বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাতব্যথায় অবহেলা নয়

বাতব্যথায় অবহেলা নয়

বাতব্যথা বা আর্থ্রাইটিস একটি সচরাচর পরিলক্ষিত অসুস্থতা। এর সঙ্গে ব্যক্তির বংশগতির সম্পর্ক বিদ্যমান। মানে পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের বিশেষ করে মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি, নানা-নানী কারও এ ধরনের অসুস্থতা থাকলে ব্যক্তির এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। বাতব্যথায় আক্রান্ত রোগীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার স্বাভাবিক মানুষের থেকে অনেক বেশি।  তার মানে এই নয় যে, সব বাতব্যথা থেকেই হৃদরোগ হতে পারে। আসলে এসব রোগীর হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বাতব্যথায় আক্রান্ত রোগীদের হৃদরোগের কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে কিনা তার দিকে নজর রাখা ও সময় মতো হৃদরোগের চিকিৎসা গ্রহণ করা খুবই জরুরি। তা না হলে খুব দ্রুত হৃদরোগের অবনতি ঘটে রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে। বাতব্যথায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে পেরিকার্ডাইটিস, কার্ডিওমাইওপ্যাথি, কার্ডিয়াক এমাইলেডিসিস রক্তনালির প্রদাহ, করোনারি হার্ট ডিজিজ, অনিয়মিত হৃত্স্পন্দন, হৃৎপিণ্ডের ভাল্বের সমস্যা, ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ ও হার্ট ফেইলুর হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এসব হৃদরোগের লক্ষণ হিসেবে রোগীর বুকে ব্যথা বিশেষ করে পরিশ্রমকালীন বুক ব্যথা, কখনো কখনো নড়াচড়া করতে গেলে প্রচণ্ড বুক ব্যথা হওয়া, পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট হওয়া, কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পাওয়া। বুক ধড়ফড় করা আরও একটি হৃদরোগের লক্ষণ, যা এসব রোগীর প্রায়ই দেখা দিতে পারে। বাতব্যথা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগের এসব লক্ষণ যেমন— বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও বুক ধড়ফড় করাও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এই লক্ষণগুলোকে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রোগীর রোগ বৃদ্ধি পেয়ে আরও জটিল আকার ধারণ করলে আরও বেশি কিছু জটিল লক্ষণ পরিলক্ষিত হতে থাকে যেমন— সারাক্ষণ শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুকব্যথার তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়া, রোগীর শরীর হাত-পা-মুখ ফুলে পানি আসা, পেট ফুলে ভারী হয়ে যাওয়া, পেটের উপরের অংশে ব্যথা অনুভূত হওয়া, রোগীর প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া। রোগী ছোটখাটো কাজকর্ম যেমন— অজু, গোসল, পোশাক পরিবর্তন ইত্যাদি করতে গেলে খুব অস্থির হয়ে পড়েন।  যারা বাতব্যথা জাতীয় অসুস্থতায় ভুগছেন তারা প্রায় সময়ই ব্যথা নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন বেদনানাশক ওষুধ ও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন। কেউ কেউ এসব ওষুধ নিয়মিত সেবন করতে বাধ্য হন। মনে রাখতে হবে, বেদনানাশক এসব ওষুধ গ্রহণের ফলে রোগীর রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, রোগীর পেটে গ্যাস্ট্রিক আলসার দেখা দেয়, রোগীর অস্থি বা হাড় দুর্বল হয়ে যায়, রোগীর হার্ট ফেইলুরের প্রবণতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। হৃদরোগের প্রকোপ বৃদ্ধি ঘটে এবং রোগীর হাত-পা-মুখে পানি জমে ফুলে যায়। তাই এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা রোগের ক্ষেত্রে প্রতিকার প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম। তাই এ বিষয়ে যত্নবান হতে হবে।

কারণ প্রাথমিক অবস্থায় যত্নবান না হলে পরবর্তীতে এসব ক্ষেত্রে জটিলতা আরও বাড়তে পারে।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং মুন  ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাবর রোড, শ্যামলী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর