মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

শ্বাসকষ্টের বড় কারণ সিওপিডি

অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ

শ্বাসকষ্টের বড় কারণ সিওপিডি

সারা বিশ্বে মৃত্যু হারের গুরুত্বপূর্ণ কারণ সিওপিডি। সিওপিডি একটি জটিল রোগ যা জিনগত, আচরণগত ও পরিবেশগত। কারণ ধূমপান, পেশাগত দূষণ, বায়ুদূষণ এবং শৈশবে নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণ দিয়ে প্রভাবিত হয়। এছাড়াও পুষ্টি এবং নিম্ন আর্থসামাজিক অবস্থাও এর সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রায়ই রোগটি নির্ণয় করা হয় না এবং একমাত্র পরিণত অবস্থাতেই চিকিৎসা করা হয়। যদিও তরুণদের মাঝেও এটি একটি শারীরিক সমস্যা। সিওপিডি হওয়ার সবচেয়ে প্রধান কারণ হলো ধূমপান। বিশেষভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে যে প্রায়ই সিওপিডি এবং হাঁপানি একে অপরের সঙ্গে ভুলভাবে নির্ণয় করা হয়। সিওপিডি ও হাঁপানির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা প্রয়োজন। কারণ এ দুটি রোগের কারণ এবং প্রক্রিয়া ভিন্ন এবং চিকিৎসার ফলও ভিন্ন। এখন পর্যন্ত সিওপিডির প্রতিকার সম্ভব হয়নি। তবে এর অগ্রগতিকে ধীরসম্পন্ন করা যাবে এবং ক্ষতির পরিমাণও কমানো সম্ভব। সঠিক পথ্য, নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট ধরনের ব্যায়াম, রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দৃঢ় মনোভাব নিয়ে বেশিরভাগ রোগী তাদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা পুনরায় কিছুটা ফিরে পেতে পারে। তার ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান আগের তুলনায় উন্নততর হতে পারে। সিওপিডি নির্ণয়ের জন্য সতর্কতার সঙ্গে রোগীর ইতিহাস নিতে হবে, রোগীকে ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা করতে হবে এবং সর্বশেষে ল্যাবরেটরিতে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে। রোগীর ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ধূমপান সম্পর্কে বিশদ তথ্য সংগ্রহ করা। যেমন :— (১) কোন বয়সে রোগী ধূমপান শুরু করেন? (২) প্রতিদিন রোগী কি পরিমাণ ধূমপান করেন?

(৩) তিনি কি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন কিনা?

(৪) ছেড়ে দিলে তা কতদিন আগে?

(৫) পরোক্ষ ধূমপানের কোনো ইতিহাস আছে কিনা? ইত্যাদি। রোগীর পরিবেশ ও কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে বিশদ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। জানতে হবে রোগীর কাশি আছে কিনা এবং থাকলে কাশির সঙ্গে কফ বের হয় কিনা? বের হলে কতদিন যাবৎ? কাশির সঙ্গে রক্ত বের হয় কিনা? রোগীর শ্বাসকষ্ট আছে কিনা? রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে বাঁশির মতো আওয়াজ হয় কিনা? রোগী প্রায়ই শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয় কিনা?

কোনো মানুষের সঙ্গে জন্মগতভাবেই সিওপিডি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সাধারণের তুলনায় একটু বেশি থাকে। এই অপরিবর্তনীয় ঝুঁকিগুলোকে আমরা হোস্ট ফ্যাক্টর বলি। যেমন :

(১) জেনেটিক কোনো সমস্যা।

(২) যাদের শ্বাসতন্ত্র হাইপার রেসপনসিড। (৩) ফুসফুসের গঠন ও বৃদ্ধিজনিত কোনো সমস্যা থাকে যাদের। (৪) যারা পুরুষ অর্থাৎ মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও পরিবেশগতভাবে বিভিন্ন উপাদানের সংস্পর্শ সিওপিডিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন : (১)

ধূমপান (২) কর্মক্ষেত্রে ধুলা, ধোঁয়া বা রাসায়নিক পদার্থ (৩) বায়ুদূষণ (৪) সংক্রমণ ইত্যাদি। সিওপিডি ও হাঁপানির মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য আছে। আসলে কোনো রোগী সিওপিডি আক্রান্ত কিনা তা

নির্ণয় করার সময় রোগীর হাঁপানি আছে কিনা তা

পার্থক্য করে নিতে হবে। হাঁপানি এবং সিওপিডির মধ্যে পার্থক্য করা প্রয়োজনীয়। কারণ : (১) রোগ দুটির কারণ ভিন্ন (২) রোগের গতি-প্রকৃতি ভিন্ন (৩) রোগ দুটিতে ফুসফুসের ভিন্ন জায়গা আক্রান্ত হয়।

চিকিৎসা : সিওপিডি রোগের বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ধাপ অনুযায়ী চিকিৎসা করবেন। আর যদি সিওপিডি রোগের সঙ্গে

একই রোগীর হাঁপানিও থাকে তবে দুটো

রোগের সমন্বিত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

লেখক : কনসালটেন্ট (বক্ষব্যাধি) ইউনাইটেড হাসপাতাল, ঢাকা। ফোন: ০১৭৪৫৯১৯৬৬৪

সর্বশেষ খবর