বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

গর্ভবতীদের কি করা উচিত, কি নয়

ডা. নুসরাত জাহান

গর্ভবতীদের কি করা উচিত, কি নয়

গর্ভধারণ যে কোনো নারীর জীবনে পরম আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। এ সময়ে তারা গুরুজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীর উপদেশ মানতে গিয়ে বুঝতে পারেন না কোনটি তাদের করা উচিত। এসব উপদেশ অনেক সময় মা ও বাচ্চার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্য কনসিভের পরপরই একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেকে প্রেগনেন্সি নিশ্চিত করার পাশাপাশি কোনো রিস্ক ফ্যাক্টর (যা মা অথবা বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ) আছে কিনা দেখে নিতে হবে।  গর্ভধারণের পর প্রথম যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে তা হছে গর্ভপাত। এজন্য পরিবারের সদস্যরা অনেক সময় বিভিন্ন কুসংস্কারকে দায়ী করেন, যেমন সন্ধ্যার পর বাইরে বের হওয়া, স্বামী-স্ত্রীর সহবাস, সামান্য আঘাত পাওয়া ইত্যাদি। সাধারণভাবে এগুলো গর্ভপাতের জন্য দায়ী না। প্রতি ১০০ জন গর্ভবতী নারীর  মধ্যে ১৫ জনের ক্ষেত্রে প্রথমবার গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে এর কারণ নির্ণয় করা যেতে পারে। অনেক মা মনে করেন ভিটামিন ওষুধ খেলে বাচ্চা বড় হয়ে যায় এবং সিজারের সম্ভাবনা বাড়ে। এটি একটি ভুল ধারণা। ভিটামিন মায়ের শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করে এবং হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। অনেক মা এ সময় শারীরিক পরিশ্রম ও সহবাস করা থেকে বিরত থাকেন। প্রকৃতপক্ষে কিছু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা (যেমন, প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, রিপিটেড  এবরসন, ওটএজ) ছাড়া গর্ভবতী মায়েরা স্বাভাবিক সব কাজই চালিয়ে যেতে পারেন। তবে প্রথম ও শেষ তিন মাস কিছুটা সাবধানে থাকতে বলা হয়। গর্ভবতী অবস্থায় একজন মা প্রতিদিন ৩০ মিনিট যেকোনো মধ্যম মানের ব্যায়াম (যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা) করতে পারেন সপ্তাহে ৩ থেকে ৭ দিন।  এতে করে অতিরিক্ত ওজন হওয়া, ডায়াবেটিস এবং প্রেসারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। আবার অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের জন্য কম ওজনের শিশু জন্ম নিতে পারে। অনেক মা তাদের পেটিকোট বা সালোয়ারের বাঁধন পেটের উপর শক্ত করে বেঁধে রাখেন যাতে বাচ্চা উপর দিকে উঠে না যায়। প্রকৃতপক্ষে গর্ভের বাচ্চাকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য এর চারপাশে এমনিওটিক ফ্লুইড বা পানির আবরণ থাকে এবং এই সময়ে মায়েদের ঢিলেঢালা পোশাক পরার উপদেশ দেওয়া হয়।  পেঁপে ও আনারস পেটের জন্য উপকারী ফল এবং পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যায়। তবে যাদের গর্ভপাতের হিস্ট্রি আছে তাদের প্রথম তিন মাস অতিরিক্ত কাঁচা পেঁপে ও আনারস না খাওয়াই ভালো। কারণ কিছু ক্ষেত্রে এগুলো জরায়ুর সংকোচন ঘটিয়ে গর্ভপাত করতে পারে। এ সময়ে আধাসিদ্ধ মাংস, আনপাস্তুরাইজড মিল্ক, হট ডগ খেলেও লিস্টেরিয়া নামক জীবাণুর সংক্রমণ থেকে গর্ভপাত হতে পারে। বাড়ির পোষা বিড়াল থেকেও অনেক সময় এই জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত চা, কফি বাদ দিতে হবে এবং প্রি এক্লাপ্সিয়া বা প্রেসারের  সমস্যা থাকলে খাবারে অতিরিক্ত  লবণ খাওয়া উচিত হবে না। অনেক মায়ের সংশয় থাকে অতিরিক্ত আলট্রাসাউন্ড বাচ্চার কোনো ক্ষতি করে কিনা। আলট্রাসাউন্ডে যে পরিমাণ রেডিয়েশন থাকে তা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর নয়। সাধারণত প্রেগনেন্সিতে দুই-চারবার আলট্রাসাউন্ড করা লাগতে পারে। তবে মা বা বাচ্চার কোনো কোনো জটিলতার ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি এই পরীক্ষা করার দরকার হতে পারে। গর্ভাবস্থায় ী-ত্ধু এবং ঈঞ ংপধহ গর্ভস্থ বাচ্চার রেডিয়েশনজনিত ক্ষতি করে, তাই এ পরীক্ষাগুলো করা যায় না। সবশেষে মনে রাখা উচিত, গর্ভবতী মাকে সব সময় হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা পরবর্তীকালে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে, যা গবেষণায় প্রমাণিত। তাই এ সময়টাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে।

এছাড়া সর্বদা থাকতে হবে সতর্ক।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক (অবস-গাইনি)

ডেলটা মেডিকেল কলেজ, মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর