শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

শিশুদের বৃদ্ধি ঘাটতি ও করণীয়

শিশুদের বৃদ্ধি ঘাটতি ও করণীয়

জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (রিপোর্ট) তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ ছেলে-মেয়ে দৈহিক বৃদ্ধির ঘাটতিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা হলে প্রকৃত অবস্থা জানা যেতে পারে। পৃথিবীব্যাপী বাড়ন্ত শিশুর বৃদ্ধিজনিত সমস্যা দৃশ্যমান। বিশ্বব্যাপী এ সংখ্যা প্রায় ২.৫ শতাংশ। বৃদ্ধিজনিত সমস্যাগুলোকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়। তবে শিশুর বিশেষ বয়সের সঙ্গে তার বৃদ্ধি যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে কম হয় (-2 SD) তাহলে তার বৃদ্ধিজনিত ঘাটতি রয়েছে ধরে নেওয়া হয়।

কারণগুলোর মধ্যে— দীর্ঘস্থায়ী রোগ (জেনেটিক ত্রুটিসহ), বংশগত বৃদ্ধি ঘাটতি, হরমোনজনিত সমস্যার কারণে বৃদ্ধি ঘাটতি।

দীর্ঘস্থায়ী রোগজনিত বৃদ্ধি সমস্যা : যেসব শিশু খুব ছোটবেলা থেকে দীর্ঘসূত্রে রোগে আক্রান্ত হয় যেমন— যক্ষ্মা, হাঁপানি, ম্যাল অ্যাবজরসন সিনড্রোম, দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে তাদের বৃদ্ধি নিশ্চিতভাবে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে হয় না। আবার যাদের ছোটবেলা থেকে রোগের কারণে পুষ্টির ঘাটতি হয় তাদেরও বৃদ্ধি সঠিক হবে না অর্থাৎ বাড়ন্ত হয় না। এ ছাড়া জিন ও ক্রোমোজোম ত্রুটিজনিত সমস্যাসমূহের মধ্যে ডাউন সিনড্রোম, টার্নার সিনড্রোম প্রধানত চোখে পড়ে।

বংশগত বৃদ্ধি ঘাটতি : পরিবারের শিশুর বৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত হারে হচ্ছে না। এমন অভিযোগ নিয়ে যেসব অভিভাবক আসেন সেসব শিশুর সবারই যে বৃদ্ধি সঠিকভাবে হচ্ছে না তা নাও হতে পারে। কারণ একেকজনের দৈহিক বৃদ্ধির হার বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন রকম থাকে। তবে তা অবশ্যই তার পিতা-মাতা বা বড় ভাই-বোনের সঙ্গে মিলে যায়। অর্থাৎ আজকে যার বৃদ্ধি কম মনে হচ্ছে, কোনো এক সময় সেটা সঠিক হতে পারে এবং তা পূর্ব পুরুষদের দৈহিক বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। আমাদের কাছে যখন শিশুর অভিভাবকরা তার ছেলে-মেয়ের অসন্তুষ্টজনক বৃদ্ধির সমস্যা নিয়ে আসেন তখন আমরা তার পরিবারের অন্য সদস্যদের বৃদ্ধির হার দেখার সঙ্গে সঙ্গে তার সমবয়সীদের সাপেক্ষে বৃদ্ধি বেশি-কম সেটাও দেখার চেষ্টা করি। যেমন দেখা হয়, বৃদ্ধির হার কি সাম্প্রতিককালে কমেছে না বরাবরই কম ছিল? তারপর শিশুর বৃদ্ধির ঘাটতিজনিত সমস্যা মূল্যায়ন করতে গিয়ে তার শারীরিক গঠন, খাদ্যাভ্যাস, পারিবারিক বৃদ্ধিসংক্রান্ত ইতিহাস, দীর্ঘদিনের রোগের ইতিহাস নেওয়া হয়।

হরমোনজনিত সমস্যা :

আবার হরমোনজনিত বেশকিছু কারণ বৃদ্ধি ঘাটতির জন্য দায়ী। গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি স্পষ্টতই বৃদ্ধি ঘাটতির কারণ হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে যে কোনো সময় ঘাটতি শুরু হওয়ার পর পরই বৃদ্ধি ব্যাহত হবে। কম বয়সীদের ক্ষেত্রে যদি গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি থাকে তা শনাক্ত করে চিকিৎসা করতে পারলে ফলাফল খুবই আশাব্যঞ্জক। গ্রোথ হরমোন ঘাটতিজনিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতি, চিকিৎসা ও ফলোআপ বাংলাদেশে হরমোন বিশেষজ্ঞ দক্ষতার সঙ্গে করে আসছেন। কিন্তু গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি থাকলে চিকিৎসা ব্যয়বহুল হয়। আবার টার্নার সিনড্রোম রোগীদেরও গ্রোথ হরমোন দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়। গ্রোথ হরমোন ঘাটতি থাকলে প্রাপ্ত বয়সেও গ্রোথ হরমোন ইনজেকশন নিতে হতে পারে।

ডা. শাহাজাদা সেলিম, সহকারী অধ্যাপক এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর