বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছেলেমেয়েরা অধিক পরিমাণে রেস্টুরেন্টে যাচ্ছে, সঙ্গে বয়স্করাও, যা বর্তমান সময়ে সামাজিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে বিবেচিত। এ ছাড়া আড্ডা দেওয়ার প্রধান জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো। বেশিরভাগ হোটেল বা রেস্টুরেন্টের খাবার প্রায় ক্ষেত্রেই অস্বাস্থ্যকর, কারণ এসব খাদ্যদ্রব্যে বেশি পরিমাণে লবণ ও চিনি এবং ক্ষতিকর চর্বি ব্যবহার করা হয়। এটা জানা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে অনেকেই খাচ্ছেন। জুস ও বিভিন্ন পানীয় অনেক বেশি চিনিযুক্ত হওয়ায় ক্ষতিকরও বটে। অনেকে আবার এটাকে স্মার্টনেসের অংশ মনে করেন। এখনকার মানুষের আয়-রোজগার বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা বাইরের এসব খাবারের পেছনে অর্থ ব্যয়ে দ্বিধা করছেন না। স্বাস্থ্যের লাভ-ক্ষতির কথা না ভেবেই এসব খাদ্যবস্তু গ্রহণ করছেন এবং এটাই সামাজিক আচার হিসেবে লালন করা হচ্ছে। ফলে দ্রুত শারীরিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার এটি একটি প্রধান কারণ। এটি কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা নয় বরং একে সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। অধিক খাদ্যগ্রহণ, তৈলাক্ত খাদ্যগ্রহণ, ক্ষতিকর রং ও সুগন্ধি মিশ্রিত খাবার, আমাদের হোটেল-রেস্টুরেন্টে প্রচলিত এবং জনপ্রিয় খাবারের মেন্যু। এসব খাবারে অধিক তেলচর্বি ও লবণ থাকায় দেহের ওজন বৃদ্ধি, রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল ও সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি, কর্মে অলসতা বৃদ্ধি পায়। সর্বোপরি এসব খাদ্যবস্তু গ্রহণকারী ব্যক্তিরা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, আর্থ্রাইটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অন্য ব্যক্তিদের চেয়ে অল্প বয়সে মৃত্যু ঝুঁকিতে পরতে পারেন। মোটা হওয়ার কারণে শরীরের রোগবালাই বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক গঠনেরও পরিবর্তন আসে, যা সৌন্দর্যহানি করে। বাইরের খাবার একবারেই খাওয়া যাবে না তা নয়, কিন্তু সব জেনে-বুঝে খেতে হবে। অতিরিক্ত সবকিছুই ক্ষতিকর। এ বিষয় আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এটা কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, যেহেতু এটা সামাজিক সমস্যা তাই সামাজিকভাবে এ সমস্যা মোকাবিলা করাই উত্তম পন্থা। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের অনেক মাধ্যম রয়েছে। তার মধ্যে ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপি, ভাইবার, ইমো, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদিতে ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হলে এসব যোগাযোগের মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করতে হবে এবং সামাজিক মূল্যবোধ বাড়াতে হবে। অযথা অপব্যয় করে নিজেদের ক্ষতি না করে সেটিকে ভালো কিছুতে ব্যয় করার পথ করলে নিজেদেরই ভালো সঙ্গে সমাজেরও।
এত গেল প্রকৃত শারীরিক ওজন বৃদ্ধির কথা। এ ছাড়াও মানুষ অল্প সময়ের ব্যবধানে, দ্রুত মোটাসোট হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের ওজন বৃদ্ধি শরীরে অতিরিক্ত পানি জমা হওয়ার ফলে ঘটে থাকে। বয়স্কদের বেলায় ওজন বৃদ্ধির মূল কারণ হার্ট ফেইলুর। তা ছাড়াও লিভার এবং কিডনি ফেইলুর থেকেও শরীরে পানি জমা হতে পারে। বয়স্কদের অল্প সময়ে ওজন বৃদ্ধি ৮০% ক্ষেত্রে হার্ট ফেইলুরকেই দায়ী করা হয়। রোগীর হাত, পা, মুখ ফোলা ফোলা হওয়া, পেট বড় হয়ে যাওয়া, শারীরিক কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া, ক্ষুধামান্দা দেখা দেওয়া, পেট ভরা ভরা অনুভূতি থাকা, বুক ধড়ফড়সহ শ্বাসকষ্ট হওয়া, শরীরের চামড়া/ত্বক খসখসে হওয়া, প্রসাবের পরিমাণ কমে যাওয়াসহ আরও নানাবিধ উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
আপনি যদি যেকোনো ধরনের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে এই রোগের প্রভাবে হৃপিণ্ডের কার্যক্রম ব্যাহত হতে থাকবে। এভাবেই চলতে থাকলে অসুস্থতার কারণে দিনে দিনে হৃপিণ্ডের দুর্বলতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে, যাকে হার্ট ফেইলুর বলা হয়। যখন হৃদরোগের অবস্থা হার্ট ফেইলুরের পর্যায়ে পৌঁছবে, তখন সব হৃদরোগের চিকিৎসা একই হবে। মানে তখন শুধু হার্ট ফেইলুরের চিকিৎসাই সর্বক্ষেত্রে রোগীর জন্য প্রযোজ্য। হার্ট ফেইলুরকে সব ধরনের হৃদরোগের চরম পরিণতি হিসেবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মনে করা হলেও বেশকিছু ক্ষেত্রে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচনায় আসতে হয়। হার্ট ফেইলুর একটি মারাত্মক পরিস্থিতি এবং সুচিকিৎসা গ্রহণ না করলে চরম মূল্য দিতে হয়। সুতরাং হার্ট ফেইলুর সম্পর্কে সতর্ক হউন।ডা. এম. শমশের আলী, সি. কনসালট্যান্ট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ঢাকা। ফোন : ০১৯৭১৫৬৫৭৬১