এনজিওগ্রাম রক্তনালির একটি পরীক্ষার নাম ও চিকিৎসা পদ্ধতি। এই পরীক্ষাটি এক ধরনের Special X-Ray পরীক্ষার মতো। যেভাবে এই পরীক্ষা করা হয় সেই পদ্ধতিকে এনজিওগ্রাফি বলে এবং পরীক্ষার পর X-Ray Image বা Film যেটি বের হয় তাকে বলে এনজিওগ্রাম। হৃপিণ্ডের রক্তনালির সমস্যা দেখার জন্য যে এনজিওগ্রাম করা হয় তাকে করনারি এনজিওগ্রাম বলা হয়। মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যা দেখার জন্য যে এনজিওগ্রাম করা হয় তাকে বলে সেরিব্রাল এনজিওগ্রাম, কিডনির রক্তনালিতে সমস্যা দেখার জন্য যে এনজিওগ্রাম করা হয় তাকে বলে রেনাল এনজিওগ্রাম এবং হাত-পায়ের রক্তনালি দেখার জন্য যে এনজিওগ্রাম করা হয় তাকে পেরিফেরাল এনজিওগ্রাম বলে থাকে। কোনো কারণে যদি করনারি আর্টারির ভেতর চর্বি জমে হৃপিণ্ডের মাংসপেশির অক্সিজেন ও নিউট্রিশন সরবরাহে ব্যাহত করে, তখন বুকে ব্যথা হতে পারে। যদি করনারি আর্টারিতে চর্বি জমে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়, তবে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হবে। সঙ্গে সঙ্গে বমি হতে পারে। ঘাম হতে পারে ও বুক ধড়ফড় করতে পারে এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এই রোগকে তখন Acute Myocardial Infarction বলে থাকে। হৃপিণ্ডের মাংসপেশি যদি করনারি আর্টারিতে চর্বি জমার জন্য অক্সিজেন ও নিউট্রিশন না পায় তখন হৃপিণ্ডের মাংসপেশি শুকিয়ে যায় এবং হৃপিণ্ডের মাংসপেশি তখন Pump করতে পারে না। ফলে শ্বাসকষ্ট হয়ে মৃত্যুও হতে পারে। সুতরাং Acute Myocardial Infarction হওয়ার আগে এনজিওগ্রাম করাটা বাঞ্ছনীয়। হৃদরোগ নির্ণয়ের জন্য ECG, Echo Cardiogram, ETT, 24 Hours Holter Monitor, Stress Echo-Cardiography, Thallium Scan অন্যতম। তবে আধুনিকতম চিকিৎসা পদ্ধতি হলে Coronary Angiogram, Echo-Cardiography, ETT, Stress Echo-Cardiogram করে করনারি আর্টারি ডিজিস নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে করনারি এনজিওগ্রাম বা CAG করে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়। Echo Cardiogram করে হৃপিণ্ডের মাংসপেশির রোগ এবং হৃপিণ্ডের কপাটিকার রোগ নির্ণয় করা যায়। হৃপিণ্ডের সব রোগের জন্যই এনজিওগ্রাম করা দরকার নেই। শুধু করনারি আর্টারি ডিজিস বা schaemic Heart Disease এর জন্য এই পরীক্ষা করা যেতে পারে। এনজিওগ্রাম বুক কেটে বা বড় কোনো অপারেশন করে করা হয় না। ডান কুঁচকির একটা রক্তনালি আছে তার নাম ফেমরাল আর্টারি। লোকাল Anesthesia ব্যবহার করে Injection-এর একটি Needle দিয়ে ফেমরাল আর্টারিতে প্রবেশ করে, একটি ক্যাথেটার-এর মাধ্যমে সরাসরি হৃপিণ্ডের করনারি আর্টারি দেখা যায়। রোগী সরাসরি এনজিওগ্রাম স্বচক্ষে দেখতে পারেন।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।