সোমবার, ৬ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাতজ্বর ও বাত এক নয়

ডা. আমিরউজ্জামান খান

বাতজ্বর ও বাত এক নয়

বাতজ্বর সাধারণত ৭ থেকে ২২ বছরের ছেলে ও মেয়েদের হয়ে থাকে। তবে এই রোগ সাধারণত বেশি হয়ে থাকে ১৪ ও ১৫ বছরের ছেলে ও মেয়েদের। সাধারণত উন্নয়নশীল দেশে ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই রোগ বেশি হয়। আর বাত যে কোনো বয়সেই হতে পারে, তবে মেয়েদের এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। ছোট মেয়েদের অনেক সময় এই বাত রোগ ৪/৫ বয়সে হতে পারে তখন তাকে Juvenile Rheumatoid Arthritis বলে থাকে। সাধারণত ২৫-৪০ বছর বয়সের মেয়েদের এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। তবে যে কোনো বয়সেই এই রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বাতজ্বর ও বাত দুটি ভিন্ন রোগ। অনেকের ধারণা বাতজ্বর ও বাত একই ধরনের রোগ।

বাতজ্বরের লক্ষণ জ্বর, গলা ব্যথা, গিটে ব্যথা করা ও ফুলে যাওয়া এবং বুক ব্যথা করা ও ধড়ফড় করা। অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে এই রোগ থেকে হার্টফেইল হতে পারে। বাতজ্বরে সাধারণত শরীরের বড় বড় গিটগুলো ব্যথা ও ফুলে যেতে পারে তবে সব গিট একসঙ্গে ফুলে না। একটা গিটের ব্যথা ও ফুলা কমে গেলে অন্য আর একটি গিট ব্যথা ও ফুলে যায়। সাধারণত হাঁটুর গিট, কুনুইয়ের গিট, বেশি করে আক্রান্ত হয়। গিট ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে গলা ব্যথা থাকতে পারে। অথবা গলা ব্যথা কমে যাওয়ার পর গিটে ব্যথা করতে পারে ও ফুলে যেতে পারে। Tonsil, Pharynx এ Strepto coccus-Haemolyticus  নামক একটা জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর বাতজ্বর বা  Rheumatic fever হয়ে থাকে। সুতরাং গলা ব্যথা ও গিট ব্যথা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ও চিকিৎসা নিতে হবে। অন্যদিকে বাত রোগে সাধারণত শরীরের ছোট ছোট গিট বেশি করে আক্রান্ত হয়। যেমন পায়ের আঙ্গুল, হাতের আঙ্গুলের গিটগুলো বেশি আক্রান্ত হয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর পা মাটিতে ফেলতে অসুবিধা হয়, তারপর রোদ উঠার সঙ্গে সঙ্গে পায়ের ব্যথা কমতে থাকে ও পা মাটিতে ফেলতে সহজ হয়। বাতের ব্যথা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়। কিন্তু বাতজ্বরের ব্যথা ৪/৫ দিন দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং ওষুধ সেবন করলে ব্যথা ও ফুলা কমে যায়, আবার ওষুধ সেবন না করলেও কমে, তবে প্রশ্ন হতে পারে, ওষুধ সেবনের প্রয়জনীয়তা কি? বাতজ্বরের জটিলতা হলো Valve বা কপাটিকা খারাপ হয়ে যাওয়া, ওষুধ সেবন করলে এই কপাটিকা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। বাতজ্বরের জন্য যদি হৃৎপিণ্ডের ভাল্ব খারাপ হয়ে যায় তবে পরবর্তীতে ওষুধ সেবন করে ওই খারাপ Valveকে সুস্থ করা সম্ভব হয় না।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক (কার্ডিওলজি), স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।

 

সর্বশেষ খবর