শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

লো প্রেসার = হার্ট অ্যাটাক!

ডা. এম. শমসের আলী

লো প্রেসার = হার্ট অ্যাটাক!

ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপের ফলে মানবদেহে রক্ত সঞ্চালিত হয়। অর্থাৎ রক্ত সঞ্চালনে রক্তচাপকে চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পানির পাইপে পানি প্রবাহের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে হয়। তা না হলে পানি প্রবাহিত হবে না। মানবদেহে রক্তচাপের একটি স্বাভাবিক মাত্রা আছে। তার ওপর ভিত্তি করেই উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেসার) ও কম রক্তচাপ (লো ব্লাড প্রেসার) পরিমাপ করা হয়। রক্তচাপ একটি সুনির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে থাকে। রেঞ্জের উপরের মাপকে সিস্টলিক রক্তচাপ ও নিম্নের মাপকে ডায়োস্টলিক রক্তচাপ বলা হয়। এ মতে মানবদেহে স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো ১৩০/৮০ মি.মি. থেকে ৯০/৬০ মি.মি. মানে সিস্টলিক ১৩০ থেকে ৯০ এর মাঝে এবং ডায়োস্টলিক ৮০ থেকে ৬০ এর মাঝে। যদি কারও এর চেয়ে বেশি মাত্রার রক্তচাপ থাকে তবে এই অবস্থাকে উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেসার) বলা হয় এবং যদি কারও এর চেয়ে কম রক্তচাপ থাকে, তবে এই অবস্থাকে কম রক্তচাপ (লো ব্লাড প্রেসার) বলা হয়ে থাকে। তবে ব্যক্তি ভেদে এই পরিমাপ কম-বেশি হতে পারে। সাধারণভাবে বলা যায়, পরিমাপের সঙ্গে শারীরিক উপসর্গ বিদ্যমান থাকলে সেই পরিমাপকে ওই ব্যক্তির জন্য লো প্রেসার হিসেবে গণ্য করা হয়। লো প্রেসারের শারীরিক উপসর্গগুলো হলো— মাথা ঘোরা বা মাথা খুব হালকা অনুভূত হওয়া, মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, চোখে অন্ধকার দেখা বা সরষেফুলের মতো দেখা, চোখে ঝাপসা দেখা, তার সঙ্গে বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি করা, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়ে যাওয়া, খুব বেশি দুর্বলতা অনুভূত হওয়া, মানসিক অবসাদগ্রস্ত হওয়া, কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা, বেশি তৃষ্ণা অনুভূত হওয়া।

কি কারণে লো প্রেসার হয়ে থাকে—

১. দীর্ঘ সময় বিছানায় শুয়ে থাকলে : হাসপাতালে ভর্তি থাকা বা অন্য কোনো শারীরিক অসুখের জন্য বেশ কয়েক দিন ধরে বিছানায় শুয়ে কাটালে।

২. গর্ভাবস্থায় : গর্ভবতী মায়েদের গর্ভের প্রথম ছয় মাস হরমোনের প্রভাবে লো প্রেসার হতে পারে।

৩. শরীরে প্রবহমান রক্তের পরিমাণ কমে গেলে। যেমন— গরমকালে খুব বেশি ঘাম হলে, দেহের ভিতরে কোনো কারণে রক্তক্ষরণ হলে, শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হলে, আঘাতের ফলে বা দুর্ঘটনার ফলে রক্তপাত ঘটলে। ৪. ওষুধ গ্রহণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে লো প্রেসার হতে পারে। যেমন— উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ, হার্টের ওষুধ, শরীর থেকে পানি বের করার ওষুধ ডাই ইউরেটিক্স (Diuretics), পারকিনসনিজম রোগের ওষুধ, কিছু কিছু অবসাদগ্রস্ততার ওষুধ, যৌন অক্ষমতা দূর করার ওষুধ ভায়াগ্রা (Viagra) এবং অধিক মদ্যপান ইত্যাদি।

৫. হৃদরোগ : নাড়ির গতি কম হওয়া, হার্ট ফেইলুর রোগে আক্রান্ত হওয়া, হার্ট অ্যাটাক হওয়া এবং হার্ট ভাল্বের সমস্যা। ৬. হরমোনজনিত সমস্যা : থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতা, এভরিনাল হরমোন স্বল্পতা, প্যারা থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা এবং ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগার কমে যাওয়া ইত্যাদি।

৭. অ্যালারজিক কারণ : ওষুধ, খাদ্যদ্রব্য এবং সংক্রমণজনিত কারণে অ্যালারজিক রিঅ্যাকশন হলে।

৮। স্নায়ুবিক কারণে : বসা থেকে উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘোরা, অন্ধকার দেখা, বমির ভাব হওয়া।

লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি)

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর