সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

যত্ন নিতে হবে মানসিক স্বাস্থ্যের

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আজিজুল ইসলাম

যত্ন নিতে হবে মানসিক স্বাস্থ্যের

১। সুস্থতা ও স্বাস্থ্যের একটি মূল উপাদান মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতা। অজ্ঞতা, কুসংস্কার, বৈষম্যতা, বৈজ্ঞানিক চিন্তার অপ্রতুলতার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য ইস্যুটি সবসময় থেকেছে উপেক্ষিত, অবহেলিত। ফলে অনেক সময় মনোরোগে আক্রান্ত আপনজন (স্বামী-স্ত্রী-সন্তান-পিতা-মাতা) আমরা করে রাখি শৃঙ্খলিত, আটকিয়ে বা বন্দী করে রাখি গৃহকোণে। অগ্রগতির, উন্নতির ডিজিটাল বাংলাদেশেও আমরা থেকে যাই অন্ধকারে, পশ্চাতে; বঞ্চিত হই-বঞ্চিত রাখি আধুনিক-বৈজ্ঞানিক চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে যা অত্যন্ত পরিতাপের। অথচ দেশের ১-৬ অংশ (১৬.০১%) মানুষ কোনো না কোনো প্রকার মানসিক রোগে ভুগছে। মানসিক রোগের ব্যাপ্তি ব্যাপক- ছোট্ট শিশু থেকে মৃত্যু দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ সবাই জীবনের যে কোনো পর্যায়ে মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। অর্থাৎ কোনো বয়স, কোনো লিঙ্গ, কোনো গোত্র, সমাজ এর থেকে পরিত্রাণ পাবেন এমন নয়। ২। আমরা অনেকেই শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রাথমিক চিকিত্সা (first aid) জানি, প্রয়োজনে জীবন রক্ষাকারী হিসেবে সাহায্য করতে পারি। কিন্তু অত্যন্ত আক্ষেপের সঙ্গে বলতে হয় মানুষের কঠিন দুঃসময়-মানসিক বিপর্যয়-আবেগগত মূঢ়তা-অতি দুঃখ-ব্যক্তি জীবনের চরম মানসিক চাপ, এমনকি আত্মহত্যা প্রবণতাসম্পন্ন ব্যক্তির পাশে যে সাহায্যের হাত নিয়ে দাঁড়ানো যায়, তাকে ও যে সহায়তা, নির্ভরতা আর সেবা দিয়ে রক্ষা করা যায় তা আমাদের জানা নেই।  ৩। পৃথিবীজুড়ে নৃশংসতা, হত্যা-খুন, রাহাজানি, অস্থিরতা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অপরাধ, নারী নির্যাতন এমনকি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও আক্রান্ত মানুষকে প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, সহায়তা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে এবারের বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০১৬ এর  প্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘মানসিক স্বাস্থ্যে মর্যাদাবোধ-সবার জন্য প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা’ (Dignity in Mental Health- Psychological and Mental Health First Aid for All). ৪। এই প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা (Primary Health Care) তথা সব মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন পেশাজীবী-অপেশাজীবীসহ সব স্তরের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা, মানসিক স্বাস্থ্যের মৌলিক বিষয়গুলো অনুধাবন করা এবং অন্যের প্রতি দরদ-মমত্ববোধকে জাগ্রত করা। সময় এসেছে কুসংস্কার, অজ্ঞতা, অপচিকিত্সা আর বৈষম্যতার  বেড়াজাল ছিঁড়ে সঠিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও গ্রহণের। আর তাতেই সম্ভব একটি সুস্থ, সুন্দর পরিবার, সমাজ ও দেশ গঠন।  

লেখক : অধ্যাপক ও উপদেষ্টা, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল

কলেজ ও সিএমএইচ, ঢাকা

সর্বশেষ খবর