হার্টকে মানবদেহের ইঞ্জিন ও ব্রেইনকে দেহের ড্রাইভার বলা যেতে পারে। হার্ট এমন একটা ইঞ্জিন যাকে উড়োজাহাজের ইঞ্জিনের সঙ্গে তুলনা করা যুক্তিসঙ্গত হবে। কারণ উড়োজাহাজ চলার সময় কোনোভাবেই তার ইঞ্জিন বন্ধ করা যাবে না, কারণ উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ হলে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, তাই একটি উড়োজাহাজে মানুষ দুই অথবা আরও বেশি সংখ্যক ইঞ্জিন সেট করে যাতে একটি ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিলে অন্যটি চালু করা যায় এবং চলন্ত উড়োজাহাজ ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি প্রাণীর দেহে মাত্র একটি করে ইঞ্জিন সেট করে দিয়েছেন এবং এর ক্ষমতা বলেই প্রতিটি প্রাণী তার আয়ুষ্কাল খুব ভালোভাবে অতিক্রম করে থাকে। ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে যেমন একটি গাড়ি চলতে পারে না এবং তার এসি, লাইট, সিগনাল লাইট, ব্যাটারি সবকিছুই অকার্যকর হয়ে পড়ে, তেমনি দেহ ইঞ্জিন না চললে প্রতিটি প্রাণীর দেহ অসার হয়ে অবধারিত মৃত্যু মুখে পতিত হয়। এ তো হলো ইঞ্জিন পুরোপুরি অকেজো হয়ে যাওয়ার কথা। তা ছাড়াও বহুবিধ কারণে হার্ট দুর্বল হয়ে যেতে পারে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো— উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, হার্টে ব্লক, বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ, হরমোনজনিত হৃদরোগ এবং রক্তশূন্যতা। হার্ট দুর্বল হলেই প্রাথমিক পর্যায়ে বিশেষ কিছু মুহূর্ত ছাড়া হার্ট তার দায়িত্ব ঠিকমতোই পালন করতে পারে। এর দুর্বলতা বৃদ্ধি পেতে পেতে একটা পর্যায়ে পৌঁছে গেলে ব্যক্তির শরীরে হার্টের দুর্বলতার লক্ষণসমূহ পরিলক্ষিত হতে থাকে। যে কোনো কারণে দেহ ইঞ্জিন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে দুর্বল হয়ে পড়লে দেহে নানাবিধ উপসর্গ পরিলক্ষিত হতে থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো ব্যক্তি নিজে দুর্বল হয়ে পড়ে। চলার গতি কমে যায়, কাজকর্ম করার দক্ষতা কমে যায়। দেহ দুর্বল হওয়ার কারণে শারীরিক শক্তি বা মুরদ কমে যায় এবং মনের বল বা সাহস কমে যায়। অল্প কাজে ব্যক্তি অনেক বেশি পরিশ্রান্ত বা পেরেশান হয়ে পড়েন। খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়, অরুচি দেখা দেয়, হজম প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে, মাংসপেশি দুর্বল হওয়ায় শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। ফলে ব্যক্তির দেহ অলস হয়ে পড়ে, শারীরিক দুর্বলতার সঙ্গে সঙ্গে যৌন কার্যকলাপের শক্তিও কমে যায় এবং দুুর্বলতা দেখা দেয়। হার্ট বেশি দুুর্বল হয়ে গেলে রোগীর চলাফেরা ও হাঁটাহাঁটি করার ক্ষমতা কমে যায়। জোর করে হাঁটাহাঁটি করতে গেলে শরীর ঘেঁমে যায়, মাথা ঘুরাতে পারে, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যেতে পারে, মানুষ স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী হয়ে পড়ে। সৃষ্টিকর্তা দেহ ইঞ্জিন বন্ধ না করে চালু অবস্থায়ই মেরামতের সুযোগ রেখেছেন। আপনার ইঞ্জিনকে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ রাখা সম্ভব। যার জন্য চাই সঠিক ধারায় জীবনযাপন এবং হৃদবান্ধব খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা ও ছোটখাটো ত্রুটি সারিয়ে তোলার জন্য চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি আপনার ইঞ্জিন মেরামত করে নিতে পারেন। এসব কিছুর মাধ্যমে আপনি আপনার দেহ ইঞ্জিনকে সুস্থ রেখে আপনার দেহকে শক্তিশালী করে উত্ফুল্লভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। মনে রাখবেন আপনার দেহ ইঞ্জিন শক্তিশালী তো আপনি শক্তিশালী। তাই হার্ট নিয়ে আমাদের সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।
ডা. এম. শমশের আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।