মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্যানক্রিয়াসের সাতকাহন

অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুর রহমান

প্যানক্রিয়াসের সাতকাহন

প্যানক্রিয়াসের ইনফেকশনে মারাত্মক আকার ধারণ করে যাতে প্যানক্রিয়াসের স্বাভাবিক টিস্যুও ধ্বংস হয়ে শক্ত টিস্যু অবস্থান নেয়। ক্রমান্বয়ে প্যানক্রিয়াস শক্ত হতে থাকে। কোপেন হেগেনের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই রোগের আক্রান্তের হার প্রতি লাখ জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র আটজন প্রতি বছরে। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং জাপানিদের মধ্যে প্রতি বছর আক্রান্তের হার দুইজন থেকে প্রতি লাখে ১০ জন, পুরুষের ক্ষেত্রে আক্রান্তের হার মহিলাদের তুলনায় ৪ গুণ।

কারণ : অজানা কারণের ক্ষেত্রে এই রোগের হার অনেক বেশি। যারা গরম আবহাওয়ায় বসবাস করে যেমন, ভারতের কেরালা, তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের হার অধিক। তরুণ বয়সে প্যানক্রিয়েটাইটিস হয়, ডায়াবেটিস দেখা দেয়। পাথর তৈরি হয়। যেসব তরুণ অতি মাত্রায় ধূমপান করে তাদের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।

বমি বমি ভাব : ব্যথার সঙ্গে এই উপসর্গ দেখা দেয়। প্যানক্রিয়াসে আঘাত হলে এই রোগ দেখা দেয়। ক্যান্সার হলে আবার প্যানক্রিয়েটাইটিসের ঝুঁকি থাকে।

লক্ষণ : ব্যথা প্রধান লক্ষণ। পেটের উপরের মাঝখানে ব্যথা হবে যদি ইনফেকশন প্যানক্রিয়াসের মাথায় হয়। যদি ইনফেকশন প্যানক্রিয়াসের বডিতে হয় তখন ব্যথা হবে পেটের উপরের অংশের বামদিকে যা পেছনে চলে যায় এই ব্যথা কখনো কখনো বাম কাঁধে চলে যায়। ব্যথা সব সময় হয় এবং থেকে থেকে হয়।

বমি বমি ভাব : ব্যথার সঙ্গে এই উপসর্গ দেখা দেয়।

বমি হওয়া। শরীরের ওজন কমতে থাকে, ব্যথার ভয়ে তার খাওয়ার রুচি কমতে থাকে। ঘুম কমে যায়। কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। অসুখের তীব্রতা এমন রূপ নেয় যে, বারবার হাসপাতালে ভর্তি হয়। জীবনযাপনের স্বাভাবিক ক্ষমতা কমতে থাকে। ওষুধনির্ভর হয়ে পড়ে। ডায়রিয়া দেখা দেয়। ডায়াবেটিস দেখা দেয়।

পরীক্ষা : প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করার জন্য সিরাম এমাইলেস পরিমাপ করা হয়। সিটিস্ক্যান দিয়ে দেখা হয় প্যানক্রিয়াসের মূল নালিটি কেমন আছে। তার ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা, তার নালিতে পাথর আছে কিনা, প্যানক্রিয়াস ফুলে আছে কিনা। আল্ট্রাসাউন্ড দিয়ে প্যানক্রিয়াসের আয়তন ও নালির ব্যাস দেখা হয়। এমআরসিপি। আইআরসিপি। পিটিসি। পরীক্ষাগুলো করা হয় নানা কারণে। সার্জারি করে অসুখ ভালো হবে কিনা, পরীক্ষাসমূহ দ্বারা নিশ্চিত হওয়া যাবে কোন চিকিৎসাপদ্ধতি দ্বারা অসুখ নির্মূল করা।

চিকিৎসা : প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে কারণ নির্ণয় করা যায়। ফলে চিকিৎসা দিলে রোগী সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে ওঠে। সার্জারির সময় পাথর বের করে আনা হয়। 

নতুন সার্জারি : প্যানক্রিয়াস সার্জারি প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতি যা বিশ্বে স্বীকৃত। যার নাম পাস্তো পদ্ধতি। এর অনেক রূপান্তর হয়েছে। এমনই একটি  ‘শহিদ পদ্ধতি’। এতে একটি জায়গায় কাটতে ও সেলাই করতে হয়। এতে জটিলতা ও সময় দুটোই কম।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, হেপাটোবিলিয়ারী, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর