শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস আজ

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস আজ। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এ দিনটি। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘connect, commu-nicate, care’ (সংযোগ কর, যোগাযোগ স্থাপন কর, যত্ন নাও)। এই সংযোগ করতে হবে আপনজনের সঙ্গে, ভালোবাসার বন্ধনে। যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে সহমর্মিতা, সহানুভূতি, সাপোর্ট আর সুসম্পর্কের মাধ্যমে। যত্ন নিতে হবে আপনভাবে, নিবিড়ভাবে। মনে রাখতে হবে এসব পদক্ষেপ নিতে হবে দ্রুত, যথাসময়ে, অনতিবিলম্বে। এভাবেই বেঁচে যেতে পারে অনেক প্রাণ, সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে সুন্দর, স্বপ্নিল ভবিষ্যৎ। এসব নিয়ে রইল কিছু আলোচনা— ১। ‘এবং তোমরা কখনো নিজেকে হত্যা করিও না। নিশ্চয়ই, আল্লাহ তোমার প্রতি সর্বাপেক্ষা দয়ালু’- সূরা আন নিসা, আয়াত ২৯। পবিত্র কোরআনে এভাবেই আত্মহত্যাকে নিষেধ করা হয়েছে। তেমনিভাবে প্রধান অন্যান্য ধর্মেও (হিন্দু, বৌদ্ধ) আত্মহত্যা পাপের, বর্জনীয় এবং গর্হিত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আত্মহত্যা সবসময়ই একটি সম্ভাবনার অপার মৃত্যুর, একটি জীবন, একটি ইতিহাসের অবসান এবং তা কখনো কাম্য নয়।

২। আত্মহত্যার চিত্র উদ্বেগজনক, ভীতিকর। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি বছর বিশ্বে আত্মহত্যা করে প্রায় ৮ লাখ মানুষ। আপনি যতক্ষণে উপরের ২-৩টি লাইন পড়েছেন অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে একজন বিশ্বের কোথাও আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যায় মৃত্যুর সংখ্যা হত্যা, সন্ত্রাস, যুদ্ধের কারণে মৃত্যুর চেয়েও অনেক বেশি। আশঙ্কার কথা হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করছে ২০২০ সালে বিশ্বে প্রতি বছর আত্মহত্যায় মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশে এ বিষয়ক জরিপ করা দুরূহ ব্যাপার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০১১ সালে এদেশে প্রায় ১৯ হাজার  লোক আত্মহত্যা করেছে। কি ভয়াবহ আতঙ্কিত হওয়ার মতো তথ্য। দি ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে ২০০২-২০০০৯ পর্যন্ত এদেশে আত্মহত্যা করেছে প্রায় ৭৩ হাজার মানুষ। আমরা একটি জীবনপ্রদীপ জ্বালাতে পারি না, কিন্তু এত প্রদীপ এমনি করে নিভে যায়।

৩। আমাদের আত্মহত্যার কারণগুলো জানতে হবে, তাহলেই আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। আত্মহত্যার ৯০% কারণ মানসিক রোগ। তাই চিকিৎসায় তা নিরাময় যেহেতু সম্ভব, আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও কমিয়ে আনা সম্ভব। ডিপ্রেশন রোগটি একাই ৭০% আত্মহত্যার কারণ। এছাড়া সিজোফ্রেনিয়া, ম্যানিয়া, ব্যক্তিগত সমস্যা (personality disorder), উদ্বিগ্নতা নামক রোগগুলোও এর কারণ হতে পারে। আমাদের দেশের বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে মানসিক আঘাত- যেমন মেয়েদের শারীরিক/মানসিকভাবে হেয় করা, ধর্ষণ ও অন্যান্য মানসিক আঘাতজনিত কারণে তাদের মাঝে অসহায়ত্ব, আত্মগ্লানি, হতাশা থেকে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। স্কুলে শিশুকে অপমান, বিদ্রূপ বা হেনস্তার কারণেও অনেক শিশু এ পথ বেছে নেয়। সম্পর্কের টানাপড়েন, মাদকাসক্তি, বেকারত্ব, একাকিত্ব, কঠিন রোগভোগ (ক্যান্সার), অভাব, অর্থনৈতিক দৈন্যতা এসবও আত্মহত্যার কারণ। কোন ব্যক্তি নিজেকে জীবনে, সমাজে অপাঙক্তেয় বা অপ্রয়োজনীয় মনে করেও আত্মহত্যা করতে পারে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আজিজুল ইসলাম

অধ্যাপক ও উপদেষ্টা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও সিএমএইচ, ঢাকা

সর্বশেষ খবর