মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক!

অধ্যাপক ডা. একেএম মোস্তফা হোসেন

কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক!

গ্রিক শব্দ ‘অ্যান্টি’ ও ‘বায়োস’ থেকে ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ শব্দটি এসেছে। অ্যান্টি অর্থ বিপরীত ও বায়োস অর্থ জীবন। অর্থাৎ এটি জীবিত মাইক্রোঅর্গানিজমের বিরুদ্ধে কাজ করে। যেসব রোগ সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়, তা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। এ জন্য ভাইরাসজনিত রোগের বিপরীতে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকরী। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণে বেশিরভাগ মানুষই খুব একটা সচেতন নয়। আমরা অনেকেই আছি যারা কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে থাকি। যা মোটেও ঠিক নয়। অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ ভালো তবে তা চিকিৎসকের পরামর্শে নিতে হবে। মুখে খাবার ফলে স্ট্রেপটোমাইসিন পাকস্থলী বা অন্ত্র থেকে রক্তে প্রবেশ করে না বললেই চলে এবং এই কারণে বিষক্রিয়া হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশনে স্ট্রেপটোমাইসিন চিকিৎসার অটোটেকসিসিটি অর্থাৎ মাথা ঝিমঝিম করা, মাথা ঘোরানো, মাথাব্যথা, খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব হওয়া, যেমন মুখ বা মুখের ভিতরে জ্বালাপোড়া করা, শরীরে সুচালো কোনো জিনিসের ফোটানোর ব্যথা অনুভব করা। অষ্টম মস্তিষ্ক স্নায়ুর (ক্রেনিয়াল নার্ভের) ওপর স্ট্রেপটোমাইসিনের প্রতিক্রিয়া অনেক সময় এরূপ প্রবল বিষক্রিয়ার পুরো ধারণ করতে পারে। এরকম অবস্থায় রোগীর সোজা হয়ে হাঁটার ক্ষমতা থাকে না। যেমন উঁচু-নিচু ও যে কোনো জায়গা, অন্ধকার জায়গা দিয়ে হাঁটার সময় নিজের শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে হাঁটতে পারে না। এরকম অবস্থায় অনেক বয়সের রোগীর ভিতর অধিক পরিমাণ দেখা যায়। পরিমাণে অনেক এবং বেশিদিন এই স্ট্রেপটোমাইসিন গ্রহণের ফলে এরকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় কানের ভিতর একটানা শব্দ হতে পারে ও কানে নাও শুনতে পারে। এই ওষুধ বন্ধ না করা হলে কানে শোনার মতো ক্ষমতা আর ফিরে আসে না। এদিকে আইসোনিয়াজিডের প্রতিক্রিয়া খুবই কম। যেসব রোগীর শরীরে আইসোনিয়াজিডের পরিবর্তন ধীরে ধীরে হয়ে থাকে তাদের ঘুম কমে যাওয়া, মাংসপেশিতে নিজ থেকে দপদপ করে কাঁপতে থাকা, অনেক সচেতনতা, খিঁচুনি প্রভৃতি দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণগুলো স্নায়ুবিক উপসর্গ শরীরে পাইরিডকসিন ভিটামিন (বি) অভাবের কারণে হতে পারে। পাইরিডকসিন দিলে লক্ষণগুলো প্রকাশিত হয় এবং এতে আইসোনিয়াজিডের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয় না। আইসোনিয়াজিডের অন্যান্য প্রতিক্রিয়ার ভিতর রয়েছে খাবারে অনীহা, বমি বা বমি বমি ভাব, পাকস্থলী ও অন্ত্রের অসুবিধা, হেপাটাইসিস, জন্ডিস, রক্ত কমে যাওয়া, জ্বর, শরীরে ফুসকুড়ি প্রভৃতি দেখা দিতে পারে। মৃগী রোগী বা মদ পান করে এমন ব্যক্তি বা বৃক্ক ও যকৃতের রোগীর জন্য আইসোনিয়াজিড দিতে সতর্কতার প্রয়োজন। অন্যদিকে রিফামপিসিন খুব সহজে শরীরে মানিয়ে যায়। ওষুধের প্রতিক্রিয়া সাধারণত এর ব্যবহার নিয়োগের কারণেই হয়ে থাকে। পরিপাকতন্ত্রের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর ভিতর খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, অস্বস্তি, অনেক সময় এমন আকার ধারণ করে যে ওষুধ বন্ধ না করে উপায় থাকে না। রিফামপিসিন ও আইসোনিয়াজিডের এই দুটো দিয়া চিকিৎসায় অনেক সময় পাণ্ডুরোগের লক্ষণ দেখা যায়। যকৃৎ ভালো না থাকলে রোগী যদি যকৃতের ওপর প্রভাবধর্মী কোনো ওষুধ খেয়ে থাকে তখন রিফামপিসিনে মারাত্মক বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণে আরও সতর্ক হতে হবে।

লেখক : অ্যাজমা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ

মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর