শনিবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি শীতে বেশি

অধ্যাপক ডা. মো. আবু সিদ্দিক

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি শীতে বেশি

হঠাৎ তাপমাত্রা কমে গেলে রক্তনালি সংকুচিত হয়ে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, রক্ত জমে বন্ধ হয়ে যেতে পারে হার্টের রক্তনালিও। শীতে শুধু প্রকৃতির পরিবর্তন হয় তাই নয়, শরীরেও বহু পরিবর্তন সাধিত হয়। প্রকৃতিতে তাপমাত্রার ওঠানামার সঙ্গে দেহেও তাপমাত্রার প্রভাব পড়ে। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মেলাতে দেহযন্ত্রটিকে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাতে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের রোগবালাই সবচেয়ে কম থাকে নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রায় (১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। এর কম বা বেশি তাপমাত্রায় অনেক ধরনের অসুখ-বিসুখের প্রকোপ বাড়ে। মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, যেমন— মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি শীত আবহাওয়ায় বেড়ে যায়। ফুসফুসের বহু ধরনের সাধারণ অসুখ থেকে মারাত্মক ধরনের নিউমোনিয়া, অ্যাজমার প্রকোপ শীতে অনেক বাড়ে। সাধারণ সর্দিকাশি-ঠাণ্ডায়ই বেশি মানুষ আক্রান্ত হয় বলে শীতের অসুখ বলতে এগুলোই অনেকেই বুঝি। কিন্তু শীতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও অনেকগুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে হঠাৎ যখন তাপমাত্রা বেশি কমে যায়, তখন এই ঝুঁকি অনেক বাড়ে। দেখা গেছে, হঠাৎ শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে তা যদি দুই-তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয়, তবে তাতে হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট অ্যাটাকজনিত হঠাৎ মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তেমনিভাবে ব্রেইন স্ট্রোক হয়ে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও বেশি ঘটে। শীতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক কেন বেশি হয়? গবেষণায় দেখা গেছে, হঠাৎ মাত্রাতিরিক্ত শীতের মুখোমুখি হলে মানুষের রক্তনালি সংকুচিত হয়ে পড়ে। এতে অভ্যন্তরীণ রক্তচাপ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে রক্তের অভ্যন্তরীণ কিছু জৈব-রাসায়নিক পরিবর্তনও ঘটে। এ কারণে রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তাই আগে থেকেই যাদের রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের রক্ত জমাট বেঁধে থ্রম্বসিস বেশি ঘটে। আর এই থ্রম্বসিস বা জমাট রক্ত বাঁধার ঘটনা যখন হার্টের করোনারি আর্টারিতে হয়, তখন হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। মস্তিষ্কের সেরিব্রালে হয়ে স্ট্রোক করতে পারে।

তাহলে শীতের কারণে এসব মৃত্যুর ঘটনা বা রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কি কমানো সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। শীতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি নির্ভর করে শীত মোকাবিলার প্রস্তুতির ওপর। গরম কাপড়চোপড়, জুতা-মোজা, হ্যান্ড গ্লাভস, বাড়তি হিটিং সিস্টেম, গোসলে উষ্ণ পানির ব্যবহার ও তাপ নিয়ন্ত্রকের ব্যবস্থা করা গেলে ঝুঁকি কমানো যায়। তাই শীতের সময় শরীর গরম রাখতে পারে এমন কাপড় পরিধান করা উচিত। সম্ভব হলে হাতে-পায়ে মোজা পরিধান করা উচিত। বাড়িতে ঘর গরম করার যন্ত্র ব্যবহার করতে পারলে ভালো। না পারলে বেশি শীতের সময় যতটা সম্ভব ঘরের ভিতরে অবস্থান করা উচিত। রোদ উঠলে রোদে দাঁড়িয়ে শরীর গরম করে নিতে পারেন।  

লেখক : ডিভিশন প্রধান, কার্ডিওলজি বিভাগ,

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়া।

সর্বশেষ খবর