচি হওয়া। নাকে চুলকানি বা নাকের ভেতর কিছু আছে এমন মনে হওয়া। শ্বাসকষ্ট হওয়া। নাকের ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া। মাথাব্যথা ও ঘোরা অনুভব হওয়া। কাশির উপক্রম হওয়া। চোখ বা শরীরে চুলকানি। অন্য কোনো স্থানে চুলকানি হওয়া। শরীরে জ্বর জ্বর বা ম্যাজম্যাজ ভাব হওয়া।

চিকিৎসা : এ সব রোগীর জন্য প্রথমে করণীয় হচ্ছে- যে সব উপাদান এলার্জির প্রকোপ বৃদ্ধি করে, তা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা। চিকিৎসকরা এ ধরনের রোগীদের এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ সোডিয়াম ক্রোমোগ্লাইকেট ও স্টেরয়েড ন্যাজাল স্প্রে দিয়ে থাকেন। নাকের বন্ধভার অল্প সময়ের জন্য নিরাময়ের পদ্ধতি হিসেবে নাকের ড্রপ দেওয়া হয়ে থাকে রোগীদের। তবে হার্টের রোগীদের জন্য জাইলোমেটা-জোলিন জাতীয় নাকের ড্রপ ব্যবহার উচিত নয়। এন্ট্রি হিস্টামিন শিশুদের এবং গর্ভবর্তী মহিলাদের জন্য সেবন ঠিক নয়। রোগীর অবস্থা খুব বেশি মারাত্দক হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ সার্জনের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

লেখক : অ্যাজমা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা।

 

 

সর্বশেষ খবর